পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা: ভাইরাল ছবিটি ভূয়া নাকি পুরনো?

Published on: August 15, 2021

১৩ আগস্ট ২০২১ তারিখে পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কার ঘটনার একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। ভাইরাল ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি পিলারের পাইল ক্যাপ অংশ ভেঙে নদীতে পড়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি স্টার ১৪ আগস্ট ২০২১ প্রতিবেদনে ছবিটিকে “ভূয়া ছবি” হিসেবে উল্লেখ করেছে। কিন্তু একই ছবি ২৬ জুলাই দৈনিক প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে ব্যবহৃত হয়েছিল। সে সময় পদ্মা সেতুর ১৭ নম্বর পিলারটি ফেরির ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। একই ছবি নিয়ে মূলধারার এই দুই সংবাদমাধ্যমের দুরকম অবস্থানের কারণে প্রশ্নটি থেকেই যায়, ছবিটি ভূয়া নাকি পুরনো। তবে এটি যে বিভ্রান্তিকর এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। 

১৩ আগস্ট ২০২১ তারিখে সংবাদমাধ্যম দৈনিক যুগান্তর “পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারে এবার কাকলি ফেরির ধাক্কা” শীর্ষক খবরে ক্ষতিগ্রস্ত পদ্মা সেতুর পিলারের একটি ছবি ব্যবহার করে। পরবর্তীতে ছবিটি ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ এবং ব্যক্তিগত একাউন্ট থেকে ভাইরাল হয়। “আরারও পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারে ‘কাকলি’ নামে একটি ফেরি ধাক্কা দিয়েছে…” এমন ক্যাপশনে একাধিক ফেসবুক পোস্টে একই ছবি লক্ষ করা যায়। ফেসবুকে এমন পোস্টগুলো দেখুন এখানে এখানে এখানে এখানে এখানে এখানে

ছবিটি দেখুন

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

প্রতিবেদনের আর্কাইভ ভার্সন এখানে 

 

ভাইরাল হওয়া ছবিটি ফ্যাক্টওয়াচ গুগোল রিভার্স ইমেজ সার্চে যাচাই করতে গিয়ে পুরনো একটি ছবির সাথে মিল খুঁজে পায়। সেটি হল, ২৩ জুলাই ২০২১ রো রো ফেরি ‘শাহজালাল’ এর পদ্মা সেতুর ১৭ নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয়ার ছবি। ফেরিটি মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট থেকে শিমুলিয়ায় আসার পথে এই দুর্ঘটনা ঘটায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় পদ্মা সেতুর ১৭ নম্বর পিলারের পাইল ক্যাপ। দৈনিক প্রথম আলো তাদের ২৬ জুলাই সংখ্যায় উক্ত ছবিটি ব্যবহার করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। দৈনিক প্রথম আলোর ‘ফেরি কেন ভিন্ন পথে, উত্তর জানা যায়নি’ শীর্ষক খবরটি পড়ুন এখানে

দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবি

 

অন্যদিকে, ১৪ আগস্ট ২০২১ দ্য ডেইলি স্টার একই ছবিকে ‘ভুয়া’ বা ‘এডিটেড’ সাব্যস্ত করে “পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরি ধাক্কার ‘ভুয়া ছবি’ ফেসবুকে ভাইরাল” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৩ আগস্ট সকালে ফেরি “কাকলি”র ধাক্কা লাগে পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারের সাথে। সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুল কাদের ডেইলি স্টারকে জানান, “পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কার ঘটনায় একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। এ ছবিটি আসলে ভুয়া। এ ছবি ব্যবহার করে যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে সেতু কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”

দ্য ডেইলি স্টার প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবি

 

ছবিটি কি সম্পাদিত?

এই প্রতিবেদনে দ্য ডেইলি স্টার মন্তব্য করেছে: “ফটো এডিটিং সফটওয়্যার কিংবা অ্যাপস ব্যবহার করে এডিট করে ছবিটি তৈরি করা হয়েছে বলে ধারণা করা যাচ্ছে”। ছবির উৎস সম্পর্কেও সংবাদমাধ্যমটি কোনো সূত্র দেয় নি। ছবির ক্যাপশনে লিখেছে “এডিট করা এই ছবিটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত”।

অন্য দিকে, “ফেরির ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত পদ্মা সেতুর ১৭ নম্বর পিলারের ‘পাইল ক্যাপ’ ছবি: সংগৃহীত” ক্যাপশনে একই ছবি দৈনিক প্রথম আলো ছেপেছে ১৯ দিন আগে। প্রশ্ন উঠে: ছবিটি যদি এডিটেড হয়েই থাকে, তবে সেটি প্রথম আলো কর্তৃক ব্যবহৃত হবার আগেই হয়েছে। এ বিষয়ে ডেইলি স্টারপ্রথম আলো-র মত শীর্ষস্থানীয় দুটি সংবাদমাধ্যমের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান ফ্যাক্টওয়াচ-এর নজরে এসেছে। বিশেষ করে, ডেইলি স্টার এর প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগে প্রথম আলো-র সেই প্রতিবেদনের সাথে বোঝাপড়া জরুরি ছিল বলে ফ্যাক্টওয়াচ মনে করে।

‘দৈনিক প্রথম আলো’ এবং ‘দ্য ডেইলি স্টার’ -এ ব্যবহৃত ছবি দুটি একই

 

যেহেতু কোন প্রতিবেদনেই চিত্র গ্রাহকের নাম উল্লেখ করা হয়নি এবং দু’পক্ষই ছবিটি “সংগ্রহ” করেছে, এমতাবস্থায় এই ছবি সম্পর্কে চূড়ান্ত মন্তব্য এ দুটি দায়িত্বশীল সংবাদমাধ্যমেরই করার কথা। তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ঘেঁটেও পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারে ধাক্কা লাগার কোনো ছবি ফ্যাক্টওয়াচ খুঁজে পায় নি। সবাই মূলত পুরনো ১৭ নম্বর পিলারে ধাক্কা লাগার ছবিটিকেই সাম্প্রতিক ছবি হিসেবে ব্যবহার করেছে। এতে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে এই ভাইরাল ছবিটিকে ফ্যাক্টওয়াচ “বিভ্রান্তিকর” আখ্যা দিচ্ছে।

 

সংযোজন

ফ্যাক্টওয়াচ উক্ত প্রতিবেদনটি লেখার পর দ্য ডেইলি স্টার ছাড়াও মূল ধারার অন্যান্য সংবাদমাধ্যম সেতু বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে ভাইরাল ছবিটিকে ‘ভূয়া’ বলে দাবি করছে। দেখুন এখানে এখানে এখানে। এদের মধ্যে, দৈনিক প্রথম আলো  তাদের ২৬ জুলাই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত এই ছবির বিরোধিতা করে গতকাল রাত ১০ টা ৫৬ মিনিটে “পদ্মা সেতুর পিলারে ক্ষতির ছবিটি ভুয়া: কর্তৃপক্ষ” শিরোনামে প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করে। এই বিজ্ঞপ্তিটি যে তাদের ২৬ জুলাই প্রকাশিত খবরের সাথে সাংঘর্ষিক, এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা প্রথম আলো-তে খুঁজে পাওয়া যায় নি।

তবে ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত আছে। ছবিটি প্রথমত পুরনো, এবং কোনোভাবেই পদ্মাসেতুর ১০ নম্বর পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ছবি নয় (যেহেতু এটি জুলাই মাসেই ছাপা হয়েছে)। তাই এই ছবি-সম্বলিত সংবাদ প্রচার নিশ্চিতভাবেই বিভ্রান্তিকর।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

 

Leave a Reply