‘কোকাকোলা বয়কটের ডাক মালয়েশিয়ায়’ চার মাস আগের খবর

Published on: September 16, 2021

সম্প্রতি ‘বার্তা’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে “কোকাকোলা বয়কটের ডাক মালয়েশিয়ায়, বিপাকে পড়ে বিবৃতি দিল প্রতিষ্ঠানটি” শিরোনামে একটি খবর ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে। যাচাই করে দেখা যায়, সংবাদটি সাম্প্রতিক কোন ঘটনার নয়, বরং চার মাস আগের। নতুন করে এর প্রচার পাঠকের মাঝে বিভ্রান্তির জন্ম দিচ্ছে। তাই এটি ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় বিভ্রান্তিকর।

গত ৯ ও ১২ সেপ্টেম্বর ‘বার্তা’ এবং ‘BD Last Update’ ফেসবুক পেজ দুটি থেকে “কোকাকোলা বয়কটের ডাক মালয়েশিয়ায়, বিপাকে পড়ে বিবৃতি দিল প্রতিষ্ঠানটি” শীর্ষক খবরটি প্রকাশ করা হয়। এর আগেও ‘বার্তা’ থেকে ১৮ এবং ৩১ আগস্ট একই সংবাদের লিংক পোস্ট করতে দেখা যায়। দেখুন এখানে এখানে এখানে এখানে

 

 

 

 

 

 

 

তথ্যযাচাই

‘বার্তা’ পেজটি থেকে সম্প্রতি বিভিন্ন সময় উল্লেখিত খবরটির একটি লিংক পোস্ট করা হলে ফ্যাক্টওয়াচ সঙ্গত কারণেই তথ্যটি যাচাই করে দেখে। লিংকে প্রবেশ করে দেখা যায়, প্রায় চার মাস আগের একটি প্রতিবেদন। ‘bdlastupdate.com’ নামের একটি অনলাইন পোর্টাল ১৯ মে ২০২১ তারিখে খবরটি প্রকাশ করেছিল।

পরবর্তীতে, বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আমরা আরটিভি অনলাইনে একই দিনে প্রকাশিত ‘মালয়েশিয়ায় বয়কটের ডাক, বিপাকে পড়ে বিবৃতি কোকাকোলার’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি সনাক্ত করি যা হুবহু কপি করেছে ‘bdlastupdate.com’।

 

আরটিভি অনলাইনের প্রতিবেদনটি দেখুন

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মূল ঘটনা

গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর অভিযুক্ত ইসরায়েল সংশ্লিষ্টতার কারণে কোকাকোলা বয়কটের ডাক দিয়েছিল মালয়েশিয়ার ‘Persatuan Pengguna Islam Malaysia’ (পিপিআইএম) নামের একটি মুসলিম গ্রুপ। মালয়েশিয়া-ভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল ‘freemalaysiatoday.com’ থেকে ১৯ মে প্রকশিত ‘Facing boycott call, Coca-Cola Malaysia says it wants peace in the Middle East’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি পড়ুন।

২০ মে প্রকাশিত ‘freemalaysiatoday.com’ এর আরেকটি প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবি দেখুন

ছবি দুটির ক্যাপশনে বলা হয়েছে, পিপিআইএম নেতা নাদজিম জোহান গতকাল বয়কট ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে ফ্রিজ থেকে কোকাকোলার বোতল সরিয়ে নিচ্ছেন।

 

উক্ত ঘটনার ‘ইসলামের জন্য বয়কট’ ক্যাপশনে ৫ মিনিট দীর্ঘ একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিল মুসলিম সংস্থাটি। ১৮ মে ২০২১ তারিখে ‘Persatuan Pengguna Islam Malaysia (PPIM)’ ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি শেয়ার করা হয়।

দেখুন এখানে

 

এ প্রসঙ্গে কোকাকোলা প্রতিষ্ঠানটির বিবৃতি

কোকাকোলা মালয়েশিয়া এক বিবৃতিতে জানায়, ইসরায়েল এবং গাজায় চলমান সহিংসতায় তারা উদ্বিগ্ন এবং বিশ্বে যেকোনোও ধর্মীয় ইস্যুতে তাদের অবস্থান নিরপেক্ষ। তাদের সব পণ্য ‘মালয়েশিয়ানদের জন্য এবং মালয়েশিয়ানদের দ্বারা’ মালয়েশিয়ায় তৈরি হয়। তাই বয়কটের প্রথম ধাক্কাটা পড়বে স্থানীয় কর্মীদের ওপর।

“আমরা শুনেছি মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের উপস্থিতি এবং প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে না জেনে কিছু ব্যক্তি ‘মিথ্যা তথ্য’ এবং ‘গুজবের ভিত্তিতে কোকাকোলা বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছে। সেগুলো প্রকাশ করছে সামাজিক মাধ্যমে।”

“যদিও প্রত্যেকের মতো আমরাও মধ্যপ্রাচ্য এবং অন্য সব জায়গায় শান্তি দেখতে চাই।”

বিস্তারিত পড়ুন এখানে

১৮ মে প্রকাশিত বিবৃতিটি ‘Coca-cola.com.my’ ওয়েবসাইট থেকে কোন অজ্ঞাত কারণে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে গুগল ক্যাশ থেকে বিবৃতির অংশবিশেষ সনাক্ত করা যায়।

দেখুন এখানে

 

বয়কট, ইসরায়েল সংশ্লিষ্টতা এবং কোকাকোলা প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে গুজব

মূলত গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর অভিযুক্ত ইসরায়েল সংশ্লিষ্টতার কারণেই কোকাকোলা বয়কটের ডাক দিয়েছিল Persatuan Pengguna Islam Malaysia। তবে ইসরায়েল সাথে প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্টতা প্রসঙ্গটি এতোটাই জনপ্রিয় যে কোকাকোলা এটিকে তাদের ওয়েবসাইটে সচরাচর জিজ্ঞাস্য অংশে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ১০ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে “Does the Coca-Cola Company transfer profits or funds to Israel?” শিরোনামে কিছু প্রশ্ন-উত্তর অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সেখানে তারা নিশ্চিত করেছে যে, তারা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের কোন প্রান্তের কোন দেশের পক্ষপাত করে না। তারা ইসরায়েল বা বিশ্বের অন্য কোন দেশে সশস্ত্র বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য তহবিল স্থানান্তর করে না। বিস্তারিত পড়ুন এখানে

 

ফেসবুকে বিভ্রান্তির স্বীকার সাধারণ পাঠক

‘বার্তা’ এবং ‘BD Last Update’ ফেসবুক পেজ দুটি থেকে দীর্ঘ চার মাস পুরনো আলোচ্য ঘটনার খবরটি পুনরায় পোস্ট করা হলে সাধারণ পাঠক সাম্প্রতিক ঘটনা ভেবে বিভ্রান্ত হচ্ছে। তার কিছু নমুনা দেখুন

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

অর্থাৎ, সম্প্রতি ‘কোকাকোলা বয়কটের ডাক মালয়েশিয়ায়, বিপাকে পড়ে বিবৃতি দিল প্রতিষ্ঠানটি’ শিরোনামে সাম্প্রতিক কোন ঘটনার নয় বরং চার মাস পুরনো। ফেসবুকে তা নতুন করে তা ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ পাঠকের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। তাই ফ্যাক্টওয়াচ উক্ত পোস্টগুলোকে ‘বিভ্রান্তিকর’ সাব্যস্ত করেছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

 

 

Leave a Reply