Published on: April 2, 2023
সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একটি সংবাদের শিরোনাম, “কুড়িগ্রামে চলন্ত মোটরসাইকেলে বিষাক্ত সাপ, প্রাণে বাঁচল চালক।” সংবাদটি নিয়ে ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান শুরু করে। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ শেষে দেখা যায়, যে সাপটিকে বিষাক্ত বলা হয়েছে, সেটি সম্পূর্ণ নির্বিষ। এ ধরণের সাপের কামড়ে বা সংস্পর্শে এলে মানুষের কোনো ধরণের ক্ষতি হয় না। সঙ্গত কারণে, এমন সংবাদগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” সাব্যস্ত করেছে। |
সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:
একাধিক সংবাদ মাধ্যমে উল্লেখ্য করা হয়েছে, মোটরসাইকেলের উপরে অবস্থান করা সাপটি বিষাক্ত। সাপটি আসলেই বিষাক্ত কিনা সে বিষয়ে জানতে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ছবি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হয়। একাধিকবার রিভার্স ইমেজ সার্চ করে সাপটির পরিচয় জানা যায়।
Common Bronzback Tree Snake নামের সাপটির বৈজ্ঞানিক নাম DENDRELAPHIS TRISTIS. ANIMALIA নামের একটি প্রাণীবিদ্যা বিষয়ক ওয়েবসাইটে সাপটিকে নির্বিষ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। “This harmless snake prefers the tree tops to life on the ground.” অপরদিকে অন্য একটি সাইটে এই সাপটিকে Non-venomous হিসেবে উল্লেখ করেছে। “Dendrelaphis caudolineatus is a common species of colubrid snake known commonly as the striped bronzeback or bronze tree snake. It is erroneously called ‘garter snake’ in the Philippines. It is not venomous and it is the most commonly sold snake as a pet; however, they live longer in the wild.”
প্রসঙ্গত, সাপটির ছবি নিয়ে রিভার্স সার্চ করে কতটা সঠিক তথ্য পাওয়া গেলো সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সাথেও ক্রস-চেকিং করা হয়। ভেনম রিসার্চ সেন্টার, বাংলাদেশের গবেষণা সহকারী Rafiq Islam এর কাছে ফেসবুকে ভাইরাল ছবিটি পাঠানো হলে তিনি সাপটিকে নির্বিষ হিসেবে উল্লেখ করেন। সাপটির বৈজ্ঞানিক নাম DENDRELAPHIS TRISTIS চিহ্নিত করেন। অর্থাৎ রিভার্জ ইমেজ সার্চ করে প্রাপ্ত তথ্যের সাথে তাঁর প্রদানকৃত তথ্যের হুবহু মিল পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে এ বিষয়টি নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও প্রাণী গবেষক সজীব বিশ্বাসের সাথে আলোচনা করা হয়। তিনিও সাপটিকে নির্বিষ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
অর্থাৎ, এ বিষয়টি পরিষ্কার যে ভাইরাল সাপটি কোনোভাবে বিষধর/বিষাক্ত বা মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়।
এখন বিষাক্ত এবং বিষধর প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য জেনে নেয়া যাক।
বিষাক্ত হলো সেইসব প্রাণী বা বস্তু যাদের পুরো শরীরটাই বিষ দিয়ে ঢাকা, অর্থাৎ এদের সংস্পর্শে এলে বিষ দ্বারা আক্রান্ত হতে হবে। যেমন Poison dart frog নামে দক্ষিণ আমেরিকার বাহারী রঙের একপ্রকার ব্যাঙ আছে, যাদের শরীরের ত্বক অত্যন্ত বিষাক্ত। Poisonous হলো “বিষাক্ত” এর ইংরেজি প্রতিশব্দ। আবার ধরুন কোনো খাবারে বিষ মাখানো হয়েছে, সেই খাবারটাকে বলা হবে বিষাক্ত বা poisonous, কিন্তু ইনজেকশনের বিষ হল venom যেহেতু সেটা ইনজেক্ট করা লাগে। রেফারেন্স।
বিষধর হল সেইসব প্রাণী যারা নিজেদের শরীরের অভ্যন্তরে কোন গ্রন্থির মধ্যে বিষ ধারণ করে এবং দাঁত, হুল ইত্যাদির মাধ্যমে সেই বিষ inject করে। ইংরেজিতে যাকে venomous বলে (venom হলো সেই বিষ যা inject করতে হয়)। এজন্য সাপ, কাঁকড়াবিছে, মৌমাছি এদের বিষ হলো venom আর সেকারণে এদের ক্ষেত্রে বিষধর কথাটি প্রযোজ্য।
ভাইরাল সংবাদটিতে বলা হয়েছে, উৎসুক জনতা মোটরসাইকেলের কোটরে আশ্রয় নেওয়া সাপটিকে পরবর্তীতে মেরে ফেলেছে। অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের বশে মানুষ তবুও এভাবেই উপকারী অনেক সাপ মেরে ফেলছে। সাপ ভয়ংকর— নাটক ও সিনেমাসহ সব জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে এমন বার্তা প্রচার করা হয়। তাই কমবেশি অনেকের মধ্যে সাপ নিয়ে ভীতি কাজ করে। তাছাড়া সাপ দেখলেই মানুষ লাঠি খোঁজে। অথচ সাপ মারতে গিয়েই বেশির ভাগ সময় মানুষ এর কামড় খাচ্ছে। তবে প্রাণিবিজ্ঞানীদের মতামত অনুযায়ী, সাপ আমাদের জীববৈচিত্র্যের অন্যতম অংশীদার। পরিবেশ রক্ষায় এদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সাপ পরিচিতি ও এসম্পর্কে সচেতন থাকলে মানুষ সাপ দেখা মাত্রই ভয় পাবে না এবং সাপ মারতে লাঠি খুঁজবে না।
ফেসবুকে ভাইরাল সংবাদটিতে দেখতে পাওয়া সাপটি সম্পূর্ণ নির্বিষ। এই সাপের কামড়ে বা ছোঁয়াতে মানুষের কোনো প্রকার ক্ষতি হবার সম্ভাবনা নেই। বরং নির্বিষ এই সাপটি পরিবেশ রক্ষায় অন্যান্য প্রাণীদের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আলোচ্য সংবাদে সাপটিকে বিষাক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যা কিনা মিথ্যা একটি তথ্য।
সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এ ধরণের সংবাদগুলোকে “মিথ্যা” সাব্যস্ত করেছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান। |