তুরিন আফরোজের পুরনো কল রেকর্ড নতুন করে ভাইরাল

Published on: May 25, 2022

সম্প্রতি ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের একটি কল রেকর্ড স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এসব পোস্টের ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে, তুরিন আফরোজ ২৫ কোটি টাকা ঘুষ দাবি করেছেন । উক্ত কল রেকর্ডের কোন তথ্যসূত্র বা সময় উল্লেখ করা হয়নি। অনেক পোস্টে কল রেকর্ডটা সাম্প্রতিক সময়ের বলে দাবি করা হয়েছে।

কিন্তু ফ্যাক্ট-ওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে কল রেকর্ডটি ২০১৭ সালের ১৮ই নভেম্বর, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ এবং ওয়াহিদুল হকের মধ্যকার। পুলিশ ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল ওয়াহিদুল হককে গ্রেফতারের পর উক্ত কল রেকর্ডটি জব্দ করে।

যেহেতু স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলো কোন তথ্যসূত্র বা সময় উল্লেখ করেনি, এবং টাকা পয়সা সম্পর্কিত কোনো কথা এই রেকর্ডে শোনা যায়নি , তাই ফ্যাক্ট ওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” হিসবে চিহ্নিত করছে।

গুজবের উৎস

ভাইরাল হওয়া কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখা্নে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

ফেসবুকের বাইরে ইউটিউবেও এই অডিওটা ছড়িয়ে পড়েছে।

 

এসব ভিডিওতে  ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ এবং  জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা-এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামী ওয়াহিদুল হকের ফোনালাপ শোনা যায়।

ফোনালাপের কিছু অংশের লিখিত রূপ এখানে দেয়া হলো-

হ্যালো সালাম আলাইকুম! ওলাইকুম আসসালাম! এটাকি মোহাম্মদ ওয়াহিদুল হক সাহেবের নাম্বার?

জ্বি বলছি আমি, কাকে চাচ্ছেন?

আমি আপনাকেই চাচ্ছি।

আমার নাম হচ্ছে তুরিন আফরোজ। বলেন…. তুরিন আফরোজ। জ্বি! আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটর।

 আপনার সাথে কখনো কি দেখা করা যাবে?

৫১ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ৩০ সেকেন্ড সময় পর্যন্ত কথোপকথনে বলা হয় “ আমি একটা জিনিস আপনাকে বলি, আপনি জানেন আপনি কতটুকু আমার সম্পর্কে চেনেন বা জানেন। আমি কখনো কোন মিথ্যা মামলা হাতে নিই না এবং মিথ্যাকে সত্য এবং সত্যকে মিথ্যা কাজ করা আমার হয় না। এপারেন্টলি কিছু জিনিস এপারেন্টলি আপনার নাম নিয়ে খুব ইয়ে হচ্ছে। আমি একবছর ধরে এটার তদন্ত করছি এবং লিগালি সব কিছু চেক করে দেখেছি।এখন আমরা একদম এন্ড পয়েন্টে আছি, যে, আপনাকে ওয়ারেন্ট ইস্যু করা— এখন জাস্ট মনে হইছে আমি এই অন্যায় করতে পারব না – আপনাকে আমার জানানো দরকার —

পরবর্তীতে তাদেরকে সাক্ষাৎ করার জন্য সময় এবং স্থান ঠিক করার কথা বলতে শোনা যায়।

স্যোশাল মিডিয়ার কিছু পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, তুরিন আফরোজ ২৫ কোটি টাকার জালিয়াতি করেছে এবং এই অডিওতে ২৫ কোটি টাকা ঘুষ দাবি করেছেন তুরিন আফরোজ।

তবে ৭ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের এই অডিওর কোথাও ২৫ কোটি টাকা, কিংবা নির্দিষ্ট কোনো অংকের টাকা সম্পর্কেই আলাপ শোনা যায়নি।

ফ্যাক্ট ওয়াচের অনুসন্ধান

২০১৯ সালের ১১ই নভেম্বর একুশে টিভির একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে,  রাজধানীর গুলশান থেকে ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা-এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ওয়াহিদুল হককে গ্রেফতার করে গুলশান পুলিশ। ওই সময় তার মোবাইল ফোনটিও জব্দ করে পুলিশ। সেই ফোন থেকেই তুরিন আফরোজের সাথে ওয়াহিদুল হকের ফোনালাপের রেকর্ড পাওয়া যায়। তদন্ত সংস্থার সিনিয়র সমন্বয়ক সানাউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, তাদের টেলিফোনে কথা হয় ২০১৭ সালের ১৮ ই নভেম্বর। এর পরে তুরিন আফরোজকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরের পদ থেকে অপসারণ করা হয়।

 

একুশে টিভির প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে,

তুরিন আফরোজকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর পদ থেকে অপসারণ করার আরো কিছু সংবাদ দেখুন এখানে, এখা্নে, এখানে

ভাইরাল হওয়া কয়েকটি পোস্টে দাবি করা হয়, তুরিন আফরোজ ২৫ কোটি টাকা ঘুষ নেন। তবে বাংলা ট্রিবিউনের ৩০শে নভেম্বর,২০১৯ সালের একটা প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে দেখা যাচ্ছে তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে ২৫ কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। কিন্তু তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে ২৫ কোটি টাকা লেনদেনের প্রমাণ তারা পায়নি।

বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে

তাছাড়া ভাইরাল হওয়া কয়েকটি ফেসবুক পোস্টে তুরিন আফরোজের সাথে বিচারপতি শামছুদ্দিন চৌধুরী মানিকের ছবি ব্যবহার করছে। কিন্তু তুরিন আফরোজের ভাইরাল হওয়া ফোনালাপটা ছিলো ওয়াহিদুল হকের সাথে।

ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ রংপুর ক্যান্টনমেন্টে পাঁচ’শ থেকে ছয়’শ মানুষকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। ২০১৯ সালের ১৭ই অক্টোবর এই মামলার বিচার শুরু হয়।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন গত ১১ই মে  “বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন” শীর্ষক শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। গণকমিশনের এই শ্বেতপত্রে ১০০০ মাদ্রাসা ও ১১৬ জন ওয়াজকারীর ব্যাপারে তথ্য-উপাত্ত যুক্ত করা হয়। এই গণকমিশন এর চেয়ারপার্সন হলেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং গণকমিশনের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ।

এই শ্বেতপত্র প্রকাশের পর থেকেই ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ এর পুরনো এই অডিও ক্লিপটি  ফেসবুকে নতুন করে ভাইরাল হতে দেখা যায়।

ভাইরাল হওয়ার পরে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ  বাংলাভিশন সহ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এর সাথে কথা বলেন। বাংলাভিশন এর ১৬ই মে তারিখে প্রকাশিত এই ইন্টারভিউতে তিনি জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল এর আইনের ৮২ নাম্বার ধারায় প্রত্যেক ট্রাইবুনালের প্রত্যেক প্রসিকিউটরই একজন তদন্তকারী অফিসার । কাজেই কোনো অপরাধীর বিরুদ্ধে প্রিলিমিনারি স্টেজে  কোনো অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে দায়ের করার আগে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় যে কিভাবে তদন্ত শুরু করা যায়। এটা শুধু এই একটা কেস কিংবা শুধু আমার ক্ষেত্রেই হয়নি, অন্যান্য প্রসিকিউটররাও এভাবে কাজ করেছেন।

তবে এই ইন্টারভিউতে ভাইরাল হওয়া  অডিওতে তিনিই (ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ) কথা বলেছেন নাকি এটা এডিট করা অডিও, কিংবা তিনি ওয়াহিদুল হকের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন কিনা, সেসব প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে গিয়েছেন।

যেহেতু পুরনো ভিডিওটাই সাম্প্রতিক সময়ে কোনো দিন-তারিখ উল্লেখ না করে প্রচার করা হচ্ছে, তাই অনেকেই এটাকে সাম্প্রতিক ঘটনা মনে করছেন । সাধারণ ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মন্তব্যে বিষয়টা ফুটে উঠছে।

পুরনো অডিও নতুন করে দিন-তারিখ ছাড়াই প্রচার করায়, ২৫ কোটি ঘুষ লেনদেনসহ  বিভিন্ন রকম ভুল এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য সংযোজন করার কারণে ফ্যাক্ট ওয়াচ এসব পোস্টকে বিভ্রান্তিকর  হিসেবে চিহ্নিত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

Leave a Reply