পদ্মা নদী সৃষ্টি: মির্জা ফখরুলের নামে ভূয়া দাবি

Published on: July 1, 2022

জিয়াউর রহমান কোদাল দিয়ে পদ্মা নদী সৃষ্টি করেছিলো বলেই আজকে সেতু বানাতে পেরেছে সরকার!– বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর বরাতে এমন একটি বক্তব্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, মির্জা ফখরুল এমন কোনো বক্তব্য দেননি।

গুজবের উৎস

গত ২১শে জুন সকাল ১১ টায় বাংলা পলিটিক্স নামক পেজ থেকে এই সংক্রান্ত একটি পোস্টার শেয়ার করা হয়। ক্যাপশনে লেখা হয়- জিয়াউর রহমান কোদাল দিয়ে পদ্মা নদী সৃষ্টি করেছিলো বলেই আজকে সেতু বানাতে পেরেছে সরকার! পোস্টারের মধ্যে পদ্মা সেতু এবং মির্জা ফখরুল এর ছবি যুক্ত রয়েছে এবং উদ্ধৃতি চিহ্নের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান ও পদ্মা সেতু সম্পর্কিত বাক্যটি মির্জা ফখরুল এর মন্তব্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এই একই পোস্টার পরবর্তীতে আরো বিভিন্ন পেজ এবং গ্রুপে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। এমন কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে ,এখানে


 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

পদ্মা নদী কত সাল থেকে অস্তিত্ত্বশীল ছিল, তার সঠিক প্রমাণ না পাওয়া গেলেও বেশ কিছু প্রাচীন সাহিত্যে পদ্মার উল্লেখ পাওয়া যায়।  প্রাচীনতম বাংলা সাহিত্যের নিদর্শন  চর্যাপদে গঙ্গা-যমুনা প্রভৃতি বৃহৎ নদীর উল্লেখ থাকলেও পদ্মার কথা নেই। এ থেকে অনুমান করা  যায়, পদ্মা তখন ছোট বা অপ্রধান নদী ছিল।  দীনেশচন্দ্র সরকার তাঁর পালপূর্ব যুগের বংশানুচরিত নামের গ্রন্থটিতে দশম শতকে “ফরিদপুর জেলার ইদিলপুরে প্রাপ্ত দশম শতাব্দীর চন্দ্রবংশীয় রাজা শ্রীচন্দ্রের শাসনে পদ্মা  নদীর” উল্লেখের কথা আমাদের জানাচ্ছেন। সুলতানী আমলে কৃত্তিবাস ওঝার রচনায় বৃহৎ পদ্মার উল্লেখ পাওয়া যায়।

মোঘল আমলে ১৫৭৪ সালে আইন-ই-আকবরীতে গঙ্গার দ্বিধাবিভক্ত হয়ে একটি ধারার পূর্বদিকে গমনের কথা বলা হয়েছে।

অনেক প্রাচীণ মানচিত্রেও পদ্মা নদীর উল্লেখ পাওয়া যায় । যেমন-১৭৮৬ সালে অংকিত এই ম্যাপটি উইকিমিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে যেখানে পদ্মা নদীকে সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা যাচ্ছে।

অর্থাৎ, এটা পরিষ্কার যে কয়েক শত বছর আগে থেকেই পদ্মা নদীর অস্তিত্ত্ব ছিল।

অন্যদিকে, জিয়াউর রহমান এর জন্ম ১৯৩৫ সালে এবং মৃত্যু ১৯৮১ সালে। অর্থাৎ তার জন্মের অনেক আগে থেকেই পদ্মা নদী বহমান ছিল।

জিয়াউর রহমান কোদাল দিয়ে পদ্মা নদী সৃষ্টি করেছিলো– মির্জা ফখরুল এর বরাতে এমন কোনো বক্তব্য সাম্প্রতিক সময়ে কোনো গণমাধ্যমেও দেখা যায়নি। এমনকি বিএনপি’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজেও এমন কোনো বক্তব্য নেই।

তাই ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল এই বক্তব্যটিকে ভুয়া কোটেশন এবং মিথ্যা তথ্য হিসেবে সনাক্ত করেছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

Leave a Reply