“পক্ষপাতিত্বমূলক আম্পায়ারিং” ইস্যুতে মামলা করেছে বিসিবি? – মিথ্যা শিরোনাম

Published on: November 20, 2022

“বিশ্বকাপে টিম ইন্ডিয়ার পক্ষপাতিত্বমূলক আম্পায়ারিং ইস্যুতে মামলা করলো বিসিবি!!” শিরোনামে বেশকিছু পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার হতে দেখা যাচ্ছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে এই শিরোনামের কোন সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং জানা গিয়েছে যে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে বাজে আম্পায়ারিং এর ব্যাপারে আইসিসির কাছে অভিযোগ করেছে বিসিবি।

“বিশ্বকাপে টিম ইন্ডিয়ার পক্ষপাতিত্বমূলক আম্পায়ারিং ইস্যুতে মামলা করলো বিসিবি!!” শিরোনামের কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখ, এখ, এখ, এখ, এবং এখে।

উক্ত শিরোনামটির সত্যতা যাচাই করতে আমরা অনুসন্ধান করে দেখেছি যে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে আয়োজিত আইসিসি’র সভায় টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে বাজে আম্পায়ারিং নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এবং পরবর্তীতে যেন এরকম বাজে সিদ্ধান্তের শিকার হতে না হয় সেই ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে সভায়। দেখুন সময় িউজ িি এবং িউজ এর সংবাদ।

 

এদিকে, রবআপড২৪.কম, এনআরবিি.একসওয়ইজ, এবং িউজটি.কম নামক কিছু অখ্যাত নিউজ পোর্টাল এ দেখা যায় তারা আইসিসি’র কাছে বিসিবির অভিযোগ এর সংবাদটি পুরোপুরি কপি করেছে সময় নিউজ টিভির সংবাদটি থেকে এবং শিরোনামে জুড়ে দিয়েছে “বিশ্বকাপে টিম ইন্ডিয়ার পক্ষপাতিত্বমূলক আম্পায়ারিং ইস্যুতে মামলা করলো বিসিবি।” স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে শিরোনামটি মিথ্যা।

উল্লেখ্য, গত ২রা নভেম্বর, ২০২২ তারিখে ওভালের এডিলেডে অনুষ্ঠিত হওয়া বাংলাদেশ-ভারত টি-টুয়েন্টি ম্যাচে ভারতীয় ক্রিকেটার ভিরাট কোহলির বিরুদ্ধে ফেক-ফিল্ডিং এর অভিযোগ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের পক্ষ থেকে এবং মাঠে থাকা আম্পায়ারকে বিষয়টি জানানো হলে আম্পায়ার জানান তিনি এটি খেয়াল করেননি। এছাড়া, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ম্যাচ শেষে অভিযোগ জানানো হয় যে ব্যাটসম্যানদের বৃষ্টির পর ভেজা মাঠে খেলতে বাধ্য করেছে আম্পায়াররা। ম্যাচ শেষে আম্পায়ারদের এই সিদ্ধান্ত সমালোচিত হয় এবং বিসিবি এই ব্যাপারে আইসিসি’র কাছে অভিযোগ করবে বলে জানায়।

বাংলাদেশ দল আম্পায়ারিং ইস্যুতে যে দুটি অভিযোগ করেছে সে ব্যাপারে তারা মামলা করতে পারবে কিনা এটি অনুসন্ধান করতে আমরা ক্রিকেটের কিছু আইন পড়ে দেখেছি। প্রথম অভিযোগটি ছিলো ভিরাট কোহলির ফেক-ফিল্ডিং এর ব্যাপারে আম্পায়ারকে জানানো হলেও আম্পায়ার জানান তিনি ব্যাপারটি খেয়াল করেননি। ি ৪১ আইন ৪১.৫ ৪১.৫.১ এবং ৪১.৫.২ উপধ বলা আছে কোন ফিল্ডার যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করা, প্রতারণা করা, কিংবা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে তাহলে তা অন্যায্য বলে গণ্য হবে এবং ফিল্ডার এগুলো ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে করেছেন কিনা সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন মাঠে দায়িত্বরত আম্পায়ার। আম্পায়ার যদি মনে করেন ফিল্ডার ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করা, প্রতারণা করা, কিংবা বাধা দেওয়ার চেষ্টা ইচ্ছাকৃতভাবে করেছে তাহলে তার শাস্তিস্বরূপ ব্যাটিং সাইডে অতিরিক্ত পাঁচ রান যোগ হবে। বাংলাদেশ দলের দ্বিতীয় অভিযোগটি ছিলো বৃষ্টির পর ব্যাটসম্যানদের ভেজা মাঠে খেলতে বাধ্য করেছেন ম্যাচ আম্পায়াররা। ি আইন ২.৭ ২.৭.৪ উপধ বলা আছে আম্পায়ারদ্বয় যদি মনে করেন মাঠ খুবই পিচ্ছিল অথবা ভেজা যা কিনা বোলার, ফিল্ডার কিংবা ব্যাটসম্যানের জন্য অনুকূল নয়, তাহলে এই অবস্থায় খেলা অব্যাহত রাখা বিপজ্জনক এবং অযৌক্তিক বলে বিবেচিত হবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশ দল যে দুটি বিষয়ে অভিযোগ করেছে সেগুলো ক্রিকেট আইন অনুযায়ী খুবই প্রাসঙ্গিক এবং সুস্পষ্ট।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে বাংলাদেশ দল এর পরিপ্রেক্ষিতে মামলা করতে পারবে কিনা? ি আইন ২.৬ বলা আছে আম্পায়ারদ্বয় খেলায় ন্যায্যতা এবং অসাধুতা বিচারের একমাত্র বিচারক (sole judges) হবেন। এছাড়াও, ি আইন ২.১১ এবং ২.১২ বলা আছে কোন বিষয়ে মতভেদ কিংবা বাদানুবাদ হলে আম্পায়রদ্বয় সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন এবং একজন আম্পায়ার তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে পারেন যদি তিনি মনে করেন তার এই সিদ্ধান্তটি খুব তাড়াতাড়ি নেওয়া হয়েছে এবং তা ২.৬ বিরূদ্ধে যায় না। এগুলো ছাড়া, একজন আম্পায়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবেন সেটিই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। উপরিউক্ত আইনগুলো পড়লেই বুঝা যাচ্ছে আম্পায়ারদ্বয় মাঠের সব ব্যাপারে একমাত্র বিচারক এবং তাদের নেয়া যে কোন সিদ্ধান্তই একমাত্র এবং চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়। ক্রিকেট আইনেই একজন আম্পায়ারকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার বা তার নেওয়া সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত – এই ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে মাঠে একজন আম্পায়ার তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানালে এবং কোন দলের কাছে তা পক্ষপাতিত্বমূলক মনে হলে সেটা তারা ম্যাচ নিয়ন্ত্রক বা আইসিসিকে জানাতে পারে কিন্তু এই ব্যাপারে তারা মামলা করতে পারবে না যেহেতু আম্পায়ারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা আছে।

অতএব, আমাদের অনুসন্ধানে “পক্ষপাতিত্বমূলক আম্পায়ারিং ইস্যুতে বিসিবি মামলা করেছে” এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং আমরা জানতে পেরেছি যে বিসিবি বাজে আম্পায়ারিং এর ব্যাপারে আইসিসি’র কাছে অভিযোগ করেছে শুধু।

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে আমরা এই সিদ্ধান্তে এসেছি যে উক্ত শিরোনামটি “মিথ্যা।”

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh