সুবর্ণ আইজ্যাক বারী কি বিশ্বের সবচেয়ে কমবয়সী প্রফেসর ?

Published on: [August 11,2021]

‘বিশ্বের সব চেয়ে কমবয়সী প্রফেসর হয়ে রেকর্ড করলেন সুবর্ণ আইজ্যাক বারী’- মর্মে একটি খবর ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এই খবর দেখে অনেকে সুবর্ণকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন, অনেকে আবার বিস্মিত হচ্ছেন কিভাবে সুবর্ণ আইজ্যাক বারীর পক্ষে প্রফেসর হওয়া সম্ভব। ফ্যাক্ট ওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই দাবির কোনো সত্যতা নেই।

বিভ্রান্তির উৎস

মূলধারার কোনো সংবাদমাধ্যমে এই খবরটি প্রকাশিত না হলেও কয়েকটি অনলাইন পোর্টালে এটি প্রকাশিত হয়েছে। সেসব পোর্টালের খবর শেয়ারের মাধ্যমে ফেসবুকে এই খবরটি ছড়িয়ে পড়ে। এমন কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে , এখানে , এখানে, এখানে, এখানে , এখানে, এখানে , এখানে, এখানে, এখানে

দেশেরপাতা অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে কমবয়সী প্রফেসর হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক সুবর্ণ আইজ্যাক বারী। তার বয়স ৮ বছর ৭ মাস। গণিত, রসায়ন, পদার্থ বিজ্ঞানে নিজ দক্ষতার পাশাপাশি নিজের লেখা ‘দ্য লাভ’ গ্রন্থ ও সন্ত্রাসবিরোধী ক্যাম্পেইনের কারণে বিস্ময় বালক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে সুবর্ণ। তার জন্ম ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল, নিউইয়র্কে। সুবর্ণের বয়স দুই বছর থাকা-কালেই তার বাবা-মা তাদের সন্তানে মেধার উজ্জলতা আবিষ্কার করেছিলেন। তারা দেখলেন, তাদের শিশু-সন্তানটি দ্রুত এবং নির্ভুল-ভাবে পদার্থবিদ্যা, গণিত ও রসায়নের মত বিষয়ের জটিল সমস্যা সমাধান করতে পারছে।—–হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় সুবর্ণকে ২০১৮ সালে একজন বিজ্ঞানী এবং ২০২০ সালে একজন অধ্যাপক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

এই নিবন্ধে কোথাও তার স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি কিংবা ডিগ্রি সম্পর্কে কোনো কথা বলা হয়নি ।

দেশেরপাতার মতই একই খবর দেখা গেছে অল এক্সাম নোটিস, বিডি ডেইলি লাইভ, নিউজ ডিসকভার , ডেইলি সি নিউজ, জাস্ট নিউজ টাইম, ঢাকা নিউজ,এজেন্সি নিউজ, ইজব রেজাল্ট, ডেইলি নিউজ , বিডিস্কাই , বিডি ওয়ার্ল্ড অনলাইন,জেট নিউজ ,ঢাকা নিউজ  , অনলাইন২৪ নিউজ , উপার্জন সহ অনেকগুলো ওয়েব পোর্টালে।   

অনেকগুলো পোর্টালে খবরের সাথে নিম্নোক্ত ছবিটিও যোগ করা হয়েছে।

প্রফেসর এর সংজ্ঞা কি ?

ফ্রেঞ্চ শব্দ professeur এবং  ল্যাটিন শব্দ professor থেকে ইংরেজিতে Professor শব্দটি এসেছে। চতুর্দশ শতকে এটি প্রথম ব্যবহৃত হতে দেখা যায়।  ‘যে ব্যক্তি জ্ঞানের কোন একটি শাখায় পড়ান’-এমন অর্থ বুঝাতে প্রফেসর শব্দটি ব্যবহৃত হত।

বর্তমানে , প্রফেসর শব্দটি ব্যবহৃত হয় কোনো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে বিশেষজ্ঞ শিক্ষক বুঝাতে। মর্যাদা বুঝাতে Professor এর প্রথম বর্ণ P বড় হাতের অক্ষরে লেখা হয়।

আমেরিকা এবং কানাডায়, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএচডি  (বা সম মর্যাদার ডিগ্রি) ধারী সকল শিক্ষককেই প্রফেসর বলে।

অন্যদিকে,কমনওয়েলথ ভুক্ত দেশ এবং উত্তর ইউরোপের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পর্যায়ের শিক্ষকদেরই প্রফেসর (অধ্যাপক) বলে। প্রফেসর এর আগে Associate Professor (সহযোগী অধ্যাপক) , Assistant Professor (সহকারী অধ্যাপক) , Lecturer (প্রভাষক) ইত্যাদি পদ রয়েছে। এসব পর্যায় থেকে প্রফেসর পদে উন্নীত হতে হলে নির্দিষ্ট ডিগ্রি,গবেষণা অভিজ্ঞতা, একাধিক রিসার্চ আর্টিকেল প্রকাশ, এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ব্যাপী শিক্ষক হিসেবে চাকুরির অভিজ্ঞতার প্রায়োজন হয়।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের গত ৫ই এপ্রিল ২০২১ তারিখে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পিএইচডি ডিগ্রিধারী লেকচারাররা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ১২ বছর শিক্ষকতা করলে ধাপে ধাপে প্রফেসর পদে উন্নীত হবেন। পিএইচডি ডিগ্রি না থাকলে প্রফেসর হতে সময় লাগবে ২২ বছর।

এসকল ধাপ অতিক্রম করে না আসলে কোনো  স্কুল,কলেজ, কোচিং সেন্টার,বিশ্ববিদ্যালয় বা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো সাধারন শিক্ষককে কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে আগত বক্তাকে প্রফেসর বলার কোন উপায় নেই।


সর্বকনিষ্ঠ প্রফেসর : ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে,  বিশ্বের সবচেয়ে কমবয়সী প্রফেসর হিসেবে গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস এ নাম তালিকাভুক্ত রয়েছে আমেরিকান আলিয়া সবুর (Alia Sobur) এর নাম । ২০০৮ সালে ১৮ বছর ৩৬২ দিন বয়সে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার কনকুক বিশ্ববিদ্যালয়ে এডভান্সড টেকনোলজি বিভাগে পূর্ণকালীন অধ্যাপক মনোনীত হন।

১০ বছর বয়সে আলিয়া সবুর নিউইয়র্কের  Stony Brook University তে ভর্তি হন। ১৪ বছর বয়সে এখান থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ভর্তি হন  Drexel University তে। ১৭ বছর বয়সে ,২০০৬ সালে তিনি ড্রেক্সেল ইউনিভার্সিটি থেকে এম এস ডিগ্রি অর্জন করেন। তার গবেষণার ক্ষেত্র হচ্ছে ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স । রিসার্চগেটে আলিয়া সবুর এর ৬ টি গবেষণাপত্র পাওয়া যায়। তাকে নিয়ে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক টাইমস, ইংল্যান্ডের ইন্ডেপেন্ডেন্ট সহ একাধিক মূল ধারার সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

আলিয়া সবুর এর আগে বিশ্বের কনিষ্ঠতম প্রফেসর ছিলেন ইংল্যান্ডের গণিতবিদ কলিন ম্যাকলরিন (Colin Maclaurin)। তিনি ১৭১৭ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে স্কটল্যান্ডের University of Aberdeen বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের প্রফেসর মনোনীত হন। ১১ বছর বয়সে তিনি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন এবং ১৪ বছর বয়সে গ্লাসগো ইউনিভার্সিটি থেকে এম এ ডিগ্রি অর্জন করেন।

Colin Maclaurin - Alchetron, The Free Social Encyclopedia

পক্ষান্তরে সবর্ণ আইজ্যাক বারীর শিক্ষাজীবন সম্পর্কে কিছুই জানা যায়না। উইকিপিডিয়াতে তার বর্তমানে কোনো পেজ নেই। ফেক নিউজ / ভুল তথ্য দেওয়ার অভিযোগে উইকিপিডিয়া তার পূর্বের পেজটি ডিলিট করে দিয়েছে। ডিলিট সম্পর্কিত আলোচনা দেখতে পাবেন এখানে


২০১৮ সালে ‘বিজ্ঞানী’ হিসেবে স্বীকৃতি
?

অনলাইন নিউজ পোর্টালের খবরে কোনো তথ্যসূত্র ছাড়া দাবী করা হয়েছে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় সুবর্ণকে ২০১৮ সালে একজন বিজ্ঞানী এবং ২০২০ সালে একজন অধ্যাপক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে সুবর্ণ আইজ্যাক বারী সম্পর্কিত কোনো তথ্য পাওয়া গেল না।

২০১৮ সালের ২৭শে মে তারিখে প্রিয় ডট কমে ‘ছয় বছর বয়সী সুবর্ণকে স্বীকৃতি দিয়েছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়। এখানে বলা হয় , মাত্র ছয় বছর বয়সে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পেল সুবর্ণ আইজ্যাক। চলতি মাসের শুরুতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ড. ডিল গিলপিন ফাউস্টের কাছ থেকে স্বীকৃতি পায় সুবর্ণ। এবারই প্রথম বিশ্বের শীর্ষ এই বিশ্ববিদ্যালয় ছয় বছরের একটি ছেলেকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

সুবর্ণ’র বাবা রাশিদুল বারীর ২০১৮ সালের ২৪শে জুন তারিখে লেখা একটি কলাম টাইমস অফ ইজরাইল এর ব্লগে পাওয়া গেল। এখানে ,হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত স্বীকৃতিপত্রটির ছবি আপলোড করা হয়েছিল।

দেখা যাচ্ছে, ২০১৮ সালের ২রা মে তারিখে পাঠানো এই চিঠিটি কেবলমাত্র জন্মদিনের শুভেচ্ছাবার্তা ছাড়া আর কিছুই নয়। এখানে সুবর্ণকে বিজ্ঞানী হিসেবে স্বীকৃতি বা অন্য কোনো ধরনের স্বীকৃতিই দেওয়া হয়নি। ড্রিউ গিলপিন ফস্ট (Drew Gilpin Faust) এর স্বাক্ষর করা এই পত্রে সুবর্ণকে ষষ্ঠ জন্মদিনের শুভেচ্ছা এবং তার ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানানো হয়েছে।

এমন ধরনের শুভেচ্ছাবার্তা আমেরিকায় বিরল নয়। এখানে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট এর কাছ থেকেও জন্মদিনের শুভেচ্ছা কিংবা কোনো বিশেষ উপলক্ষে শুভেচ্ছাবার্তা পাওয়ার অনুরোধ করা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব অনুরোধে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট অনুরোধকারীর অনুরোধ রাখেন। চিঠিগুলোর ভাষাগত সম্পাদনা সবক্ষেত্রে হয়ত তিনি নিজে করেন না, কিন্তু তার দপ্তর থেকেই এগুলো পাঠানো হয়।

আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে নিজের জন্মদিনের শুভেচ্ছা পাওয়ার কিছু উপায় দেখতে পাবেন এখানে, এখানে কিংবা এখানে

এমনকি , বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকেও অনেকে চিঠি পান। পত্রপত্রিকায় এসব চিঠির খবরও প্রকাশিত হয়। যেমন-২০১৮ সালের ১২শে এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেঁজুতি নামের এক শিশুর চিঠির উত্তর দেন । সেঁজুতির দাদী কিছুদিন আগে মারা যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী তাকে স্বান্তনা দেন।

এমনিভাবে, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট এর কাছ থেকে একটি ৬ বছর বয়সী শিশুর জন্য জন্মদিনের শুভেচ্ছা বার্তা সংগ্রহ করা বেশ সহজসাধ্য কাজ হওয়ার কথা।

তবে ,এই জন্মদিনের শুভেচ্ছাবার্তাকে পরবর্তীতে ‘বিজ্ঞানী হিসেবে স্বীকৃতি’ বলে দাবি করা হচ্ছে।

২০২০ সালে ‘প্রফেসর’ হিসেবে স্বীকৃতি ?

২০২০ সালের ২৫শে অক্টোবর প্রাইমারি এডু ইনফো নামের একটি ওয়েব পোর্টালে সাড়ে আট বছর বয়সে বাংলাদেশি বালক হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হলেন শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়। এই খবরের প্রথম লাইনে বলা হয় , সুবর্ণ আইজ্যাক বারী,বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিস্ময়কর এক বালক হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।

এরপর ,হার্ভার্ড এর স্বীকৃতির ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য না দিয়ে সুবর্ণর জন্ম,বাল্যকাল এবং অন্যান্য নিউইয়র্কের মেয়রের কাছ থেকে স্বীকৃতির খবর জানিয়ে প্রতিবেদনটি শেষ করা হয়।

যথাযথ তথ্যসূত্র না থাকলেও এই খবরটি তখন ফেসবুকে ভাইরাল হতে দেখা যায়।

সুবর্ণর আনভেরিফাইড ফেসবুক পেজে, কিংবা ওয়েবসাইটে, কিংবা ইউটিউব চ্যানেলে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে প্রফেসর হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আর কোনো খবর পাওয়া গেল না।

২০১৭ সালে হার্ভার্ড ক্যাম্পাসে দাড়িয়ে তাকে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে একটি ভাষণ দিতে দেখা যায় একটি ভিডিওতে, তবে হার্ভার্ডের ক্লাসরুমে বা অফিসে কখনো দেখা যায় নি।

মুম্বাই ইউনিভার্সিটির সাথে সংযোগ

অনেকগুলো পোর্টালে মূল খবরের সাথে এই ছবিটা যোগ করা হয়েছে ।

গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেখা গেল, ২০২০ সালের ৫ই জানুয়ারি Bari Science Lab ইউটিউব চ্যানেল থেকে এই ছবির মুল ভিডিওটি আপলোড করা হয়।

কবে , কোন অডিয়েন্সের সামনে এই লেকচার অনুষ্ঠিত হয়েছিল,সেটার উল্লেখ না থাকলেও সুবর্ণকে এখানে পরিচয় দেওয়া হয়েছে , রুইয়া কলেজ এর ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে। ভিডিওর ক্যাপশনে তাকে Physics Prof. Soborno Isaac হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে।

উইকিপিডিয়া থেকে জানা যাচ্ছে, রামনারায়ন রুইয়া কলেজ ভারতের মুম্বাই ইউনিভার্সিটির এফিলিয়েটেড একটি কলেজ। এখানে জুনিয়র সেকশন এবং সিনিয়র সেকশন রয়েছে। এই কলেজ থেকে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট আন্ডারগ্রাজুয়েট এবং পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রি দেওয়া হয়।

Kidschaupal নামের একটি ওয়েব পোর্টাল এ প্রকাশিত নিবন্ধ এ বলা হয়েছে , ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে সুবর্ণ রুইয়া কলেজের প্রিন্সিপাল Dr. Anurshee Lokur এর কাছ থেকে স্বীকৃতি পেয়েছেন, এবং পরবর্তীতে তিনি এখানে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে যোগদান করেন।

বারি সায়েন্স ল্যাব এর ফেসবুক পেজে ২০২০ সালের ৫ই জানুয়ারি এই ছবি আপলোড করে ক্যাপশনে বলা হয়, আজ , রুইয়া কলেজের প্রিন্সিপাল, ডক্টর অনুশ্রী লোকুর সুবর্ণকে ‘প্রফেসর’ উপাধি দিয়েছেন এবং তাকে রুইয়া কলেজে ফিজিক্স ফ্যাকাল্টি হিসেবে যোগদানের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

অর্থাৎ , বোঝা যাচ্ছে, এখানে ডক্টর অনুশ্রী লোকুর শিশু সুবর্ণকে সৌজন্য বশত ‘প্রফেসর’ উপাধি দিয়েছেন অথবা তাকে প্রফেসর বলে ডেকেছেন । মৌখিকভাবে তিনি সুবর্ণকে উতসাহিত করার জন্য তাকে রুইয়া কলেজে ‘যোগদান করার’ কথা বলেছেন, নাকি আনুষ্ঠানিকভাবে এপয়েন্টমেন্ট লেটার দিয়ে তাকে চাকরি অফার করেছেন, সেটাও জানা যাচ্ছেনা।

একইদিন বারি সায়েন্স ল্যাব এর পেজ থেকে জানানো হয়, সুবর্ণ ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে রুইয়া কলেজে যোগদান করেছে ।

৫ই জানুয়ারি ইউটিউবে আপলোড করা ৫৬ মিনিটের এই ভিডিওতে সুবর্ণকে পদার্থবিজ্ঞানের বলবিদ্যা বিভাগের কয়েকটি সমস্যা সমাধান করতে দেখা যায়। তবে এটি একটি আনুষ্ঠানিক ক্লাস ছিল নাকি অনানুষ্ঠানিক সেমিনার জাতীয় কিছু ছিল, সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ক্লাসে স্টুডেন্টদের উপস্থিতি রেকর্ড করার কোনো কার্যকলাপ চোখে পড়েনি।

৫ই জানুয়ারি ২০২০ এর ক্লাসরুমে সুবর্ণর লেকচার বাদে অন্য কোনো দিনে সুবর্ণ’র কোনো লেকচার কিংবা প্রফেসর হিসেবে অন্য কোনো কর্মকান্ড দেখা যাচ্ছেনা। সব খবরে ৫ই জানুয়ারি ২০২০ এর ক্লাস/সেমিনার এর ছবিই ব্যবহার করা হচ্ছে।

৮ই জানুয়ারি ২০২০ তারিখে বারি সায়েন্স ল্যাব পেজ থেকে এই ছবি আপলোড করে বলা হয়, রুইয়া কলেজের সর্বোচ্চ সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে সুবর্ণকে।

একই ছবি ১০ই জানুয়ারি আপলোড করে বলা হয়, রুইয়া কলেজ থেকে সুবর্ণ তার প্রথম বেতন হিসেবে ১০ হাজার ডলার পেয়েছে। বলাবাহুল্য, ভারতীয় বেতনকাঠামোতে কোনো প্রফেসরের মাসিক বেতন ১০ হাজার ডলার হয় না।

রুইয়া কলেজের ওয়েবসাইটে ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে গিয়ে দেখা গেল , সেখানে মোট ১০ জন শিক্ষক আছেন।এদের মধ্যে এক জন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর এবং ৯ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর। এবং এদের মধ্যে সুবর্ণ আইজ্যাক বারীর নাম নেই।

উক্ত ১০ জনের প্রত্যেকেই কমপক্ষে এম এস সি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। অনেকে পিএইচডি কিংবা উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন। সুবর্ণ আইজ্যাক বারীর এসব কোনো ডিগ্রিই অর্জিত হয়নি।

সুবর্ন’র শিক্ষাগত যোগ্যতা

newsunzip নামের একটি ভারতীয় পোর্টালে গত ১৫ই জুন ২০২১ তারিখে প্রকাশিত জনৈক দীপিকা ভার্মার কলামে সুবর্ণ’র এডুকেশন হিসেবে নিউ ইয়র্ক স্কুল এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এখানে তিনি কোন গ্রেড পর্যন্ত পড়েছেন, কিংবা কোন ডিগ্রি নিয়েছেন, সেই তথ্যের উল্লেখ নেই।

গুগল সার্চে ‘নিউ ইয়র্ক স্কুল’ নামে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া গেল না। জানা গেল, ১৯৫০-১৯৬০ সময়ে নিউইয়র্কের স্থানীয় কবি,সাহিত্যিক,শিল্পীদের অনানুষ্ঠানিকভাবে ‘নিউ ইয়র্ক স্কুল’ নামে অভিহিত করা হত।

‍”লেটেস্ট বলিউড” নামের আরেকটি ভারতীয় পোর্টালে সুবর্ণকে নিয়ে লেখা আর্টিকেলে তার শিক্ষাগত যোগ্যতার কলামে Not Yet শব্দটা দেখা যাচ্ছে, অর্থাৎ তার এখনো কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা বা কোনো ডিগ্রি অর্জন হয়নি।

গ্লোবাল চাইল্ড প্রডিজি এওয়ার্ড এর ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ১৭ই জুলাই তারিখে সুবর্ণকে নিয়ে এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, সুবর্ণ’র বয়স ১০ বছর হলে সে প্রতিযোগিতামূলক SAT পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে এবং সেখানে ভাল স্কোর করলে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার জন্য চেষ্টা করবে।

টাইমস অফ ইজরাইলে তার বাবা ,রাশিদুল বারি’র লেখা ব্লগেও একই কথা জানা গেল।

অর্থাৎ, এখান্ থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, সে এখনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন করেনি, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, SAT কিংবা Scholastic Assessment Test হল আমেরিকার আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ের কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদনের একটা অন্যতম পূর্বশর্ত। যে কোনো বয়সের যে কেউ এই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে। এই SAT এর রেজাল্ট সহ আরো কিছু পূর্বশর্ত পূরণ করে বিভিন্ন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ভেদে SAT এর স্কোর কম বা বেশি দরকার হয়। সাধারণত SAT পরীক্ষায় ১৬০০ এর মধ্যে ১৫৮০ পেলে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া যায়।

জনমনে বিভ্রান্তি

সুবর্ণ আইজ্যাক বারীকে কনিষ্ঠতম প্রফেসর দাবি করায় নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বিভিন্ন রকম মন্তব্য করছেন। এমন কিছু মন্তব্য দেখুন

সিদ্ধান্ত

সুবর্ণ আইজ্যাক বারী বিশ্বের কনিষ্ঠতম প্রফেসর -এমন দাবির সপক্ষে যথেষ্ট জোরালো সাক্ষ্য-প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি । তাই ফ্যাক্টওয়াচ এই দাবিকে মিথ্যা হিসেবে সাব্যস্ত করছে।

স্ট্যাম্পিং সংশোধনী:
পরবর্তীতে পাওয়া সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আমরা এখন এই দাবিটিকে এখন “মিথ্যা” সাব্যস্ত করছি। অতীতে এটিকে “বিভ্রান্তিকর” স্ট্যাম্পিং করা হয়েছিল।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

Leave a Reply