মোহাম্মদ আরাফাত
Published on: August 25, 2024
বাংলাদেশের চলমান বন্যার দৃশ্য দাবি করে অনেক ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। তবে, এগুলোর মাঝে অধিকাংশ ভিডিওই পুরানো কিংবা ভিন্ন স্থানের এবং বাংলাদেশের সাথে প্রাসঙ্গিক নয়। ভিডিওগুলোর উৎস যাচাই করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে ফ্যাক্টওয়াচ। তাই এই রকম ভিডিওগুলোর দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” সাব্যস্ত করে বর্তমান প্রতিবেদনটি তৈরি করা হল। |
দাবি: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করছে দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।
সঠিক তথ্য: আলোচিত ভিডিওটি বর্তমান বন্যা পরিস্থিতির অনেক আগে থেকেই ইন্টারনেটে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই ভিডিও এর সাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্ধার কাজের কোন সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ, ভিডিওটি পুরানো।
দাবি: বন্যায় ফেনী জেলার ভয়াবহতার দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও শেয়ার করা হচ্ছে।
সঠিক তথ্য: ভিডিওটিতে দৃশ্যমান জায়গাটি পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের সোয়াত ভ্যালিতে অবস্থিত মাদিয়ান ব্রিজ। এর আগে একই ভিডিওকে নেপালের বন্যার ভিডিও বলে প্রচার করা হয়েছিল।
দাবি: ভারতের ত্রিপুরায় অবস্থিত ডম্বুর বাঁধের গেট খুলে দেওয়ার দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।
সঠিক তথ্য: আলোচিত ভিডিওতে দৃশ্যমান বাঁধটি ভারতের ঝাড়খন্ডে অবস্থিত পাঞ্চেত বাঁধ। ভিডিওটিও সাত বছরের পুরানো।
দাবি: ডম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ায় হড়কা বানে ফেনীতে কৃষকের ক্ষেত ভেসে যাচ্ছে দাবিতে একটি ভিডিও শেয়ার করা হচ্ছে।
সঠিক তথ্য: আলোচিত ভিডিওটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাম্প্রতিক বন্যার সময়কার। ফেনী এবং ত্রিপুরার বন্যার সংযোগ থাকলেও হড়কা বানে ক্ষেত ভেসে যাওয়ার ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়৷
দাবি: ডম্বুর বাঁধের গেট খুলে দেওয়ায় ফেনীতে নদীর পানি লোহার ব্রিজের নিচ দিয়ে বিপদ সীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।
সঠিক তথ্য: গত ০৮ আগস্ট ২০২৪ এ ইউটিউবে প্রকাশিত একটি ভিডিও’র সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল পাওয়া গেছে। অর্থাৎ, ভিডিওটির সাথে সাম্প্রতিক বন্যার কোন সম্পর্ক নেই। ভিডিওটিতে দৃশ্যমান লোহার ব্রিজটি পাকিস্তানে অবস্থিত বলে নিশ্চিত করেছে তথ্য-যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার।
দাবি: পায়ের নিচে একটু মাটির খোঁজে পানিতে দাঁড়িয়ে আছে বন্যার্তরা দাবিতে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
সঠিক তথ্য: ভিডিওটির উৎস যাচাই করে দেখা গেছে এটি পাকিস্তানের করাচিতে অবস্থিত কালরি লেকের ভিডিও।
দাবি: ফেনী জেলার বন্যা পরিস্থিতির দৃশ্য দাবিতে সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ার একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।
সঠিক তথ্য: আলোচিত ভিডিওটি গত জুলাই মাসে চীনের লিনি শহরে প্রবল বৃষ্টিপাতের ভিডিও।
দাবি: বন্যার পানিতে গবাদি পশু ভেসে যাচ্ছে দাবিতে একাধিক ভিডিও (১ ২ ৩) প্রচার করা হচ্ছে।
সঠিক তথ্য: ভিডিওগুলোর উৎস (১ ২ ৩) যাচাই করে দেখা গেছে সেগুলো ভিন্ন সময় এবং স্থানের ভিডিও। ভিডিওগুলোর সাথে সাম্প্রতিক বন্যার কোন সম্পর্ক নেই। এদের মাঝে একটি ভিডিও মেক্সিকোর বলে নিশ্চিত করেছে ফ্যাক্টওয়াচ।
দাবি: বন্যার পানি থেকে বাঁচতে নারকেল গাছে আশ্রয় নেওয়ার দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।
সঠিক তথ্য: আলোচিত ভিডিওটির অনুরূপ প্রায় দুই বছরের পুরানো একটি ভিডিও’র সন্ধান পাওয়া গেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বাংলাদেশে বন্যা কিংবা অন্য কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হলেই ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে সরব হয়ে উঠে।
দাবি: একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে এটি টাইটানিক সিনেমার কোন দৃশ্য নয়। বরং, এটি ফেনীর বন্যার দৃশ্য!
সঠিক তথ্য: আলোচিত ভিডিওটি কমপক্ষে চার মাস আগে থেকেই ইন্টারনেটে পাওয়া যাচ্ছে।
দাবি: চলমান বন্যার দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও শেয়ার করা হচ্ছে।
সঠিক তথ্য: আলোচিত ভিডিওটি কমপক্ষে দুই মাস আগে থেকেই ইন্টারনেটে রয়েছে। ভিডিওটি ঠিক কখন এবং কোথায় ধারণ করা হয়েছিল সেটা জানা সম্ভব হয়নি। আমরা ধারণা করছি এটি বাংলাদেশেরই কোন একটি জেলার বন্যার দৃশ্য। সাম্প্রতিক বন্যার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। তবে, চলমান বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহতা এই ভিডিওতে দৃশ্যমান পরিস্থিতির চেয়ে কম নয়।
দাবি: একটি শিশুকে নিয়ে পরিবারের সদস্যকে পানিতে ভেসে থাকার ভিডিওকে সাম্প্রতিক বন্যার সময়কার বলে প্রচার করা হচ্ছে।
সঠিক তথ্য: আলোচিত ভিডিওটি গত মে মাসে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত ভোলা থেকে ধারণ করা হয়েছিল। এর সাথে সাম্প্রতিক বন্যার কোন সম্পর্ক নেই।
দাবি: সাম্প্রতিক বন্যায় স্কুল ভবন ধ্বসে পড়ার দৃশ্য বলে একটি ভিডিও শেয়ার করা হচ্ছে।
সঠিক তথ্য: আলোচিত ভিডিওটি ২০২০ সালের জুলাই মাসে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার মাদবরকান্দি গ্রামে অবস্থিত এসইএসডিপি মডেল হাই স্কুলের ভবন পদ্মার প্রবল স্রোতের তোড়ে ধ্বসে পড়ার সময় ধারণ করা হয়েছিল।
দাবি: হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধার কাজের একটি ভিডিওকে বাংলাদেশের বলে প্রচার করা হচ্ছে।
সঠিক তথ্য: আলোচিত ভিডিওটি আফগানিস্তানের খোস্ত প্রদেশে একটি বন্যার সময় একজন আফগানকে উদ্ধার করার সময় ধারণ করা হয়েছিল।
বর্তমান প্রতিবেদনটিতে সেইসব ভিডিওগুলোকে স্থান দেওয়া হয়েছে যেগুলোর সাথে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতির কোন সম্পর্ক নেই। কোনটা পুরানো ঘটনার ভিডিও। আবার কোনটা ভিন্ন স্থান হতে ধারণকৃত ভিডিও। এই সকল ভিডিওকে মানুষ সাম্প্রতিক বন্যার সাথে মিলিয়ে ফেলে বিভ্রান্ত হচ্ছেন। তাই সকলের বিভ্রান্তি কাটাতে সাম্প্রতিক বন্যা সংক্রান্ত যত পুরানো ভিডিও বা গুজব আমাদের চোখে পড়বে সেগুলোর সঠিক তথ্য এবং উৎসসহ এই প্রতিবেদনটিতে সময়ে সময়ে লিপিবদ্ধ করা হবে।
যেহেতু প্রতিটি ভিডিও’র সাথে সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতির কোন সম্পর্ক নেই এবং সেগুলো পুরানো কিংবা ভিন্ন স্থানের ভিডিও, সেহেতু ফ্যাক্টওয়াচ এইসব ভিডিওগুলোর দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ |