ত্রিপুরায় মুসলমানদের উপর নির্যাতন নিয়ে ভাইরাল ভিডিওটি পুরনো

Published on: November 1, 2021

সম্প্রতি “ভারতের ত্রিপুরায় মুসলমানদের উপর নির্যাতন কেন? কষাই মুদি জবাব দে” ক্যাপশনে ৭ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে। ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধানে দেখেছে, ভিডিওটি সাম্প্রতিক নয়। মূল ভিডিওটি মূলত এবছর ২৭ মার্চ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নামক একটি দলের  “৫০তম স্বাধীনতা দিবসে বিক্ষোভরত জনতার উপর হামলা ও নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মিছিল” শীর্ষক ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিলের। সম্প্রতি ভারতের ত্রিপুরায় মুসলমানদের ওপর ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সাথে এই ভিডিও’র কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

৩০ এবং ৩১ অক্টোবর ২০২১ তারিখে উক্ত ভিডিওটি ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ থেকে শেয়ার হয়েছে। এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে।

৭ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের ভিডিওটির ২৬ সেকেন্ডে দেখা যায়, বিক্ষোভ মিছিলটির অগ্রভাগে যে ব্যানারটি রয়েছে সেখানে লেখা “গুলি করে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল”। বিক্ষোভ মিছিলটিতে অংশগ্রহণকারীদের স্লোগানের কথাগুলো ছিল “আমার ভাই শহীদ কেন? প্রশাসন জবাব চাই। পুলিশ দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।“ এসময়ে “হরতাল হরতাল” বলেও স্লোগান দিতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের।

পরবর্তীতে ব্যানারের দৃশ্যমান লেখাটির ধরে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, ভিডিওটি মূলত এবছর ২৭ মার্চ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নামক একটি দলের “৫০ তম স্বাধীনতা দিবসে বিক্ষোভরত জনতার উপর হামলা ও নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মিছিল” শীর্ষক ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিলের। ফেসবুক এবং ইউটিউবে উক্ত বিক্ষোভ মিছিলের দুটি ভিডিও পাওয়া গিয়েছে যেখানে সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দৃশ্যমান ব্যানারের মিল পাওয়া গেছে।


দৈনিক ইনকিলাবের একটি সংবাদ সূত্রে জানা গেছে,  ২৭ মার্চ ২০২১ (শনিবার) বিকেলে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে স্বাধীনতার ৫০তম স্বাধীনতা দিবসে বিক্ষোভরত জনতার উপরে হামলা ও নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলের পূর্ব ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই বলেন, “স্বাধীনতার ৫০তম সুবর্ণ জয়ন্তীতে মানবতার দুশমন মোদির আগমনে প্রতিবাদে জনতার উপর পুলিশ গুলি করে মাদরাসা ছাত্রসহ ৬জনকে হত্যা করে ৭১-এর ২৬ মার্চের ভয়াবহ তাণ্ডবের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। নিরীহ জনতাকে হত্যা করে সরকারের পতনঘণ্টা ত্বরান্বিত করেছে। মোদিকে খুশি করতেই সরকার স্বাধীনতা দিবসে গুলি করে মানুষ হত্যা স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।“

উক্ত সমাবেশে, সমাবেশে ৬ দফা দাবি ও ২ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। যার মধ্যে একটি ছিল, “সরকারের পুলিশ বাহিনীর নির্বিচার গুলিতে হাটহাজারীতে ৪ জন মাদরাসা ছাত্র এবং বি-বাড়িয়ার দু’জন মিছিলকারী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ঘোষিত দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা শান্তিপূর্ণ হরতাল কর্মসূচীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ পূর্ণ সমর্থন করছে এবং আগামী ১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাব সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।“

উল্লেখ্য যে, এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, দোকানপাট, মসজিদে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে।

উপরোক্ত তথ্যপ্রমাণ থেকে বিষয়টি স্পষ্ট, সম্প্রতি “ভারতের ত্রিপুরায় মুসলমানদের উপর নির্যাতন কেন? কষাই মুদি জবাব দে” ক্যাপশনে যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে তা এবছর ২৭ মার্চ এর। সম্প্রতি ভারতের ত্রিপুরায় মুসলমানদের ওপর সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সাথে এই ভিডিও’র বিক্ষোভ মিছিলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। পুরনো ভিডিও নতুন করে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ব্যবহার করায় ফ্যাক্টওয়াচ এটিকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

 

Leave a Reply