দোনেৎস্কে হাজার হাজার ন্যাটো সেনা বন্দি?

Published on: March 7, 2023

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে বলা হয়েছে, দোনেৎস্কে হাজার হাজার ন্যাটো সেনা বন্দী হয়েছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে এমন দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য-উপাত্ত কোথাও পাওয়া যায় নি। তাছাড়া ন্যাটোর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, ন্যাটো ইউক্রেনে কোনো সৈন্য মোতায়েন করেনি। কেননা ইউক্রেন এখনো ন্যাটো সদস্যভুক্ত দেশ নয়। ন্যাটো সদস্যভুক্ত দেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশকে ন্যাটো সরাসরি সৈন্য দিয়ে সাহায্য করে না। যে কারণে দোনেৎস্কে ন্যাটো সেনা বন্দি রয়েছে এমন দাবির কোনো ভিত্তি নেই।

কয়েকটি ভাইরাল পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

ন্যাটো বা NATO= North Atlantic Treaty Organization. যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালের এপ্রিলে প্রতিষ্ঠিত হয় এই জোট। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং আরও ৮টি ইউরোপীয় দেশসহ ১২ প্রতিষ্ঠাতা সদস্য একে অপরকে রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে রক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে উত্তর আটলান্টিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। ন্যাটো মূলত সামরিক সহযোগিতার জোট। ন্যাটো একটি যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি, যে চুক্তির আওতায় জোটভুক্ত দেশগুলো পারস্পরিক সামরিক সহযোগিতা দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।  এর প্রত্যেকটি সদস্য রাষ্ট্র তাদের সামরিক বাহিনীকে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখতে বদ্ধপরিকর।

ন্যাটোর ওয়েবসাইট দেখুন এখানে

বর্তমানে ন্যাটোর ৩০ সদস্য দেশ হলো— আলবেনিয়া, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া, কানাডা, ক্রোয়েশিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হাঙ্গেরি, আইসল্যান্ড, ইতালি, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, মন্টিনেগ্রো, নেদারল্যান্ডস, উত্তর মেসিডোনিয়া, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল ভিডিও বা পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়েছে, দোনেৎস্কে হাজার হাজার ন্যাটো সেনা বন্দী হয়েছে। এখন দোনেৎস্কের ভৌগলিক অবস্থান বা সাম্প্রতিক ইতিহাস জেনে নেওয়া যাক। ইউক্রেনের পূর্বে রাশিয়ার সঙ্গে সীমান্তবর্তী দোনেৎস্ক অঞ্চল ২০১৪ সালের পর থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে কিয়েভবিরোধী সশস্ত্র বিদ্রোহীরা। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে দোনেৎস্ক অঞ্চলকে একতরফাভাবে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। কিন্তু জাতিসংঘ থেকে এই রাষ্ট্র স্বীকৃতি পায় নি।

ন্যাটো কি দোনেৎস্ক অঞ্চলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে সৈন্য মোতায়েন করেছিল?

ন্যাটোর ওয়েবসাইট থেকে পূর্বে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি ফ্যাক্টচেক দেখুন এখানে

ন্যাটো নীতি ৫ অনুসারে ন্যাটোভুক্ত যেকোনো দেশের উপরে আক্রমণ মানে সরাসরি ন্যাটোর উপরে আক্রমণ করা। তবে যে দেশটি ন্যাটোভুক্ত নয় তার পক্ষে ন্যাটো সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হতে পারবে না। বর্তমানে ইউক্রেন ন্যাটোর অন্তভুক্ত নয়। যে কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো সরাসরি ইউক্রেনের পক্ষে সরাসরি সৈনি দিয়ে সাহায্য করছে না বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানা গেছে। USToday থেকে প্রকাশিত একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন দেখুন এখানে

সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল ভিডিওগুলোতে ন্যাটোবাহিনির বন্দি হওয়ার দাবির পক্ষে কোনো তথ্য-উপাত্ত দেয়া হয় নি। তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন ও ফ্যাক্টচেক রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, ন্যাটো ইউক্রেনকে সৈন্য দিয়ে সাহায্য করেনি। সেক্ষেত্রে ন্যাটোর সৈন্যবাহিনি দোনেৎস্ক অঞ্চলে বন্দি থাকার কোনো প্রশ্নই উঠে না।

সঙ্গত কারণে এমন দাবিগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” সাব্যস্ত করেছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh