ছয় ছাত্রনেতার উপর ভারতের ভিসা নিষেধাজ্ঞার খবরটি ভুয়া

মোহাম্মাদ আরাফাত

Published on: September 2, 2024

সম্প্রতি “দি মিরর এশিয়া” নামক একটি সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত খবরের বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, ভারত বাংলাদেশের ছয়জন ছাত্রনেতা’র উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই ছয়জন ছাত্রনেতা হচ্ছেন: নুরুল হক নুর, আখতার হোসেন, মাহফুজ আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, এবং নুসরাত তাবাসসুম। ভারত-বিরোধিতায় জনগণকে উসকে দেয়া এবং ভারতের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে তাদের উপর এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে বলে খবরে উল্লেখ করেছে দি মিরর এশিয়া। তবে, ভারতের সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই) বাংলাদেশের ছয়জন ছাত্রনেতা’র উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার খবরটিকে “ভুয়া খবর” বলে চিহ্নিত করেছে। পরবর্তীতে ডেকান হেরাল্ড, মিন্ট, ইন্ডিয়া টুডে এর মতো ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো পিটিআইকে উদ্ধৃত করে একই খবর প্রকাশ করেছে। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ দি মিরর এশিয়া’র খবরের দাবিটিকে “মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে। 

গত ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ এ দি মিরর এশিয়া’র প্রকাশিত “ছয় ছাত্রনেতার ওপর ভারতের ভিসা নিষেধাজ্ঞা” শিরোনামের খবরটিতে বলা হয়েছে, “ভারতবিরোধী জনতাকে উসকে দেওয়া ও ভারতের জাতীয় স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগ এনে বাংলাদেশের ছয় ছাত্রনেতা ও তাদের ঘনিষ্ঠজনদের ভিসা না দেওয়ার জন্য কালো তালিকাভুক্ত করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।” এই ছাত্রনেতারা হচ্ছেন: নুরুল হক নুর, আখতার হোসেন, মাহফুজ আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, এবং নুসরাত তাবাসসুম। দি মিরর এশিয়া’র এই খবরটিকে উদ্ধৃত করে সামাজিক মাধ্যমে একাধিক পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছে। এমন কয়েকটি পোস্টের নমুনা দেখবেন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে


তবে, বাংলাদেশের ছয় ছাত্রনেতার উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার খবরটিকে “ভুয়া” বলেছে ভারতের সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই)। তারা নয়া দিল্লির অফিসিয়াল তথ্যসূত্রের ভিত্তিতে খবরটিকে ভুয়া বলে চিহ্নিত করেছে। পরবর্তীতে পিটিআইকে উদ্ধৃত করে ডেকান হেরাল্ড, মিন্ট, ইন্ডিয়া টুডে এর মতো বেশকিছু ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশের ছয় ছাত্রনেতার উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার খবরটিকে ভুয়া বলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতের একজন অফিসিয়াল কর্মকর্তা দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছেন, ছাত্রনেতাদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের খবরটি ভুয়া এবং ভারত এ ধরনের নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেনি৷


উল্লেখ্য, বিশ্বাসযোগ্য সূত্র ব্যতীত খবর প্রকাশ করায় দি মিরর এশিয়ার প্রকাশিত বেশকিছু সংবাদ নিয়ে পূর্বে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিল। দি মিরর এশিয়ার ওয়েবসাইটটির উৎপত্তি সম্পর্কে জানতে গিয়ে আমরা দেখেছি, এটি “themirrorasia.net” নামক ডোমেইনের অধীনে গত ৩১ মে ২০২৪ এ রেজিস্ট্রার করা হয়েছিল, যার মেয়াদ আগামী ৩১ মে ২০২৫ এ শেষ হয়ে যাবে। অর্থাৎ, দি মিরর এশিয়ার এই ওয়েবসাইটটি একদমই নতুন। তাই এরকম একটি প্লাটফর্ম থেকে কোন বিশ্বাসযোগ্য সূত্র ছাড়া প্রকাশিত খবর সাবধানতার সাথে গ্রহণ করা উচিত।


অতএব, এই বিষয়টি এখন স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের ছয় ছাত্রনেতাদের উপর ভারতের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়ার খবরটি সঠিক নয়।

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ দি মিরর এশিয়া’র খবর এবং সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোকে মিথ্যা বলে সাব্যস্ত করছে।  

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh