সুবর্ণ আইজ্যাক বারী কি প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ত্বদের কাছ থেকে সম্মাননা কিংবা প্রফেসর বা বিজ্ঞানী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন?

Published on: November 21, 2021

‘নিউইয়র্ক এর কিংবা নিউইয়র্ক গভর্নরের সর্বোচ্চ সম্মান পেল বাংলাদেশি সুবর্ণ’-এমন একটি খবর ভাইরাল হয়েছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, খবরটি সত্য নয়। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত সূবর্ণ আইজ্যাক বারী নিউ ইয়র্কের গভর্নর এন্ড্রু কুমোর কাছ থেকে একটি সাধারণ প্রশংসাপত্র পেয়েছেন মাত্র। আবেদনের ভিত্তিতে নিউইর্কের যেকোনো বাসিন্দা এমন প্রশ্ংসাপত্র পেতে পারেন। তবে ‘সর্বোচ্চ সম্মান’ হিসেবে এর কোনো পরিচিতি নেই । অতীতেও সুবর্ণ আইজ্যাক বারি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছ থেকে কিংবা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরদের এর কাছ থেকে বিজ্ঞানী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন-এমন ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। সেসব চিঠির ভাষা থেকে বোঝা যায়, এগুলো সুবর্ণ-র তরফে তাদের কাছে লেখা চিঠির প্রতি-উত্তর মাত্র।

গুজবের উৎস

সাম্প্রতিক সময়ে  আপলোড করা কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে

২০২০ সালের অক্টোবর মাসে প্রথমবারের মত এ সংক্রান্ত খবর দেখা গিয়েছিল। পরবর্তী এক বছরে বিভিন্ন সময়েই এই খবরটি দেখা গিয়েছে। যেমন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে , এখানে, এখানে।

কি বলা হচ্ছে এই খবরে ?

 

অনলাইন পোর্টাল ম্যানচেস্টার সমাচার এ গত ৮ই নভেম্বর ২০২১ এ প্রকাশিত এই খবরে বলা হচ্ছে ,  বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী প্রফেসর, ৮ বছর বয়সী সুবর্ণ আইজ্যাক বারী নিউইয়র্ক স্টেট গভর্নরের কাছ থেকে পেলেন রাজ্যের সর্বোচ্চ সম্মান।

বাংলাদেশি বংশদ্ভূত সুবর্ণের পুরো নাম সুবর্ণ আইজ্যাক বারী। সুবর্ণের জন্ম ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল নিউ ইয়র্কের একটি বাঙালি পরিবারে। তার পিতা-মাতা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশী দম্পতি রাশেদুল বারী এবং সাহেদা বারী। আর ৮ বছর বয়সেই এই ছোট বিজ্ঞানী সুবর্ণ বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী অধ্যাপক হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসের ১৭ তারিখ এন্ড্রো কুওমো নিউইয়র্ক এর গভর্নর এর পক্ষ থেকে সুবর্ণ আইজ্যাক বারী কে এই স্বীকৃতি পত্র প্রদান করেন। এন্ড্রো কুওমো তার প্রতিনিধির মাধ্যমে সুবর্ণের বাড়িতে স্বীকৃতিপত্রটি পৌঁছে দেন এবং সুবর্ণকে গভর্নর এর সাথে দেখা করার আমন্ত্রণ জানান।

সুবর্ণকে সম্মাননা জানিয়ে এন্ড্রো কুওমো এরকম বলেন যে “সুবর্ণ এমন একজন ব্যক্তি, যিনি খুব অল্প বয়সেই বিশ্বে ইতিবাচক পার্থক্য তৈরি করেছেন।

২০২০ সালের অক্টোবর মাসে প্রকাশিত দৈনিক যুগান্তরের এই প্রতিবেদনে বলা হয়,

সুবর্ণের উদ্দেশে স্বীকৃতিপত্রে গভর্নর লিখেছেন– আপনি এমন একজন ব্যক্তি, যিনি খুব অল্প বয়সেই বিশ্বে ইতিবাচক পার্থক্য তৈরি করেছেন : গণিত পদার্থবিজ্ঞানের মাধ্যমে, সন্ত্রাসবিরোধী ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে, বইয়ের মাধ্যমে! আপনি বিশ্বজুড়ে চাইল্ড প্রডিজি হিসেবে পরিচিত।

ক্যুমো বলেন, গণিত পদার্থবিজ্ঞানে আপনার অর্জন প্রশংসার যোগ্য। একজন বিজ্ঞানী হিসেবে বিশ্বের বর্তমান ঘটনা সম্পর্কে আপনার বিস্ময়কর সচেতনতা এবং বিশ্ব শান্তি প্রচারের জন্য সেই সচেতনতা ব্যবহার করার ইচ্ছা আমাকে মুগ্ধ করে।

ভ্রাতৃত্ব, প্রজ্ঞা সহানুভূতির মধ্য দিয়ে আপনি নিজেকে গভীর চরিত্র এবং মূল্যবোধের সিঁড়ি হিসেবে আলাদা করেছেন। এবং আপনার কাজের জন্য নিউইয়র্কের পক্ষে আপনাকে সম্মানিত করতে পেরে আমি গর্বিত।’

স্বীকৃতিপত্রে গভর্নর লিখেছেন– আবারও সব নিউইয়র্কারের পক্ষ থেকে আমি আপনার প্রশংসা করছি। কারণ দ্য লাভ বইয়ের মাধ্যমে আপনি সব ধর্মের মধ্যে সম্প্রীতি এবং সহনশীলতা জাগানোর ক্ষেত্রে অগ্রগতি এনে দিয়েছেন। অভিনন্দন অব্যাহত সাফল্য এবং সুখের জন্য শুভকামনা।


২০২০ সালে প্রকাশিত দৈনিক সমকাল এর প্রতিবেদনে বলা হয় ,

সুবর্ণর উদ্দেশে স্বীকৃতিপত্রে গভর্নর লিখেছেন, ‘আপনি এমন একজন ব্যক্তি যিনি খুব অল্প বয়সেই বিশ্বে ইতিবাচক পার্থক্য তৈরি করেছেন- গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের মাধ্যমে, সন্ত্রাসবিরোধী ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে, বইয়ের মাধ্যমে! আপনি বিশ্বজুড়ে চাইল্ড প্রডিজি হিসেবে পরিচিত।’

তিনি আরও লেখেন, ‘গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে আপনার অর্জন প্রশংসার যোগ্য। একজন বিজ্ঞানী হিসেবে বিশ্বের বর্তমান ঘটনা সম্পর্কে আপনার বিস্ময়কর সচেতনতা এবং বিশ্বশান্তি প্রচারের জন্য সেই সচেতনতা ব্যবহার করার ইচ্ছা আমাকে মুগ্ধ করে। আপনার কাজের জন্য নিউইয়র্কের পক্ষে আপনাকে সম্মানিত করতে পেরে আমি গর্বিত।’

ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান

গভর্নর কুমো সুবর্ণকে যে চিঠি /সার্টিফিকেট অফ রিকগনিশন পাঠিয়েছিল, তার একটি ছবি পাওয়া গেল usaonline ওয়েব পোর্টালে

এই স্বীকৃতিপত্রটি অনুবাদ করার চেষ্টা করা যাক।


এখানে লিখেছে,

State of new York ,Executive Chamber, Certificate of Recognition Presented to Soborno Isaac Bari ,in honour of your vast history of accomplishments and remarkable efforts to trounce terrorism through your passion for math and science.

নিউইয়র্ক স্টেট, এক্সিকিউটিভ চেম্বার, সুবর্ণ আইজ্যাক বারীকে স্বীকৃতিপত্র দিচ্ছে, গণিত এবং বিজ্ঞানের প্রতি তার আবেগের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদকে প্রতিহত করার প্রচেষ্টার জন্য।

The empire state is proud to recognize individuals dedicated to helping others and making a difference in the world around them.

যেসব ব্যক্তিবর্গ অন্যদের সাহায্য করছে , এবং নিজেদের পরিমন্ডলে একটি পরিবর্তন সাধন করতে পেরেছে, তাদেরকে সম্মানিত করতে পেরে এই রাজ্য গর্বিত।

Known as a child prodigy, your achievements in math and physics are beyond worthy of commendation ,as is your astonishing awareness of current events and desire to use that awareness to promote world peace.

একজন প্রডিজি (অতি মেধাবী শিশু) হিসেবে পরিচিত  আপনি।  গণিত এবং বিজ্ঞানে আপনার অর্জন অত্যন্ত প্রশংসনীয়। একই সাথে, সমসাময়িক ঘটনাবলী সম্পর্কে আপনি সচেতন, এবং এই সচেতনতা বিশ্ব শান্তির জন্য তুমি কাজে লাগাতে চান।

Through your maturity, wisdom, and empathy you have distinguished yourself as a young leader of profound character and values, and I am proud to applaud you for your exemplary efforts.

প্রজ্ঞা, জ্ঞান এবং সহানুভূতি দিয়ে আপনি একজন তরুণ নেতা হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেছেন । এবং আপনাকে অভিনন্দন জানাতে পেরে আমি গর্বিত।

On  behalf of all New Yorkers, I commend you for the great progress you’ve made in helping stimulate collective harmony and tolerance amongst all people., and look forward to what will undoubtedly be a successful and influential future in which you hold a position of extraordinary leadership.

সকল নিউ ইয়র্ক বাসীর পক্ষ থেকে, আমি আপনাকে প্রশংসা করছি সকল মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি এবং সহনশীলতা জাগানোর ক্ষেত্রে বিশাল অগ্রগতি আনার জন্য । এবং সামনের দিনে আপনার অবিসংবাদিত সাফাল্য ,অনুকরণীয় ভবিষ্যত ও অসাধারণ  নেতৃত্ব আশা করছি।

Congratulations and best wishes for continued success and happiness.

অভিনন্দন জানাই , এবং আপনার জীবনে উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।

—-

দেখা যাচ্ছে, গভর্নর কুমো এখানে কোথাও সুবর্ণকে ‘বিজ্ঞানী’ বা Scientist হিসেবে উল্লেখ করেননি, যেমনটা সমকালের  অনুবাদে বলা হয়েছে।

এছাড়া, গভর্ণর চিঠির কোথাও তার ‘দ্য লাভ’ নামক বইয়ের উল্লেখ করেননি, যেমনটা যুগান্তরের অনুবাদে দেখা যাচ্ছে।

নিউ ইয়র্কের গভর্ণরের কাছ থেকে স্বীকৃতিপত্র পাওয়া কতটা কঠিন?

আমেরিকায় ক্ষমতাসীন কোনো শাসক বা প্রশাসকের কাছ থেকে শুভেচ্ছাবার্তা পাওয়া বা গ্রহণ করার একটা চল রয়েছে। এখানে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট এর কাছ থেকেও জন্মদিনের শুভেচ্ছা কিংবা কোনো বিশেষ উপলক্ষে শুভেচ্ছাবার্তা পাওয়ার অনুরোধ করা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব অনুরোধে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট অনুরোধকারীর অনুরোধ রাখেন। চিঠিগুলোর ভাষাগত সম্পাদনা সবক্ষেত্রে হয়ত তিনি নিজে করেন না, কিন্তু তার দপ্তর থেকেই এগুলো পাঠানো হয়।

আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে নিজের জন্মদিনের শুভেচ্ছা পাওয়ার কিছু উপায় দেখতে পাবেন এখানেএখানে কিংবা এখানে

এমনকি , বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকেও অনেকে চিঠি পান। পত্রপত্রিকায় এসব চিঠির খবরও প্রকাশিত হয়। যেমন-২০১৮ সালের ১২শে এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেঁজুতি নামের এক শিশুর চিঠির উত্তর দেন । সেঁজুতির দাদী কিছুদিন আগে মারা যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী তাকে স্বান্তনা দেন।

নিউ ইয়র্কের গভর্নর এন্ড্রু কুমোর কাছ থেকে সার্টিফিকেট অফ রিকগনিশন ও এভাবেই সংগ্রহ করা যায়।

আমেরিকার অনেক অঙ্গরাজ্যের গভর্নরের সরকারি ওয়েবসাইটেই এভাবে প্রশংসাপত্র সংগ্রহের আবেদন পত্র উন্মুক্ত করা আছে। অল্প কিছু তথ্য দিয়ে এই ফর্ম সাবমিট করলেই গভর্ণরের স্বাক্ষর করা সার্টিফিকেট অফ রিকগনিশন উক্ত ব্যক্তির বাসার ঠিকানায় হাজির হয়।

যেমন- আমেরিকার নেভাদা অঙ্গরাজ্যের গভর্ণরের কাছ থেকে প্রশ্ংসাপত্র পাওয়ার আবেদন করতে পারবেন এখান থেকে। টেনেসি  কিংবা কানসাস  অঙ্গরাজ্যের জন্য এখানে।

এসব গভর্ণরের স্বাক্ষর করা অনেকের সার্টিফিকেট অফ রিকগনিশন অনলাইনে, পাবলিক ডোমেইনেও  দেখা যায়। যেমন- এ্যাশলি এবং এ্যাডাম নামের দুইটা বাচ্চা মার্শাল আর্ট এ এ+ পেলে তাদেরকে এন্ড্রু কুমো একটি শংসাপত্র পাঠান ।

একটি ভিডিও তৈরির প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার থিওডোর পলিন এই প্রশংসাপত্র পেয়েছেন।


AAGG নামক সঙ্গঠনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এন্ড্র কুমো তাদেরকে একটি প্রশংসাপত্র পাঠান।

এমন বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে পাঠানো অনেকগুলো সার্টিফিকেট অফ রিকগনিশন অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে।

সবার ক্ষেত্রেই প্রশংসাসূচক বিভিন্ন বাক্যাংশ এবং শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

নিউ ইয়র্ক এর সর্বোচ্চ সম্মানিত পুরষ্কার কোনটি ?

গুগল এ Highest Honour of New York State’ লিখে সার্চ করলে Bronze Medallion সম্মাননার কথা পাওয়া যাচ্ছে।

উইকিপিডিয়া জানাচ্ছে, নিউ ইয়র্ক সিটি কর্তৃক বেসামরিক নাগরিকদের দেওয়া সর্বোচ্চ পুরষ্কার হল ব্রোঞ্জ মেডেলিওন পদক। নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র সেই ব্যক্তিদেরকে ব্রোঞ্জ মেডেলিওন পদক প্রদান করেন যারা “অসাধারণ নাগরিকত্ব এবং অসামান্য কৃতিত্ব” প্রদর্শন করেছেন।

বক্সার মোহাম্মদ আলি, সমাজ সংস্কারক মার্টিন লুথার কিং সহ অনেকেই অতীতে এই ব্রোঞ্জ মেডালিওন জিতেছেন । (বলাবাহুল্য, সুবর্ণ এই পুরষ্কার কখনো জেতেননি)।

এছাড়া, নিউ ইয়র্ক স্টেট লিবার্টি মেডেল নামের আরেকটি সম্মাননার কথা জানা যাচ্ছে, যেটি নিউইয়র্ক রাজ্যে বসবাসকারী নাগরিকদের জন্য সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক। এটি প্রদান করে নিউ ইয়র্ক রাজ্যের সিনেট। ২ বছর বয়সী একটি বাচ্চার জীবন বাচানোর জন্য ২০২১ সালে   Ryan Suitor নামক এক নিউ ইয়র্কবাসীকে এই লিবার্টি মেডেল প্রদান করা হয়।

সামরিক বাহিনীর মধ্যে সর্বোচ্চ সম্মাননা হচ্ছে  New York State Medal of Valor। ২০১৭ সালে দুর্ঘটনার কবলে পড়া একটি বিমানের পাইলটকে উদ্ধার করার কারনে ৪ জন ন্যাশনাল গার্ড সৈন্যকে এই New York State Medal of Valor প্রদান করা হয়।

এছাড়া নিউ ইয়র্কে শিক্ষা বিষয়ক প্রচুর এওয়ার্ড এবং স্কলারশিপ এর কথা জানা যাচ্ছে । যেমন -প্রতিবছর নিউ ইয়র্ক স্টেট টিচার অফ দি ইয়ার এওয়ার্ড , নিউ ইয়র্ক স্টেট আর্কাইভস স্টুডেন্ট রিসার্চ এওয়ার্ড ইত্যাদি ।

উইকিপিডিয়া থেকে আমেরিকার ফেডারেল সরকারের ২৬ ক্যাটাগরির সম্মাননার তালিকা পাওয়া যাচ্ছে। আমেরিকার ফেডারেল সরকারের দেওয়া সর্বোচ্চ সম্মাননা হল প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম ।


সুবর্ণ আইজ্যাক বারী কে নিয়ে পুরনো গুজব

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছ থেকে বিরল প্রতিভার স্বীকৃতি পেয়েছেন , কিংবা হোয়াইট হাউজে সুবর্ণ দাওয়াত পেয়েছেন– এমন ধরনের গুজব  অতীতে দেখা গিয়েছিল।

তবে চিঠিটা পড়লে দেখা যাচ্ছে, এটি একটি সাধারণ Recognition of accomplishment চিঠি ব্যতীত আর কিছুই নয়।

এই চিঠিতে সুবর্ণকে শুধুমাত্র উৎসাহ দিয়ে ভালভাবে লেখাপড়া করতে বলা হয়েছে। যে কোনো আমেরিকান নাগরিক হোয়াইট হাউজে চিঠি লিখে অনুরোধ করলেই আমেরিকান প্রেসিডেন্টের সই করা চিঠি/ Recognition of accomplishment তার বাড়িতে পৌছে যায় । সুবর্ণ আইজ্যাক বারীর অভিভাবকরা ঠিক এই কাজটিই করেছেন।

বিভিন্ন স্বনামধন্য কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর কিংবা অন্যান্য সেলিব্রেটিদের কাছ থেকে সুবর্ণের চিঠি পাওয়ার খবর মাঝে মাঝেই আলোচিত হয়। তবে এসব চিঠির ভাষা পড়ে বোঝা যায়, তারা সুবর্ণকে কেবলমাত্র জন্মদিনের শুভেচ্ছা কিংবা অন্যান্য সাধারন শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। তবে পত্র-পত্রিকায় এ ধরনের শুভেচ্ছাকে ‘স্বীকৃতিদান’ হিসেবে দাবি করা হয়েছিল।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী অর্থনীতির প্রফেসর অলিভার হার্ট এর এই চিঠি থেকে জানা যাচ্ছে, সুবর্ণ’র পক্ষ থেকে তাকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল এবং সুবর্ণর জন্মদিনের পার্টিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল । প্রফেসর অলভার হার্ট ভদ্রতাবশত জন্মদিনের শুভেচ্ছাসহ এই চিঠির উত্তর পাঠিয়েছেন।

২০১৮ সালে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট , ইতিহাসবিদ Drew Gilpin Faust,  সুবর্ণকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছিল।

পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটির দীর্ঘতম প্রেসিডেন্ট , পলিটিকাল সায়েন্স এর প্রফেসর Amy Gutmann এর ২০১৭ সালের এই চিঠি থেকেও জানা যাচ্ছে, সুবর্ণর পক্ষ থেকে তাকে চিঠি লেখা হয়েছিল, তিনি সেই চিঠির জবাব এ সুবর্ণকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর, পলিটিকাল সায়েন্টিস্ট প্রফেসর Louise Richardson এর চিঠি থেকেও জানা যাচ্ছে, সুবর্ণর পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে তাকে জন্মদিনের পার্টির দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। তিনি সেই আমন্ত্রণ সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করে চিঠির মাধ্যমে তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।

তবে পত্র পত্রিকায় দেখা যায়, এ ধরনের চিঠি/মেইল এর প্রতি উত্তরকেই ‘হার্ভার্ড/অক্সফোর্ড থেকে স্বীকৃতি পেলেন সুবর্ণ’ মর্মে প্রচার করা হয় । যে ধরনের খবর থেকে পাঠক বিভ্রান্ত হতে পারেন সহজেই।

এছাড়া, বিভিন্ন রাজনীতিবিদ কিংবা বিজ্ঞানীরা যে সুবর্ণ বা তার অভিভাবকের পাঠানো চিঠির প্রতি উত্তরে এই চিঠি পাঠিয়েছেন, সে কথাটাও প্রতিবেদনগুলোতে উল্লেখ করা হয়নি।

এছাড়া, বিভিন্ন খবরে সুবর্ণ আইজ্যাক বারীকে বিশ্বের সবচেয়ে কমবয়সী প্রফেসর হিসেবে দাবি করা হয়। তবে ফ্যাক্টওয়াচ পুরনো এই ফ্যাক্টচেকিং প্রতিবেদনে দেখিয়েছে, দাবিটি সত্য নয়। সুবর্ণ বিশ্বের সবচেয়ে কমবয়সী প্রফেসর নয়

এসব বিষয়ে সুবর্ণ কিংবা তার অভিভাবকের মন্তব্য জানার জন্য Bari Science Lab নামক আনভেরিফাইড ফেসবুক পেজ এ Factwatch এর পক্ষ থেকে ইনবক্স করা হলেও অপর প্রান্ত থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত

সুবর্ণ আইজ্যাক বারী নিউ ইয়র্কের সাবেক গভর্ণর অ্যান্ড্রু কুমোর কাছ থেকে একটি প্রশংসা পত্র পেয়েছিল ঠিকই, তবে এটি কোনো ধরনের ‘সর্বোচ্চ সম্মান’ নয়। শিশু-কিশোর কিংবা যে কোনো বয়সীই নিউ ইয়র্কের গভর্নরের পক্ষ থেকে এ ধরনের প্রশংসাপত্র পেতে পারেন যদি তিনি আবেদন করেন। তবে যেমনটি কিছু সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, তেমনিভাবে এই প্রশংসাপত্রে তাকে ‘বিজ্ঞানী’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি কিংবা তার বইয়ের প্রশংসা করা হয়নি কিংবা তাকে নিউইয়র্ক গভর্ণরের বাসভবনে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি । সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একই ধরনের আরেকটি প্রশংসাপত্র পাঠিয়ে শিশু সুবর্ণকে উৎসাহিত করেছিলেন, যে চিঠি নিয়েও বিভিন্ন গুজব রটেছিল।  অক্সফোর্ড ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন প্রফেসর অতীতে বিভিন্ন সময়ে সুবর্ণ’র অনুরোধের প্রেক্ষিতে তাকে চিঠি লিখে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন, যে শুভেচ্ছা বার্তাকে ‘বিজ্ঞানী হিসেবে স্বীকৃতি’ বলে ভুলভাবে দাবি করা হচ্ছিল।

সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ এ সংক্রান্ত খবরকে  ‘বিভ্রান্তিকর’  সাব্যস্ত করেছে।

সংশোধনী : সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এর জন্য এই প্রতিবেদন এর শিরোনাম আংশিক পরিবর্তন করা হয়েছে। পূর্বের শিরোনাম ছিল  নিউইয়র্কের সর্বোচ্চ সম্মাননা, হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণ , হার্ভার্ড ও অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের স্বীকৃতি – সুবর্ণ কি এর কোনোটা পেয়েছেন ?

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

Leave a Reply