এটি ফেরাউনের আসল পাসপোর্টের ছবি নয়

Published on: April 19, 2023

প্রাচীন মিশরের ফারাও/ফেরাউন (রাজা) দ্বিতীয় রামেসিস এর মমি (Mummy) পুনরুদ্ধার এবং ছত্রাকজনিত সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে ফ্রান্সে নেওয়ার প্রয়োজন হলে উক্ত মমিকে মিশর সরকার একটি পাসপোর্ট প্রদান করে। মিশরের আইন অনুযায়ী জীবিত এবং মৃত প্রত্যেকেরই পাসপোর্ট থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে ফারাও দ্বিতীয় রামেসিস-এর মমির পাসপোর্ট দাবি করে যে ছবিটি শেয়ার হচ্ছে, সেটি মমির আসল পাসপোর্ট নয়। বরং একজন শিল্পী এই কাল্পনিক পাসপোর্টটির ডিজাইন করেছিলেন এবং মমির আসল পাসপোর্টটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি। অর্থাৎ, মিশরের ফারাও এর একটি পাসপোর্ট আছে – এই দাবিটি সত্য কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে যে পাসপোর্টের ছবি শেয়ার হচ্ছে সেটা শিল্পীর ডিজাইনকৃত একটি কাল্পনিক পাসপোর্ট। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ মিশরের ফারাও এর পাসপোর্টের ছবি দাবি করে শেয়ারকৃত পোস্টগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।

সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত এমন কিছু পোস্টের নমুনা দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে

Image: Viral Facebook post

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

মিশরের ফারাও দ্বিতীয় রামেসিস এর মমিকে আদৌ পাসপোর্ট প্রদান করা হয়েছিলো কিনা তা যাচাই করতে আমরা প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে গুগল সার্চ এবং শেয়ারকৃত পাসপোর্টের ছবিটি ব্যবহার করে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। তাতে আমরা বেশকিছু প্রতিবেদন খুঁজে পাই। ইউএস টুডে, মিসবার, এবং এএফপি ফ্যাক্ট চেক এর প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা গেছে, পুনরুদ্ধার এবং ছত্রাকের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে ফেরাউন দ্বিতীয় রামেসিসএর মমি ফ্রান্সে পাঠানোর সময় উক্ত মমিটিকে একটি পাসপোর্ট প্রদান করা হয় কারণ মিশরের আইনে প্রত্যেক জীবিত এবং মৃত মিশরীয় নাগরিকের পাসপোর্ট থাকা বাধ্যতামূলক। তবে, ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিস মমি/মমির কফিনকে বস্তু (Object) হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে।

Image: Excerpt from US Today fact-checking report

 

অন্যদিকে, Heritage Daily নামক একটি ওয়েবসাইটে “The Passport of Ramesses II” শিরোনামে একটি নিবন্ধ পাওয়া গেছে। উক্ত নিবন্ধটিও ফারাওএর মমির পাসপোর্ট থাকার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। তবে, ঐ নিবন্ধটিতে ব্যবহৃত মমির পাসপোর্টের ছবিটির (যেটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়াচ্ছে) ক্রেডিট দেয়া হয়েছে Heritage Daily কে বলা হয়েছে, এই পাসপোর্টটি একজন শিল্পীর তৈরি – ছবিটি পাসপোর্টের নমুনা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে –  আসল পাসপোর্টটি সবার জন্য উন্মুক্ত নয়। ইন্ডিয়া টাইমস এর একটি নিবন্ধের শুরুতে নোট দেয়া আছে যে, দ্বিতীয় রামেসিস এর মমিকৃত মুখের ছবি সংবলিত পাসপোর্টের ছবিটি নিছক নমুনা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে এবং এটি ফারাও এর অফিসিয়াল পাসপোর্ট নয়। 

Image: Excerpt from Heritage Daily

 

তাছাড়া, Heritage Daily এর বানানো পাসপোর্টের ছবিটিতে যে মিশরের কোট অব আর্মস ব্যবহার করা হয়েছে সেটি ৪ই অক্টোবর ১৯৮৪ সালে গ্রহণ করা হয়েছিলো। অন্যদিকে, ফারাও এর পাসপোর্টের ছবিতে দেখা যাচ্ছে পাসপোর্টটির প্রদান এবং মেয়াদোত্তীর্ণ এর তারিখ যথাক্রমে, ০৯/০৩/১৯৭৪ এবং ০৯/০৩/১৯৮১। সুতরাং, ১৯৮৪ সালের অক্টোবর মাসে গৃহীত কোট অব আর্মস কোনভাবেই ১৯৭৪ সালের মার্চ মাসে প্রদত্ত পাসপোর্টে ব্যবহৃত হতে পারে না। অতএব, ইন্টারনেটে প্রাপ্ত এবং সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ফারাও এর পাসপোর্টের ছবিটি আসল নয়, বরং একজন শিল্পীরই তৈরি। 

Image: Coat of Arms of Egypt

 

এছাড়াও, সামাজিক মাধ্যমে ফারাও এর আরেকটি পাসপোর্টের ছবি শেয়ার হতে দেখা গেছে এবং আমাদের পূর্বের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে জানা গেছে এই ছবিটিও ভুয়া।

উল্লেখ্য, ফারাও দ্বিতীয় রামেসিস ছিলেন প্রাচীন মিশরের ১৯তম রাজবংশের তৃতীয় রাজা। মিশরে রাজাকে ফারাও (Pharaoh) বলা হয়। তিনি নবী মুসা (আ:) এর সময়ে রাজত্ব করেছিলেন এবং ইনিই আমাদের কাছে ফেরাউন নামে পরিচিত। সংরক্ষণের প্রয়োজনে ফ্রান্সে নেয়ার সময় মিশরের আইন অনুযায়ী ফারাও দ্বিতীয় রামেসিসের পাসপোর্ট লেগেছিল, তবে ফেসবুকে শেয়ার করা  ছবিটি শিল্পীর আঁকা, আসল পাসপোর্টের ছবি নয়।

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টের দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh