জাপানের কবরস্থানগুলোতে কি কিউআর কোড বসানো হয়েছে?

Published on: September 17, 2021

সম্প্রতি সমাধিস্তম্ভের মতো কাঠামোতে কিউআর কোড স্ক্যান করা এক মহিলার ছবিসহ একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে। যেখানে দাবি করা হচ্ছে, ‘জাপানে প্রতিটি কবরের জন্য কবরস্থানগুলতে একটি করে QR কোড দেয়া হয়েছে…’। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে ছবিটি সাম্প্রতিক কোনো ছবি নয়, জাপানের কোনো কবরস্থানেরও নয়, বরং ২০১৫ সালে তোলা দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের চংকিং শহরের একটি থিম পার্কের। পাশাপাশি পোস্টের দাবির পক্ষেও নির্ভরযোগ্য কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

 

ভাইরাল পোস্টেগুলোতে যা দাবি করা হয়েছেঃ

মূলত ‘জ্ঞানের জগৎ’ –ফেসবুকের একটি পাবলিক গ্রুপ থেকে জাপানের সমাধিস্তম্ভে কিউআর কোড প্রসঙ্গে গ্রাফিক প্রতিবেদনটি বেশি ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দাবি করা হয়, “জাপানে প্রতিটি কবরের জন্য কবরস্থানগুলোতে একটি করে QR কোড দেয়া হয়েছে, যা থেকে মৃত ব্যক্তিটির তথ্য এবং সংক্ষিপ্ত জীবনী খুব সহজেই QR কোড স্ক্যান করে জানা যাবে। ডিজিটালাইজেশনের যুগে এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।” এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে এখানে এখানে এখানে এখানে

 

ছবি যাচাই

আমরা প্রথমে ভাইরাল ছবিটির সমাধিস্তম্ভের মতো কাঠামোর উপর লেখা লেখাটি পড়ার চেষ্টা করি। ‘টেক্সট এক্সট্রাক্টর টুল’ ব্যবহার করে জানা যায় লেখাটি চীনা ভাষায় লেখা হয়েছে, জাপানি নয়। ‘南京大屠杀的受害者’ চীনা ভাষায় লেখা ‘নানজিং গণহত্যার শিকার’।

 

এরপর গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ ব্যবহার করে আমরা ছবির পেছনের মূল ঘটনা খুঁজে বের করি। জানা যায় ২০১৫ সালে দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের চংকিং শহরে ফরেনার্স স্ট্রিট নামে একটি থিম পার্কে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শিকার এমন ব্যক্তিদের জন্য একটি স্মারক স্থাপন করা হয়। ভাইরাল ছবিটি মূলত সেখান থেকে তোলা। ১ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে ‘Thatsmag.com’ থেকে প্রকাশিত ‘In Chongqing, tombstones with QR codes make remembering Japanese war crimes easier than ever’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি পড়ুন।

 

উল্লেখ্য, ছবিতে কবরের মতো দেখতে এগুলো কোন আসল কবর নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চীনে জাপানি সেনাদের দ্বারা সংঘটিত নানজিং গণহত্যা এবং চংকিং বোমা হামলায় মৃত ব্যক্তিদের জীবন সম্পর্কে তথ্য দিতে সমাধির মতো দেখতে একপ্রকার কাঠামোর উপর এই কিউআর কোডগুলো বসানো হয়েছে। পার্কে আসা দর্শনার্থীরা সেসব কিউআর কোড স্ক্যান করে ক্ষতিগ্রস্তদের শ্রদ্ধা জানাতে পারে।

 

মূল ছবিটি দেখুন এখানে

 

 

নানজিং গণহত্যা ও চংকিং -এ বোমা হামলার প্রেক্ষাপট

দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধের সময় ১৯৩৭ সালের ১৩ ডিসেম্বরে জাপান চীনের তৎকালীন রাজধানী নানকিং (বর্তমান নাম নানজিং) দখল করে নেয়। পরবর্তী ছয় সপ্তাহের ব্যবধানে নানজিং -এ জাপানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ ও ব্যাপক ধর্ষণ ইতিহাসে ‘নানকিন গণহত্যা’ বা ‘দ্য রেপ অব নানকিন’ নামে পরিচিত। বিস্তারিত পড়ুন এখানে

 

১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৮ থেকে ২৩ আগস্ট, ১৯৪৩ পর্যন্ত চীনের অস্থায়ী রাজধানী চংকিং -এ জাপানি বিমান বাহিনী শতাধিক বোমা হামলা চালিয়েছিল। জাপানিরা আনুমানিক ১১,০০০ বোমা ফেলেছিল। এতে ১০,০০০ এরও বেশি চীনা নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই ছিল বেসামরিক নাগরিক। ‘World War II Database’ ওয়েবসাইটে দেখুন।

 

তথ্য যাচাই

 

আমরা ভাইরাল ছবির সাথে দেওয়া তথ্য ‘জাপানে প্রতিটি কবরের জন্য কবরস্থানগুলতে একটি করে QR কোড দেয়া হয়েছে…’ এমন দাবির পক্ষে কোন নির্ভরযোগ্য প্রমাণ খুঁজে পাইনি। তবে বিজ্ঞান সাময়িকী ‘Wierd’ প্রকাশিত ২৩ মার্চ ২০০৮ সালের একটি প্রতিবেদনে থেকে জানা যায়, একজন জাপানি সমাধিস্তম্ভ নির্মাতা ইশি নো কো (‘ভয়েস অফ দ্য স্টোন’) বার কোড বসিয়ে সমাধিস্তম্ভ তৈরির পরিকল্পনা করেছিল। ইশি নো কো’র ওয়েবসাইটটি দেখুন।

 

অর্থাৎ, সামাজিক মাধ্যমে সমাধিস্তম্ভের মতো কাঠামোতে কিউআর কোড স্ক্যান করা এক মহিলার ছবিটি বাস্তবে চংকিং শহরে একটি থিম পার্কের, জাপানের নয়। এমনকি ছবির সাথে ‘জাপানে প্রতিটি কবরের জন্য কবরস্থানগুলতে একটি করে QR কোড দেয়া হয়েছে…’ এমন দাবিটির পক্ষেও কোন যথার্থ প্রমাণ নেই। তাই ফ্যাক্টওয়াচ উল্লেখিত ফেসবুক পোস্টগুলোকে ‘মিথ্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

Leave a Reply