“আযান নিয়ে নেইমারের খুব সুন্দর বক্তব্য” -শিরোনামে ভাইরাল ভিডিওটি বিভ্রান্তিকর

Published on: [July 20,2021]

১৯ জুলাই ২০২১ তারিখ থেকে “আযান নিয়ে নেইমারের খুব সুন্দর বক্তব্য ❤❤”- এমন শিরোনামে সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হতে দেখা যায়। ১ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে দাবি করা হচ্ছে, নেইমার একবার প্রেস কনফারেন্সের সময় আযান শুনতে পেয়ে কথা থামিয়ে চুপ করে মন দিয়ে শুনেছিলেন। সাংবাদিকদের তখন তিনি বলেছিলেন, মুসলমানদের আযান তার অনেক ভালো লাগে এমনকি তার ধর্মে এমন কোনো কিছু নেই বলে আফসোস প্রকাশও করেছেন।

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওতে উল্লেখিত প্রেস কনফারেন্সের ছবিটি সিংগাপুরের, ২০১৯ সালের ৯ অক্টোবরের। আর ভিডিওতে বর্ণিত ঘটনাটিতে উল্লেখিত মসজিদের অবস্থান ব্রাজিলের সাও-পাওলোতে। অর্থাৎ, ছবি এবং বর্ণিত ঘটনা অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এছাড়াও আন্তর্জাতিক নির্ভরযোগ্য কোনো গণমাধ্যম কিংবা নেইমারের ব্যক্তিগত সামাজিক মাধ্যম থেকেও এমন কোনো ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায় না। এই কয়টি অসংগতি বিবেচনায় নিয়ে এই ধরনের একটি ভিডিওকে “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

বিভ্রান্তির উৎস 

১৯ জুলাই ২০২১ তারিখে “Md Moynul Islam” নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে “আযান নিয়ে নেইমারের খুব সুন্দর বক্তব্য ❤❤”- এমন শিরোনামে একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়। ভিডিওটি ১৩ লক্ষেরও বেশিবার দেখা হয়েছে এবং ১১ হাজারেরও বেশিবার শেয়ার হয়েছে। পরবর্তীতে “Mohammad Robel Mia”, ” Football Sports” নামক এমন আরোও কয়েকটি ফেসবুক পেজের বরাত দিয়ে ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এই ভিডিওটি দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।

ভিডিওর বিষয়বস্তু

১ মিনিটি ৩৪ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি তৈরি করা হয় নেইমার, ওযিলসহ বিভিন্ন মসজিদের স্থিরচিত্র ব্যবহার করে। ভিডিওতে বলা হয় ব্রাজিলের কোনো এক শহরে “মসজিদ এ হামজা” নামের একটি মসজিদের পাশে ব্রাজিলিয়ান ফুটবল তারকা নেইমারের একটি প্রেস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হচ্ছিলো। কনফারেন্সের একসময় মসজিদে আযান দেওয়া হলে নেইমার কথা বলা বন্ধ করে দেন এবং শেষ না হওয়া পর্যন্ত চুপ করে ছিলেন। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করতে চাইলে তাকে ইশারায় চুপ থাকতে বলেন নেইমার। পরবর্তীতে সাংবাদিকেরা এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে নেইমার বলেন, “আমি মুসলমানদের মসজিদের আযান খুব মন দিয়ে শুনি, আমার কাছে দারুন এক প্রশান্তি অনুভূত হয়, আমাদের ধর্মে তো এমন কিছু দেখিনা, কেমন ধর্ম পালন করি আমরা?”

ভিডিওতে আরোও দাবি করা হয় নেইমার একবার জার্মান ফুটবল তারকা মেসুত ওজিলের কাছে আযানের অর্থ জানতে চেয়েছিলেন কিন্তু ওযিল ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার কারণে পরবর্তীতে জানা হয়ে উঠে নি। নেইমার যেনো ভবিষ্যতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেই ভিডিওটি সমাপ্ত হয়।


মানুষের
বিভ্রান্তির কিছু নমুনা


অনুসন্ধান

ভিডিওতে উল্লেখিত বিভিন্ন তথ্য অনুসন্ধানে কিছু অসংগতি লক্ষ্যণীয়। ভিডিওটিতে যে দাবিগুলো করা হয় তার বিপরীতে কোনো ধরনের তথ্যসূত্র ব্যবহার করা হয়নি তাই ভিডিওটিতে উল্লেখিত প্রেস কনফারেন্সটির তারিখ এবং বিষয় নিয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।

ভিডিওতে নেইমারের প্রেস কনফারেন্সে বক্তব্যরত অবস্থার কয়েকটি ছবি ব্যবহার করা হয়। যার প্রথমটি ছিলো নেইমারের ব্রাজিলের হয়ে ১০০ তম ম্যাচ সম্পর্কে। এই প্রেস কনফারেন্সটি ২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর সিংগাপুরে অনুষ্ঠিত হয়। সেনেগালের বিপরীতে ব্রাজিলের একটি খেলার আগে নেইমার বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। পিএসজিতে তার তৎকালীন অবস্থান এবং জাতীয় দলেও বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোকপাত করেন। কিন্তু সেখানে কোথাও নেইমারকে ইসলাম কিংবা আযান নিয়ে কথা বলতে দেখা যায়নি।

উক্ত প্রেস কনফারেন্স নিয়ে “chinadaily.com.cn” এর একটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে।

এছাড়াও, এখন পর্যন্ত নেইমার যতগুলো প্রেস কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেছেন তার কোথাও ভিডিওতে উল্লেখিত বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে দেখা যায় নি।

আবার, ভিডিওতে উল্লেখিত “মসজিদ এ হামজা”- নামের যে মসজিদের কথা বলা হয় সেটি ব্রাজিলের সাও পাওলোতে অবস্থিত। মসজিদটির নাম “Mesquita Hz. Hamza”। সাও পাওলোর কোথাও নেইমারের এমন প্রেস কনফারেন্সের ঘটনার প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, একদিকে দেখানো হচ্ছে সিংগাপুরের একটি প্রেস কনফারেন্সের ছবি এবং ঘটনা বর্ণনা করা হচ্ছে সাও-পাওলোর একটি মসজিদের।

অন্যদিকে, ভিডিওতে দাবি করা হয় নেইমার আযানের অর্থ জানার জন্য জার্মান ফুটবল তারকা মেসুত ওজিলকে জিজ্ঞাসা করেন কিন্তু ওজিল ব্যস্ততার তা জানাতে পারেন নি। এমন একটি তথ্যেরও কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। আন্তর্জাতিক নির্ভরযোগ্য কোনো গণমাধ্যম কিংবা ওজিল বা নেইমারের কোনো সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট থেকেও এমন কোনো ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

সিদ্ধান্ত

ভিডিওটিতে উল্লেখিত তথ্যের সাথে ব্যবহৃত ছবিগুলো অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এমনকি উল্লেখিত কোনো তথ্যের সত্যতাও খুঁজে পাওয়া যায় নি। বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন ছবি ব্যবহার করে সম্পূর্ণই মনগড়া তথ্যের ভিত্তিতে ভিডিওটি তৈরি করা হয়। এমন অসংগতিপূর্ণ একটু ভিডিও স্বাভাবিকভাবেই তৈরি করছে বিভ্রান্তির।  তাই সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভিডিওটিকে “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে চিহ্নিত করছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

 

 

 

Leave a Reply