নারায়ণগঞ্জের সংঘর্ষ সিলেটের নামে প্রচার

Published on: November 21, 2022

সম্প্রতি এই মর্মে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যে, “এইমাত্র, সিলেটে চলছে বিএনপি ও আওয়ামিলীগ এর তুমুল সংঘর্ষ।” তবে ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সিলেটের সংঘর্ষ বলে যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে তা মূলত নারায়ণগঞ্জে বিএনপি ও পুলিশের মধ্যকার সংঘর্ষের ভিডিও। ১ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে নারায়ণগঞ্জ শহরের ২ নাম্বার রেলগেট এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষটি হয়েছিল।  

ভাইরাল কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে  এবং এখানে

 

ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে বেশকিছু অস্পষ্ট বিষয় সামনে আসে। ভিডিওটি দেখে তাৎক্ষনিকভাবে বোঝার উপায় নেই যে, এটি সিলেটের ঘটনা অথবা অন্য কোথাকার। ১৯ নভেম্বর ২০২২ তারিখে সিলেট জেলায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপি ও আওয়ামী-লীগের মাঝে তুমুল কোনো সংঘর্ষ হয়েছে এমন সংবাদ সংবাদমাধ্যমে প্রচার হয়নি। অথচ বিগত সময়ের যেকোনো সংঘর্ষের ঘটনা জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে লাইভ সম্প্রচার হতে দেখা গেছে।

উল্লেখ্য, ২০ নভেম্বর ২০২২ তারিখে  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে পুলিশের গুলিতে রফিকুল ইসলাম নয়ন নামে এক ছাত্রদল নেতা গুলিবিদ্ধ হন এবং চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিয়ে প্রতিটি জাতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এমন একটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে

সিলেটে বিএনপির সমাবেশটিতে জাতীয় সংবাদ মাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিনিধিদের সরব উপস্থিতি ছিলো। বিবিসি বাংলা প্রতিনিধি আকবর হোসেনের সিলেট থেকে লাইভ ভিডিও দেখুন এখানে। সমাবেশকে ঘিরে আওয়ামী-লীগ ও বিএনপির মাঝে গোলাগুলি বা তুমুল সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে এমন কিছু কোথাও উল্লেখ নেই।

এদিকে প্রথম আলো “সিলেটে বিএনপির সমাবেশ শেষ, পরিবহন ধর্মঘটও শেষ” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন করেছে। সেখানেও আওয়ামী-লীগ ও বিএনপির মাঝে সংঘর্ষ সংক্রান্ত কোনো তথ্য দেখা যায়নি। প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে

যেহেতু কোনো তথ্য-উপাত্ত থেকে সিলেটে আওয়ামী-লীগ ও বিএনপির সংঘর্ষের দাবির পক্ষে প্রমাণ মিলেনি সেক্ষেত্রে ভাইরাল ভিডিওটি একাধিকবার পর্যবেক্ষণ করে মূল লোকেশন জানার চেষ্টা করা হয়।

ভিডিওটির শুরুর অংশে দেখা যাচ্ছে, বিএনপি নেতাকর্মীরা লাঠি হাতে ছোটাছুটি করছে ও প্রতিপক্ষের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়ছে। বিপরীত দিক থেকে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছোড়ার শব্দ এবং ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। এ পর্যন্ত দেখে এ বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে, সংঘর্ষটি আওয়ামী-লীগ কিংবা বিএপির মধ্যকার নয় বরং বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ইউটিউবে বিভিন্ন কী-ওয়ার্ড ধরে সার্চ করে বিএনপি ও পুলিশের মাঝে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সংঘর্ষের ভিডিও ফুটেজ দেখা হয়।

উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জে বিএনপি ও পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ এমন কী-ওয়ার্ড ধরে ইউটিউবে সার্চ করলে বেশকিছু ভিডিও সামনে আসে। ১ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে Bangla wire নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে “নারায়ণগঞ্জে বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ: নিহত ১” শিরোনামে আপলোড হওয়া একটি ভিডিওর সাথে ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিওটির আংশিক মিল পাওয়া যায়। দুটি ভিডিওটিতেই দেখা যায়, বিএনপি সমর্থিত নেতাকর্মীরা বড় একটি গাছের নিচে অবস্থিত দুই সাটার বিশিষ্ট একটি দোকান বা কোনো প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করছে। ভিডিওটি দেখুন এখানে

১ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে All around us নামের একটি ইউটিউবে চ্যানেলে “নারায়ণগঞ্জে বিএনপি পুলিশ সংঘর্ষ” শিরোনামে ১ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও আপলোড হয়েছে। এই ভিডিওটির সাথে ভাইরাল ভিডিওটির শুরুর অংশের হুবহু মিল রয়েছে। ভিডিওটি দেখুন এখানে

প্রসঙ্গত, ফেসবুকের ভাইরাল ভিডিওটির দৈঘ্য ৮ ঘণ্টা। যদিও সেখানে একই ফুটেজ অনেকবার ব্যবহার করে দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। ভিডিওটি একাধিকবার পর্যবেক্ষণ করে কিছু বিষয় পরিষ্কারভাবে বোঝা গেছে যে, সংঘর্ষের এই ঘটনাটি নারায়ণগঞ্জের। কেননা জাতীয় সংবাদ মাধ্যমের কিছু ফুটেজে সেদিনের সংঘর্ষের একই চিত্র দেখা গেছে।

১. ভাইরাল ভিডিওটিতে সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে একটি ভাস্কর্য অনেকবার দেখা গিয়েছে, সেটি মুলত নারায়ণগঞ্জেরই চিত্র। জাতীয় সংবাদ মাধ্যমের বিভিন্ন ফুটেজে ভাস্কর্যটি দেখা গেছে।

 

২. পিলারে ঝোলানো ফোকাস কোচিং সেন্টারের একটি বিজ্ঞাপনে নারায়ণগঞ্জ শাখা লেখা হয়েছে।

৩. বিএনপি সমর্থিত নেতাকর্মীরা যেই টি-শার্ট পরে সংঘর্ষে লিপ্ত ছিলো, সেটি নারায়ণগঞ্জের মিছিলের টি-শার্ট। একাধিক ফুটেজ দেখে তা নিশ্চিত হওয়া গেছে।

 

বলাবাহুল্য, নারায়ণগঞ্জের সংঘর্ষের ভিডিওটি দুই পাশ থেকে ধারণ করা হয়েছে। পুলিশ যে পাশে অবস্থান করেছে সেখান থেকে সংবাদকর্মীরা ভিডিও ধারণ করেছে। অপরদিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা যে পাশে ছিলেন ধারণা করা হচ্ছে, সেখান থেকে তাঁদের কেউ ভিডিও ধারণ করেছে। যে কারণে তাৎক্ষনিকভাবে মূলধারার সংবাদ মাধ্যমের ভিডিও দেখে বোঝার উপায় নেই ভিডিওটি নারায়ণগঞ্জের। যে কারনে ফ্যাক্টওয়াচকে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত, ছবির সাহায্য নিয়েছে।

সুতরাং, এ বিষয়টি পরিষ্কার যে, “সিলেটে চলছে বিএনপি ও আওয়ামিলীগ এর তুমুল সংঘর্ষ” এই ক্যাপশনে যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে তা মূলত নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ও বিএনপির সংঘর্ষের ভিডিও।

সঙ্গত কারণে এমন ক্যাপশনগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” সাব্যস্ত করেছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh