পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে থাকা চিত্রটি ধুমপানের নয়

Published on: May 3, 2023

মাধ্যমিক স্তরে পদার্থবিজ্ঞানের বইয়ে ধুমপান করার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে । তবে অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, এই ছবিটা এডিট করাবইতে মূল চিত্রটিতে  কম্পনের ফলে কিভাবে শব্দ তৈরি হয় তার একটি ব্যবহারিক নমুনা ছবির মাধ্যমে দেখানো হয়েছিল। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই পোস্টগুলোকে ‘বিকৃত’ সাব্যস্ত করছে।

গুজবের উৎস 

৪ জুন, ২০২২ সালে, বিকেল ৫ঃ০১ মিনিটে সাইন্স একাডেমী (পদার্থ বিজ্ঞান,রসায়ন,জীব বিজ্ঞান ও উচ্চতর গনিত) 📚🖋️নামক গ্রুপে Ahasun Ullah Sifat নামক আইডি থেকে ভাইরাল পোস্টটি করা হয়। এরপর থেকে পোস্টটি ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ, আইডি এবং পেজ থেকে ছড়িয়ে পড়ে। এমন কয়েকটা পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

ভাইরাল পোস্টটি থেকে জানা যাচ্ছে ছবিটি পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের। বইয়ের চিত্রের নিচে ক্যাপশনে লেখা আছে “চিত্র 7.10: কাগজ দিয়ে ভোকাল কর্ড তৈরি করে সিগারেট পান করা যায়।” এ থেকে ধারণা করা যায় চিত্রটি পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের সপ্তম অধ্যায়ের দশম চিত্র।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে জানা যাচ্ছে বাংলাদেশে প্রাথমিক স্তরে আলাদা করে পদার্থ বিজ্ঞান পড়ানো হয় না। মাধ্যমিক স্তরে শুধুমাত্র নবম-দশম শ্রেণীতে আলাদা করে পদার্থবিজ্ঞান পড়ানো হয়।

এ কারণে ফ্যাক্টওয়াচ নবম-দশম শ্রেণীর পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে ভাইরাল পোস্টের চিত্রটি খোঁজা শুরু করে। নবম-দশম শ্রেণীর   তরঙ্গ ও শব্দ নামক সপ্তম অধ্যায়ের শব্দ তরঙ্গ নামক ৭.৩ অনুচ্ছেদের ২০০তম পৃষ্ঠায় চিত্রটি খুঁজে পাওয়া যায়। শব্দ তরঙ্গ অনুচ্ছেদটি পড়ে জানা যায় শব্দ চলাচলের সময় কিভাবে তরঙ্গ সৃষ্টি হয় এবং তরঙ্গের ফলে কিভাবে কম্পন তৈরি হয় তা জানার জন্য একটি ব্যবহারিক নমুনা দেয়া হয়। ব্যবহারিক কাজটি কিভাবে করতে হবে তা বোঝানোর জন্য ছবি ব্যবহার করা হয়। ছবির নিচে ক্যাপশনে বলা হয় “চিত্র 7.10: কাগজ দিয়ে ভোকাল কর্ড তৈরি করে সেটাকে ফুঁ দিয়ে কাঁপিয়ে শব্দ তৈরি করা যায়।”

ব্যবহারিক কাজটিতে কি বলা হয়েছে তা দেখুন এখানে।

ভাইরাল ফেসবুক পেজের ছবির সাথে আসল ছবির পার্থক্য দেখুন এবং চিত্রের নিচে থাকা ক্যাপশনের পার্থক্য লক্ষ্য করুন।

বামে ভাইরাল ছবি           ডানে এনসিটিবির পাঠ্যপুস্তকের স্ক্রিনশট

 

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া পোস্টের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ছবি এবং আসল পাঠ্যপুস্তকের ছবি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাচ্ছে, পাঠ্যপুস্তকের বইয়ের নিচে ক্যাপশনে লেখা “চিত্র 7.10: কাগজ দিয়ে ভোকাল কর্ড তৈরি করে সেটাকে ফুঁ দিয়ে কাঁপিয়ে শব্দ তৈরি করা যায়।” কিন্তু ভাইরাল পোস্টের ছবিগুলোতে ক্যাপশনের দ্বিতীয় বাক্য , অর্থাৎ “সেটাকে ফুঁ দিয়ে কাঁপিয়ে শব্দ তৈরি করা যায়।”, অংশটুকু ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে এডিট করে “সিগারেট পান করা যায়।”, অংশটুকু লিখে দেওয়া হয়েছে । ফলে পুরো ক্যাপশনটা দাড়িয়েছে “চিত্র 7.10: কাগজ দিয়ে ভোকাল কর্ড তৈরি করে সিগারেট পান করা যায়।”

এছাড়া, বিকৃত ছবিতে মডেলের মুখে একটি সিগারেট যোগ করা হয়েছে, যা মূল ছবিতে ছিল না।

অতীতেও বাংলাদেশের স্কুলে পঠিত পাঠ্যপুস্তক নিয়ে একাধিক গুজব ভাইরাল হয়েছিল। ফ্যাক্টওয়াচের যাচাই করা এমন কয়েকটি গুজব দেখুন এখানে –

পঞ্চম শ্রেণীর ইসলাম ধর্ম বইতে অমুসলিমদের নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য পাওয়া যায় নি

ইসকন থেকে প্রকাশিত বইকে নতুন পাঠ্যপুস্তক দাবি

এই পৃষ্ঠাগুলো নতুন পাঠ্যপুস্তকে নেই

পাঠ্যবইতে কি বঙ্গবন্ধুর বাবার নাম ভুল লেখা হয়েছে?

মানুষ বানর থেকে সৃষ্টি হয়েছে — এমন কোনো তথ্য নেই ষষ্ঠ শ্রেণীর বইয়ে

পাঠ্যবইয়ের বিতর্কিত গল্প-কবিতার তালিকাটি ৬ বছরের পুরনো


সারমর্ম

 ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে ফেসবুকে ভাইরাল পোস্টগুলোতে থাকা চিত্রটি নবম-দশম শ্রেণীর পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের। চিত্রটির মাধ্যমে কম্পনের ফলে কিভাবে শব্দ তৈরি হয় তার একটি ব্যবহারিক কাজ দেখানো হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকে চিত্রটির নিচের ক্যাপশন এবং মূল ছবি বিকৃত করে ধূমপান সম্পর্কিত কন্টেন্ট যোগ করা হয়েছে । প্রকৃতপক্ষে, টেক্সট বইতে ধূমপান সম্পর্কিত কোনো বার্তা দেয়া হয়নি । এসব কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল পোস্টগুলোকে ‘বিকৃত’ হিসেবে চিহ্নিত করছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh