ফিলিস্তিনিদের জন্য রোনালদোর অনুদানের পুরনো গুজব নতুন করে প্রচার

Published on: May 31, 2021

সম্প্রতি “৩ বছরে ফিলিস্তিনকে ৩ মিলিয়ন ডলার দিয়ে সহায়তা করেছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো” শিরোনামে একটি খবর ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ধরনের গুজব কয়েক বছর ধরেই চলছে, যা  নাকচ করে গত ২৮ মে ২০১৯ তারিখে তথ্যযাচাই প্রতিষ্ঠান এএফপি  প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। এমনকি প্রথম আলো-র মত মূলধারার বাংলাদেশী পত্রিকাগুলোও এই গুজবের ফাঁদে পড়েছে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ২০১৬ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া  এবং ২০১৮ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের শিশুদের সহায়তায় অনুদান দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু ফিলিস্তিনের ক্ষেত্রে এমন কোন তথ্য পাওয়া যায় নি।  

গত ২৫ মে ২০২১ তারিখে “৩ বছরে ফিলিস্তিনকে ৩ মিলিয়ন ডলার দিয়ে সহায়তা করেছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো” শীর্ষক খবরটি অনলাইন পোর্টাল ‘ShadhinNews24’ তাদের ফেসবুক পেইজ এবং ওয়েবসাইট থেকে প্রকাশ করে। একই ধরনের প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায় ‘বিডি রিপোর্ট নিউজ’ সহ বেশ কিছু অনলাইন পোর্টালে।

ShadhinNews24’  এবং ‘বিডি রিপোর্ট নিউজ’ এর প্রতিবেদন

 

 

 

 

 

 

 

প্রতিবেদন দুটির বিবরণ অংশে বলা হয়েছে “২০১০-১১ মৌসুমে রোনালদো তার অর্জিত গোল্ডেন বুটটি ফিলিস্তিনি মুসলমান অনাথ শিশুদের চিকিৎসা ও শিক্ষা বাবদ দান করেন যার মূল্য ১৫০ কোটি টাকা।”

দেশের মূলধারার পত্রিকাগুলোও এই গুজবের ফাঁদে পড়েছে। ১৬ আগস্ট ২০১৫ তারিখে প্রথম আলোর অনলাইন ভার্সনে “মেসি নন সেরা রোনালদোই!” শীর্ষক প্রতিবেদনে লিখেছে, “২০১২ সালে গাজার শিশুদের জন্য তাঁর গোল্ডেন বুট নিলামে তুলে জোগাড় করে দিয়েছিলেন ১৫ লাখ ইউরো (প্রায় ১২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা)।”

৫ জুলাই ২০১৮ তারিখে প্রথম আলোর আরেকটি প্রতিবেদনে লেখা হয় “২০১২ সালে ফিলিস্তিনি শিশুদের জন্য তাঁর গোল্ডেন বুট নিলামে তুলে পাওয়া ১৫ লাখ ইউরো দান করেন।”

প্রথম আলোর প্রতিবেদন দুটি দেখুন:

 

 

 

 

 

 

প্রথম আলো’ ছাড়াও ‘Jagonews24’, ‘Jamuna.tv’, ‘abnews24’ সংবাদমাধ্যমগুলোও এই ভুয়া তথ্যটি প্রকাশ করে।

Jagonews24’ এবং ‘Jamuna.tv’র প্রতিবেদন:

 

 

 

 

 

 

 

 

বিষয়টি নিয়ে এএফপির প্রতিবেদন কী বলছে?

এএফপি ফ্যাক্টচেক অনুযায়ী, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো গাজায় ফিলিস্তিনিদের জন্য ১.৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেয়ার প্রচারণাটি মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। সামাজিক মাধ্যমে এ ধরণের দাবি করা পোস্টগুলোতে নির্ভরযোগ্য কোন সূত্রের উল্লেখ ছিল না। ফিলিস্তিনিদের নিয়ে রোনালদো অনেক বারই গুজবের শিকার হয়েছেন এবং এ বিষয়ে রোনালদোর প্রফেশনাল ম্যানেজমেন্ট এজেন্সী ‘Gestifute’ এএফপিকে জানায়, “রোনালদোকে ঘিরে বাকি সব গুজবের মত এটিও মিথ্যা।” এএফপি আরও জানায়, ৭ মে ২০১৯ তারিখে প্রথমে তারা এই ভুল তথ্যটি খুঁজে পায় একটি আরবি ভাষার ফেসবুক পোস্ট থেকে যা ৭,০০০ বার শেয়ার হয়েছিল। পরবর্তীতে স্প্যানিশ এবং ফরাসী ভাষায় পোস্টটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এএফপির প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে।

১৭ মে ২০১৯ তারিখে রাশিয়ান টেলিভিশন চ্যানেল ‘আরটি’র ইংরেজি ওয়েবসাইটে থেকে এই সংবাদটি প্রায় ১৭,০০০ বার শেয়ার হয় কিন্তু পরে তারা প্রতিবেদনটি সংশোধন করে। আরটির সংশোধিত প্রতিবেদনটির শিরোনাম “Reports of Cristiano Ronaldo donating $1.5mn to starving people in Gaza denied” যা পূর্বে ছিল “Ronaldo donates $1.5 million”।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আরেকটি তথ্যযাচাই প্রতিষ্ঠান ‘Lead Stories’ তাদের ১৯ মে ২০১৯ তারিখের প্রতিবেদনে রোনালদোর ফিলিস্তিনিদের অনুদান দেয়ার দাবিটিকে ‘ভুয়া সংবাদ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এখানেও রোনালদোর পক্ষে তাঁর ম্যানেজমেন্ট এজেন্সী ‘Gestifute’ এই সংবাদটিকে ‍“গুজব” বলে নিশ্চিত করে। 

গুজবটি যেভাবে ছড়িয়ে পড়ে

যুদ্ধবিধ্বস্ত এবং জাতিগত নিপীড়নের শিকার জনগোষ্ঠীর জন্য রোনালদো বিভিন্ন সময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। ২০১৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর রোনালদো যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার শিশুদের জন্য শিশুকল্যাণ সংস্থা “সেভ  দ্য চিলড্রেন”কে অনুদান দিয়ে তার টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের “Cristiano Ronaldo makes donation, tells Syrian children: ‘Don’t lose your hope” শীর্ষক প্রতিবেদনটি পড়ুন। এটির সত্যতা সম্পর্কে রোনালদোর টুইটার থেকেই নিশ্চিত হওয়া যায়।

২০১৮ সালেও রোনালদো বাংলাদেশের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য অনুদান দিয়েছিলেন। সেভ দ্য চিলড্রেন এই অনুদানের বিষয়টি ঘোষণা করে ‘Cristiano Ronaldo Shares Unifying Message to Urge World to Help Rohingya Refugee Children’ শীর্ষক নিবন্ধে। এবারও রোনালদো একটি টুইট করে রোহিঙ্গা শিশুদের সহায়তায় সারা বিশ্বকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

ধারণা করা যায়, সেভ দ্য চিলড্রেন এর মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য অনুদান দেয়ার ঘটনা এমন গুজবকে সাধারণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছে। বাংলা ভাষার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এবং ফেসবুকে গত ৬-৭ বছর ধরে এই গুজবটি প্রচারিত হয়ে আসছে ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষিতে। ফলে ফ্যাক্টওয়াচ বাংলাভাষায় নতুন করে ভাইরাল হওয়া এই সংবাদটিকে “মিথ্যা” বলে চিহ্নিত করেছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ fb.com/search.ulab

 

Leave a Reply