হাজীগঞ্জে হিন্দু পরিবারে গণধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনাটি গুজব

Published on: October 16, 2021

সম্প্রতি “চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে মুসলিমদের দ্বারা গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক হিন্দু পরিবারের মা, মেয়ে, বোনের মেয়ে। বোনের মেয়েটির বয়স দশ। এবং এই বাচ্চা মেয়েটি মারা গিয়েছে” এমন দাবি উঠেছে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে। চাঁদপুরের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এবং হাজীগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রুহিদাস বণিকের একটি ভিডিও বিবৃতির বরাতে জানা যায় ধর্ষণের তথ্যটি গুজব। মূলধারার বেশ কয়েকটি জাতীয় পত্রিকাও দাবি করছে, উক্ত এলাকায় কোন হিন্দু পরিবার উপর ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি।

কুমিল্লায় কোরআন অবমাননা অভিযোগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এবার সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক এবং টুইটারে দাবি উঠে “চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে মুসলিমদের দ্বারা গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক হিন্দু পরিবারের মা, মেয়ে, বোনের মেয়ে”। এমনকি শিশুটির সঙ্গে তার ‘মাসি (খালা) ও বোনও ধর্ষণের শিকার হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে’ বলে কোনো কোনো পোস্টে দাবি করা হয়।

এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে এখানে এখানে এখানে এখানে এখানে

 

মানবাধিকার কর্মী আসাদ নুর লিখেছেনঃ

 

ফেসবুকে আরও কিছু পোস্ট দেখুন

 

 

তথ্যটি টুইটারেও ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তে। দেখুন

 

তথ্য যাচাই

ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান করে চাঁদপুরের স্থানীয় পত্রিকা ‘popularbd.news’ -এর একটি প্রতিবেদন সনাক্ত করে যেখানে হাজীগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ধর্ষণের পুরো ঘটনাটিকে গুজব সাব্যস্ত করেছে। পপুলারবিডিনিউজ হাজীগঞ্জ থানা আফিসার ইনচার্জ হারুনুর রশীদ এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ হাজীগঞ্জ উপজেলার সভাপতি বাবু রুহিদাস বনিকের বরাতে তথ্যটি নিশ্চিত করেছে। ১৬ অক্টোবর বিকাল ৫টায় প্রকাশিত “হাজীগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ে ধর্ষণের ঘটনা গুজব” শিরোনামে প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে।

 

আমরা বাবু রুহিদাস বনিকের ভিডিওবার্তাটি ‘Shakil Prodhania’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে সংগ্রহ করি।

ভিডিও পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা, “চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের বোনদের শ্লীলতাহানি এবং ধর্ষণের কোন ঘটনা ঘটেনি। এটি একটি গুজব। একইসাথে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্মান্ধদের দ্বারা মুসলমানদের কোরআন অবমাননা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের  মন্দির এবং প্রতিমা ভাংচুরের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি”

 

ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, ‘কতিপয় কুচক্রী মহল হাজীগঞ্জে নারী ও শিশুর শ্লীলতাহানি ঘটেছে বলে এক ধরনের গুজব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছে। তবে এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ, জাতীয় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বা বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের কোনো নেতৃবৃন্দ অবগত নয়। অতএব সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ধরনের গুজব পরিহার করার জন্য অনুরোধ করছি।

 

ফ্যাক্টওয়াচ ধর্ষণের ঘটনাটি যাচাই করতে হাজীগঞ্জ থানা আফিসার ইনচার্জ হারুনুর রশীদ এবং ইন্সপেক্টর ইব্রাহীমের সাথে যোগাযোগ করে। হারুনুর রশীদ বিষয়টিকে গুজব বলেছেন একই সাথে জানিয়েছেন, ধর্ষণের বিষয়ে কোন মামলা বা অভিযোগও নিয়ে কেউ আসেনি।

এছাড়াও, হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শোয়েব আহম্মেদ চিশতী পপুলারবিডিনিউজে বলেছেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের এমন কোন ঘটনার বিষয়ে চিকিৎসা নিতে কেউ আসেনি।

 

সংবাদমাধ্যম ইনকিলাবের অনলাইন ভার্শনেও আমরা একি প্রতিবেদন দেখতে পাই।

 

এছাড়াও মূলধারার অনেকগুলো পত্রিকা ঘটনাটিকে গুজব হিসেবে শনাক্ত করে।

জাগোনিউজটুয়েন্টিফোরের প্রতিবেদন পড়ুন এখানে

যুগান্তরের প্রতিবেদন পড়ুন এখানে

বাংলানিউজটুয়েন্টিফোরের প্রতিবেদন পড়ুন এখানে

 

 

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ‘মুসলিমদের দ্বারা গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক হিন্দু পরিবারের মা, মেয়ে, বোনের মেয়ে’ সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ওঠা এমন দাবির পক্ষে এ পর্যন্ত কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। হাজীগঞ্জে শ্লীলতাহানি এবং ধর্ষণের শিকার কোন হিন্দু পরিবারের সদস্যদের পরিচয়, ছবি কিংবা বিবৃতি খুঁজে পাওয়া যায়নি। হাজীগঞ্জ থানাতে ধর্ষণের বিষয়ে কোন মামলা বা অভিযোগও দায়ের করা হয়নি।

অর্থাৎ, হাজীগঞ্জে মুসলিমরা কোন হিন্দু পরিবারের মা, মেয়ে, বোনের মেয়েকে ধর্ষণ করেছে এমন দাবির পক্ষে কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। যারা এই তথ্যটি ছড়িয়েছেন, তারাও কোনো সূত্র উল্লেখ করেন নি। বিপরীতে, ধর্ষণের এমন ঘটনাকে গুজব সাব্যস্ত করেছে হাজীগঞ্জ থানা আফিসার ইনচার্জ হারুনুর রশীদ এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ হাজীগঞ্জ উপজেলার সভাপতি বাবু রুহিদাস বনিক। যার ভিত্তিতে স্থানীয় এবং জাতীয় বেশ কিছু সংবাদপত্র ঘটনাটিকে গুজব বলে শনাক্ত করেছে। ফলে ফ্যাক্টওয়াচ হাজীগঞ্জের একটি হিন্দু পরিবারের একাধিক সদস্য ধর্ষণ-মৃত্যুর শিকার হয়েছে –এমন দাবিযুক্ত পোস্টগুলোকে ‘মিথ্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

 

 

Leave a Reply