প্রাণ লাচ্ছি কি শুকরের চর্বি দিয়ে বানানো হয়?

Published on: May 13, 2022

৭ মে ২০২২ তারিখে “প্রাণ লাচ্ছি তে শুকরের চর্বি” শীর্ষক একটি তথ্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এ সংক্রান্ত ফেসবুক পোস্টগুলোতে প্রাণ লাচ্ছির বোতলের একটি ছবি ব্যবহৃত হয়েছে এবং বোতলের গায়ে উল্লেখিত উপাদান অংশের “Aspartame (E-951)” অংশটি চিহ্নিত করা হয়েছে। অ্যাসপার্টেম (ই-৯৫১) মূলত একটি কৃত্রিম মিষ্টি জাতীয় পদার্থ যা চিনির চেয়ে ২০০ গুণ বেশি মিষ্টি। এর মূল উপাদান দুটি হল অ্যাসপার্টিক অ্যাসিড এবং ফেনিল্যালানিন। শুকরের চর্বির সাথে এর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সঙ্গত কারণেই ফ্যাক্টওয়াচ এটি কে গুজব হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।

সম্প্রতি ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ এবং পেজে শেয়ার হওয়া কিছু গুজবের নমুনা দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে।

ভাইরাল ফেসবুক পোস্টগুলোর ক্যাপশনটি হুবহু নিচে তুলে ধরা হল:

“”প্রাণ লাচ্ছি”

শুকুরের চর্বি কোড E-951 চোখে পড়ল।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের সকলকে হারাম থেকে বেঁচে থাকার তওফিক দান করুন।

আমিন”

অ্যাসপার্টেম (ই-৯৫১) কি?

Aspartame (E-951) মূলত একটি কৃত্রিম মিষ্টি জাতীয় পদার্থ যা সাদা, গন্ধহীন এবং চিনির চেয়ে ২০০ গুণ বেশি মিষ্টি। অ্যাসপার্টিক অ্যাসিড এবং ফেনিল্যালানিন এর যৌগে এটি তৈরি করা হয়ে থাকে। উল্লেখ্য যে এখানে (E-951) এর E অনুমোদিত খাদ্য সংযোজন শনাক্ত করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ব্যবহৃত একটি সংখ্যা। একটি E নম্বর মানে হল সেটি নিরাপত্তা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে এবং ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত হয়েছে।

ইউরোপে সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এটি পানীয়, মিষ্টান্ন, মিষ্টি, দুগ্ধ, চুইংগাম, শক্তি-হ্রাসকারী এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ পণ্যের মতো খাদ্যদ্রব্যে খাদ্য সংযোজন হিসাবে অনুমোদিত। ইউরোপিয়ান ফুড সেফটি অথোরিটির দেয়া তথ্য মতে, পরীক্ষামূলক প্রাণী অধ্যয়ন, ক্লিনিক্যাল গবেষণা, নিরাপত্তা গ্রহণ, মহামারী সংক্রান্ত অধ্যয়ন এবং বিপণন-পরবর্তী নজরদারির ধাপ পেরিয়ে এটি বহু বছর ধরে মানুষের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।

ইউএস ফুড এন্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) ১৯৮১ সালে অ্যাসপার্টেম কে কিছু নির্দিষ্ট শর্তে, নির্দিষ্ট কিছু খাবারে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেয়। ১৯৮৩ সালে কার্বনেটেড বেভারেজে এবং ১৯৯৬ সালে “সাধারণ ব্যবহারের জন্য” এফডিএ এটি কে অনুমোদন দেয়। এটি তাপ স্থিতিশীল নয় এবং উত্তপ্ত হলে এর মিষ্টতা হারায়, তাই এটি সাধারণত বেকড পণ্যগুলিতে ব্যবহৃত হয় না। এটি মানুষের খাদ্য সরবরাহের সবচেয়ে সম্পূর্ণরূপে অধ্যয়ন করা পদার্থগুলির মধ্যে একটি, যা ১০০ টিরও বেশি গবেষণায় নিরাপদ প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশন এবং আমেরিকান ডায়েটিক অ্যাসোসিয়েশন দ্বারাও অ্যাসপার্টেম অনুমোদিত।

অ্যাসপার্টেম সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন এই লিংকে।

হালাল খাবার বিষয়ে ভারতভিত্তিক একটি ওয়েবসাইট halalsign.com এ উল্লেখ করা হয়েছে Aspartame (E-951) একটি মিষ্টি জাতীয় পদার্থ এবং হালাল খাদ্য উপাদান।

এদিকে গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই প্রাণ লাচ্ছির ফেসবুক পেইজে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। প্রাণ লাচ্ছির ফেসবুক পেজ থেকে বলা হয়েছে:

“গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রাণ লাচ্ছিতে ব্যবহৃত একটি উপাদান অ্যাসপার্টাম (E-951) নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছাড়ানো হচ্ছে যা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। অ্যাসপার্টাম উপাদানটি হারাম বলে ভুল তথ্য অনেকে না জেনে শেয়ার করছেন।

অ্যাসপার্টাম (E-951) মূলত কৃত্রিম সুইটেনার যা চিনির চেয়ে ২০০ গুণ বেশি মিষ্টি। সারাবিশ্বে খাদ্যপণ্যে ও পানীয়গুলোতে কয়েক দশক ধরে চিনির বিকল্প হিসেবে এ উপাদান ব্যবহার হয়ে আসছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা অ্যাসপার্টামকে নিরাপদ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। এছাড়া মুসলিম দেশগুলোর পাশাপাশি এখন বিশ্বের প্রায় সবদেশই হালাল ইস্যুটি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এক্ষত্রে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সব মুসলিম দেশেই অ্যাসপার্টামকে (E-951) হালাল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এসব দেশের বিভিন্ন গবেষণায় অ্যাসপার্টাম (E-951) শরীয়াভাবে অনুমোদিত বলে উঠে এসেছে। এছাড়া প্রাণ লাচ্ছিতে ব্যবহৃত উপাদান ইন্দোনেশিয়ান মজলিশ উলামা কতৃক হালাল সার্টিফায়িড এবং বাংলাদেশের বিএসটিআই কর্তৃক অনুমোদিত। মুসলিম বিশ্বের কয়েকটি দেশে নিয়মিত প্রাণ লাচ্ছি রপ্তানিও হচ্ছে। প্রাণ এর উৎপাদিত লাচ্ছি ও এতে ব্যবহৃত দুধসহ সকল উপাদান ১০০ ভাগ হালাল উপাদান দিয়ে তৈরি। তাই আমরা আমাদের সকল ধর্ম বর্ণের অগণিত ভোক্তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই প্রাণ লাচ্ছি হালাল ও নিরাপদ স্বাস্থ্যকর পানীয়।“

উক্ত তথ্য-প্রমাণাদি সাপেক্ষে বিষয়টি স্পষ্ট যে, অ্যাসপার্টেম এর সাথে শূকরের চর্বির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। অ্যাসপার্টিক অ্যাসিড এবং ফেনিল্যালানিন এর সংমিশ্রণে তৈরি অ্যাসপার্টেম মূলত একটি কৃত্রিম মিষ্টি জাতীয় পদার্থ যার ই-কোড হচ্ছে ৯৫১।

সঙ্গত কারণেই এটিকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” সাব্যস্ত করেছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

Leave a Reply