“ফাঁসির দড়িতে ঝুলানো হচ্ছে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে” – দাবিটি বিভ্রান্তিকর  

Published on: December 5, 2021

সম্প্রতি “ইন্নালিল্লাহ ফাঁসির দড়িতে ঝুলানো হচ্ছে দেলোয়ার হোসেন [দেলাওয়ার হোসাইন] সাঈদীকে!” ক্যাপশনে একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে ফেসবুকের কয়েকটি পেজ থেকে। ভিডিওটি মূলত ২৪ নভেম্বর ২০২১ তারিখে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে দেয়া তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসানের বক্তব্যকে ঘিরে। ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাঈদীকে মৃত্যুদন্ড দেয়। পরবর্তীতে এই রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করা হয়। ১৭ই সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, আপিলের রায় পর্যবেক্ষণ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির সাজা কমিয়ে সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করে যা বর্তমানে বহাল আছে।

সম্প্রতি “ইন্নালিল্লাহ ফাঁসির দড়িতে ঝুলানো হচ্ছে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে!” ক্যাপশনে ফেসবুকে প্রকাশিত কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে, এবং এখানে।


সম্প্রতি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে দেয়া তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসানের বক্তব্য খুঁজে পেয়েছে ফ্যাক্টওয়াচ। উক্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, “তাকে (দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী) কারাগারে রেখে, ভরণ পোষণ দিয়ে, আদর আপ্যায়ন করে… এর মানে টা কি, এই জিনিষটাকে আমি সমর্থন করতে পারি না।“ উক্ত বক্তব্যটি দেখুন এখানে এবং এখানে।


এছাড়াও ২২ নভেম্বর ২০২১ (সোমবার) রাজধানীর জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের (নিমকো) সভাকক্ষে এক সেমিনারে তিনি বলেন, পাকিস্তানী মদদপুষ্ট যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি সেই গোষ্ঠীর অন্যতম সাঈদী। সাঈদী দেশ-সভ্যতা ও মানুষের জন্য ক্ষতিকর। এদেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকায় জেলখানায় যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আপ্যায়ন করানো মেনে নেওয়া যায় না। তাকে যত দ্রুত সম্ভব ফাঁসির রায় দিয়ে তা কার্যকর করা হোক।

আবার ২৫ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) জাতীয় জাদুঘরের সামনে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমার দাবি, সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে তা কার্যকর করা হোক। সাঈদীর আমৃত্যু সাজার বিরুদ্ধে প্রয়াত এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রিভিউ করে গেছেন, সেই রিভিউ কার্যকর করতে হবে। আমাদের শপথ, সাঈদীর ফাঁসি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন করে যাবোই।

এসময় তিনি আরও বলেন, বাংলার মানুষ যখন মুজিববর্ষ পালন করছে, যখন বিশ্ব অবাক দৃষ্টিতে দেখছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। সেই দেশে কোনো দেশবিরোধীর স্থান নেই। ৩০ লাখ শহীদের রক্তে রঞ্জিত এই দেশের মাটিতে মানবতাবিরোধী অপরাধীকে জেলখানায় আরাম-আয়েশে থাকতে দেওয়া যায় না।

বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ আয়োজিত উক্ত সমাবেশে তার বক্তব্যকে ঘিরে কিছু সংবাদ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে।

উল্লেখ্য যে, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ২১ মার্চ তারিখে দায়েরকৃত বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীর মামলার প্রেক্ষিতে ঐ বছর ২৯ জুন তারিখে পুলিশ বাহিনী রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন নায়েবে আমীর  দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে গ্রেপ্তার করে।

এরপর তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ তদন্ত সংস্থা ১৫টি খণ্ডে ৪ হাজার ৭৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দাখিল করে। এগুলো বিচার বিশ্লেষণ করে ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষ সাঈদীর বিরুদ্ধে ৩১ ঘটনার অভিযোগ আনে।  এর মধ্যে ১১টি আদালত আমলে নেয়নি।  অবশিষ্ট ২০ টি অভিযোগ আমলে নিয়ে ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর সাঈদীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০ অভিযোগ দায়ের করা হয়।

কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-১ এ বিচার চলার পরে এই ২০ টি অভিযোগের মধ্যে ৮ টি অভিযোগ (৬, ৭, ৮, ১০, ১১, ১৪, ১৬ ও ১৯ নম্বর ) প্রমাণিত হয়। বাকি ১২ টি অভিযোগ (১, ২, ৩, ৪, ৫, ৯, , ১২, ১৩, ১৫, ১৭, ১৮, ২০ নম্বর) প্রমাণিত হয়নি।

প্রমাণিত ৮ টি অভিযোগের মধ্যে ৮ ও ১০ নম্বর অভিযোগে তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেওয়া হয়। ২০১৩ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় দেন। এই দুই অপরাধের জন্য ফাঁসির রায় হয়ে যাওয়ায় ৬, ৭, ১১, ১৪, ১৬ ও ১৯নং অভিযোগ প্রমাণিত হলেও এতে পৃথক কোনো সাজার কথা ঘোষণা করেননি ট্রাইব্যুনাল।

পরবর্তীতে এই রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করা হয়। ১৭ই সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, আপিলের রায় পর্যবেক্ষণ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির সাজা কমিয়ে সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করে যা বর্তমানে বহাল আছে।

উক্ত ভিডিওটিতে সাম্প্রতিক সময়ে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসানের বক্তব্যকে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু ভিডিওর ক্যাপশনে তা উল্লেখ না করে “ইন্নালিল্লাহ ফাঁসির দড়িতে ঝুলানো হচ্ছে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে!” কথাটি বলা হচ্ছে। এই ক্যাপশন জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ এটিকে “বিভ্রান্তিকর” সাব্যস্ত করেছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

 

Leave a Reply