মাদ্রাসা ছাত্রের কোরআন পোড়ানো এবং হিন্দু সম্প্রদায়কে ফাাঁসানোর দাবিটি ভুয়া

Published on: October 17, 2021

আজ দুপুরে Asad Noor নামের একজন “মানবাধিকার কর্মী” ফেসবুকে কোরআন পোড়ানোর একটি ছবি শেয়ার করে দাবি করেন, “সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় জিল্লুর নামের এক মাদ্রাসার ছাত্র কোরআন পুড়িয়েছে”। শাহজাদপুর থানা থেকে পুলিশ এসে তাকে গ্রেপ্তার করে। পোস্টে আরও দাবি করা হয়, এই কাণ্ডে স্থানীয় হিন্দুদের ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দাবিটির ভিত্তি নেই। তাছাড়া Asad Noor তার পোস্টে যে ছবিটি ব্যবহার করেছেন, সেটি ২০০২ সালের ২ মার্চ গুজরাটে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গার সময় আমেরিকান ফটোসাংবাদিক আমি ভিটাল তুলেছিলেন।

 

১৬ অক্টোবর দুপুরের দিকে জনৈক আসাদ নুর সিরাজগঞ্জের এক মাদ্রাসা ছাত্রের কোরআন পড়ানোর তথ্য শেয়ার করেন সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে। মাত্র ৭ ঘন্টায় পোস্টটি ভাইরাল হয়ে যায় যা প্রায় ১৬০০ ফেসবুক ব্যবহারকারী ইতোমধ্যে শেয়ার করেছে।
আসাদ নুরের পোস্টঃ
সিরাজগঞ্জ এর শাহজাদপুর থানার বড়মহারাজপুর গ্রামে গতকাল জিল্লুর নামের এক মাদ্রাসার ছাত্র কোরআন পুড়িয়েছে। এবং এই কান্ডে স্থানীয় হিন্দুদের ফাঁসানোর চেষ্টা চালায়। আজ পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে।
জিল্লুর নন্দলালপুর মাদ্রাসায় আলিম এ পড়ে
তার বাবার নাম ফরিদ।
সবাই সচেতন থাকুন। চারপাশে অস্বাভাবিক কিছু দেখলেই ভিডিও রেকর্ড করে রাখুন।

 

স্ক্রিনশট দেখুন

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ফেসবুকে এমন আরও কিছু পোস্ট দেখুন এখানে এখানে এখানে

 

ছবি যাচাই

প্রথমে আমরা পোস্টে ব্যবহৃত ছবিটি গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চে যাচাই করি। জানা যায় ছবিটি গুজরাট দাঙ্গার। ওই দাঙ্গায় প্রায় এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলো। এ বিষয়ে বিবিসির প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে

সে সময় অপহৃত এক মুসলমানের বাড়ির সামনে থেকে ২ মার্চ, ২০০২ তারিখে এই পোড়া কোরআন শরীফের ছবিটি তোলেন আমেরিকান ফটোসাংবাদিক আমি ভিটাল।

গ্যেটি ইমেজেস (Getty Images) এ ‘Violence in India’ শিরোনামে ছবিটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

 

তথ্য যাচাই

ছবিটি ভূয়া প্রতিপন্ন করার পর তথ্য যাচাইয়ের প্রয়াস নেয় ফ্যাক্টওয়াচ টিম। আসাদ নূরের পোস্টে সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুর থানার কথাটি উল্লেখ থাকায় ফ্যাক্টওয়াচ সরাসরি সেখান যোগাযোগ করে। শাহজাদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ সাঈদ মাহমুদের সাথে ফোনালাপে জানা যায়, আসাদ নুরের দাবিটি সঠিক নয়। বিল্লু শেখ (জিল্লুর নয়) নামের সেই মাদ্রাসা ছাত্রের কোরআন পোড়ানো এবং আজকে তার গ্রেপ্তার হবার দাবিগুলো মিথ্যা। এটিকে কেন্দ্র করে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাউকে ফাঁসানোর চেষ্টাও করা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে অফিসার ইন চার্জ বলেন, বিল্লু শেখ হল একজন মাদ্রাসা ছাত্র। মাদ্রাসায় ঠিক মত বেতন না দেয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের সাথে তার “ঝামেলা” ছিল। এতে করে সে প্রায়শই বিষণ্ণ থাকতো। চলতি মাসের ১৩ তারিখ [১৩ অক্টোবর ২০২১] সে তার বাড়ির পাশে বাঁশঝাড়ে কিছু কাগজ-পত্র পোড়ায় এবং তার মধ্যে একটি ‘কায়দা’ বা কোরআন শেখার বইও ছিল জানা গেছে। অবশ্য পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কোনকিছুই পোড়ানোর আলামত পায়নি। পরবর্তীতে ছেলেটির অভিভাবক বিষয়টি জানতে পেরে এলাকার কিছু মুরব্বিকে ডেকে তাকে শাসন করেন। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি এবং এই কাণ্ডে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাউকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্রের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে নাকচ করে দেন তিনি।

অর্থাৎ, আসাদ নুরের পোস্টে যে মূল দাবিগুলো করা হয়েছে যেমন, ‘সিরাজগঞ্জে মাদ্রাসার ছাত্রের কোরআন পোড়ানো’,  ‘আজ পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে’ এবং এ ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কাউকে ফাঁসানোর চেষ্টা –কোনটিই সঠিক নয়। ঘটনাটি ঘটেছে ১৩ অক্টোবর, সেখানে কোরআন পোড়ানো হয় নি, মাদ্রাসা ছাত্র গ্রেফতারও হয় নি, এমনকি যে ছবিটি আসাদ নূরের পোস্টে ব্যবহৃত হয়েছে, সেটি ২০০২ সালে তোলা গুজরাট দাঙ্গার ছবি। তাই এ ধরণের দাবিযুক্ত পোস্টগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ মিথ্যা ‘সাব্যস্ত’ করেছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

 

 

 

Leave a Reply