গায়ে ঘা হলেই কুকুরকে “Neomec” ট্যাবলেট খাইয়ে দেয়া যাবে?

Published on: September 21, 2021

সম্প্রতি ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ এবং পেজে একটি অসুস্থ কুকুর এবং Neomec নামক একটি ট্যাবলেটের ছবি প্রচুর শেয়ার হয়েছে। বলা হচ্ছে, গায়ে ঘা যুক্ত কুকুরকে ১০ টাকা মূল্যের “NEOMEC” নামের একটি ঔষধ ফার্মেসি থেকে কিনে মিষ্টি কিংবা রুটি অথবা যে কোন খাবারের সাথে মিশিয়ে খাইয়ে দিলে কুকুর কয়েক দিনেই সুস্থ হয়ে যাবে। NEOMEC হচ্ছে আইভারমেকটিন-জাতীয় ঔষধ যেটি পশুর অন্ত্রের কৃমি এবং চামড়ার উপরিভাগের পরজীবী নির্মূলে কার্যকর। কিন্তু ঔষধ প্রয়োগযোগ্য বয়স, সঠিক ডোজ, সম্ভাব্য পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সহ অন্যান্য সতর্কতা না মেনে বা পশু-চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ঔষধের প্রয়োগে মারাত্মক পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এই প্রচারণাটিকে বিভ্রান্তিকর সাব্যস্ত করেছে।

সম্প্রতি ফেসবুকে শেয়ার হওয়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।

সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবিটির ক্যাপশনটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হল:

“আমাদের আশেপাশে এমন গায়ে ঘা-ওয়ালা কুকুর প্রায়ই দেখা যায়৷ মাত্র ১০ টাকার একটি ঔষধের অভাবে অবলা প্রাণীগুলো একসময় ধুঁকে ধুঁকে মারা যায়। কাউকে বলার ক্ষমতাও তার নেই।
‘NEOMEC’ কিংবা এই সিরিজের যে কোন একটি ঔষধ ফার্মেসি থেকে কিনে মিষ্টি কিংবা রুটি অথবা যে কোন খাবারের সাথে মিশিয়ে খাইয়ে দিন। দেখবেন কয়েক দিনেই সুস্থ হয়ে যাবে।
(ঔষধের গায়েই সব তথ্য পাবেন) (একটি সিগারেটের পেছনে দশ টাকা না নষ্ট করে চলুন একটি প্রাণীকে সুস্থ করে তুলি)”

শিরোনাম ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা যায়, একই লেখাযুক্ত ছবিটি ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সালেও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিল।



“NEOMEC” ট্যাবলেটটি মূলত ভারতীয় ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান Intas Pharmaceuticals এর একটি পণ্য যাতে রয়েছে 10 mg Ivermectin. পরজীবী সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর এই আইভারমেকটিন আবিষ্কারের জন্য ২০১৫ সালে মেডিসিনে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন উইলিয়াম সি. ক্যাম্পবেল এবং সাতোশি ওমুরা।

“NEOMEC” ট্যাবলেটটি পশুর অন্ত্রের কৃমি (কিন্তু ট্যাপওয়ার্ম নয়), অধিকাংশ মাইট এবং কিছু উকুন সহ  পরজীবী সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। যদিও এই ঔষধ ব্যবহারের কিছু নির্দিষ্ট ব্যবহারবিধি রয়েছে যা উল্লেখ করা হয়নি উক্ত পোস্টগুলোতে।

ভুল পরিমাণে এই ঔষধ প্রয়োগে কুকুরের মধ্যে কিছু মারাত্মক পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে, যেমন:

বমি, পেশী কম্পন, অন্ধত্ব, দূর্বলতা, অলসতা, ক্ষুধামন্দা, পানিশূন্যতা ইত্যাদি। এছাড়া কিছু প্রজাতির কুকুরের (যাদের MDR1 জিন মিউটেশন আছে) ক্ষেত্রে এই ঔষধ প্রয়োগ করলে বিপজ্জনক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে  যা মস্তিষ্ক, স্নায়ুতন্ত্র এবং লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ৩ মাসের কম বয়সী কুকুরছানা এবং বিড়ালছানার ক্ষেত্রে এই ঔষধ এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

ভাইরাল পোস্টগুলোর ক্যাপশনে “NEOMEC” ঔষধটির প্রয়োগযোগ্য বয়স, সঠিক ডোজ, সম্ভাব্য পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখ করার বদলে বলা হয়েছে (“ঔষধের গায়েই সব তথ্য পাবেন”)। কোনো প্রাণীর রোগনির্ণয় না করে এবং অভিজ্ঞ পশু চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এমন ঔষধের প্রচার জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে পারে বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ বিষয়টিকে বিভ্রান্তিকর সাব্যস্ত করেছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

 

Leave a Reply