অদ্ভূত আকৃতির এই সবজিটি আসলে লাউ, তরমুজ নয়

Published on: November 14, 2021

“রাজহাঁস তরমুজ” নামে একটি বস্তুর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে, এবং বলা হচ্ছে এর বেশিরভাগ ব্রাজিলে জন্মায়। ইন্টারনেট অনুসন্ধানে জানা যায়, এটি তরমুজ নয়, লাউ (Bottle gourd)। বেশিরভাগ ব্রাজিলে জন্মানোর তথ্যটিও ভুল, পৃথিবীর বেশিরভাগ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় এটি জন্মে।

বিভ্রান্তির উৎস

‘রাজহাস তরমুজ, ব্রাজিলে চাষ হয়’ – এমন শিরোনামে একটি ফেসবুক পোস্ট ব্যক্তিগত প্রোফাইল এবং বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার করা হচ্ছে গত ২৫ অক্টোবর,২০২১ তারিখ থেকে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ,   এখানে , এখানে , এখানে

এই বস্তুটি কি আসলেই তরমুজ?

এসব ছবির নিচে কমেন্টেই অনেকে প্রতিবাদ করে জানাচ্ছেন, এগুলো তরমুজ নয়, বরং কদু/লাউ।

ইমেজ সার্চ করে দেখা গেল, অনলাইনে বিভিন্ন জায়গায় এই সবজিটাকে  gourd বা  লাউ হিসেবে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এমনকি কেনাবেচার বিভিন্ন সাইটে আলোচ্য ভাইরাল ছবিটি ব্যবহার করে এই  লাউ এর বীজ বিক্রি করা হচ্ছে। ( যেমন- এখানে , এখানে, এখানে) সবাই একে সবজি এবং gourd (লাউ) হিসেবেই উল্লেখ করছে। কেউই তরমুজ এর কথা বলছে না।

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে,  তরমুজ হচ্ছে একটি মিষ্টি ফল , যার বৈজ্ঞানিক নাম Citrullus lanatus .



অন্যদিকে ছবির বস্তুটি কোনো ফল নয়, এটি একটি সবজি ,যার বৈজ্ঞানিক নাম Lagenaria siceraria । লাউ কিংবা কদু নামে এটি অধিক পরিচিত ।

এটি ‘Cucurbitaceae’ বর্গভুক্ত, । এই বর্গের অধীনে পড়ে বিভিন্ন ধরনের লাউ, কুমড়া, শসা, তরমুজ-জাতীয় সবজি ও ফল। এই প্রজাতি বিভিন্ন আকারে বোতলের মতো হয় বলে এমন নামকরণ করা হয়েছে। অনেক সময় এই বোতলের আকার গলা নুইয়ে পড়া রাজহাঁসের আকৃতি নেয় বলে একে অনেক সময় Gooseneck gourd, Swan gourd নামেও অভিহিত করা হয়। বাংলায় আমরা একে “রাজহাঁস লাউ” বলতে পারি।

ভাইরাল হওয়া পোস্টে ‘এটি ব্রাজিলে জন্মায়’ বলে দাবি করা হলেও,  specialtyproduce.com জানাচ্ছে, এর আদি উৎপত্তি উত্তর মেক্সিকো এবং উত্তর আমেরিকার পূর্বাঞ্চল । পরবর্তীতে এটা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি ইংল্যান্ড এবং ইটালির ওয়েবসাইটে  এই সবজির বীজ বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। ভারতে এই রাজহাঁস লাউ এর তৈজসপত্র বানিয়ে বিক্রি করতেও দেখা গেছে।

উইকিপিডিয়া থেকে জানা যাচ্ছে, লাউ/কদু সবজিটি বিশ্বের প্রায় সব এলাকাতেই চাষ হয়। এলাকাভেদে এটা calabash, bottle gourd, white-flowered gourd, long melon, birdhouse gourd, New Guinea bean ,Tasmania bean সহ অনেক স্থানীয় নামেই পরিচিত। স্থানীয় জলবায়ু এবং আনুষঙ্গিক বিভিন্ন প্রভাবে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন আকৃতির কদু দেখা যায়। পেরুতে ১৩০০০-১১০০০ খ্রিস্টপূর্বে, এবং থাইল্যান্ডে ১১০০০-৬০০০ খ্রিস্টপূর্বে এই লাউয়ের প্রজাতির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। কলম্বাস আমেরিকা গমনের পূর্বেই এটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।

বিভিন্ন আকৃতির এই লাউগুলো কাঁচা অবস্থায় সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়। তবে বিভিন্ন অঞ্চলে পেকে যাওয়ার পর লাউগুলো নানান কাজে ব্যবহার করার চল রয়েছে। এর বোতল-আকৃতিকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করা হয় বোতল, পাত্র, বাসনকোসন, তামাক খাবার পাইপ, গহনা, বাদ্যযন্ত্র এবং বাড়ির সৌন্দর্য্ বৃদ্ধির জন্য পাখির বাসা।

বাংলাদেশের জনপ্রিয় বাদ্যযন্ত্র ‘একতারা’ তৈরি হয় লাউয়ের পাকা খোল ব্যবহার করে। একতারা হিসেবে এই লাউ এর ব্যবহার অনেক কবিতা/গানেও উল্লেখ রয়েছে। যেমন: সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী । তবে তরমুজ এর পাকা খোল দিয়ে এমন কোনো বাদ্যযন্ত্র বা তৈজসপত্র বানানো সম্ভব নয়।

ফলে এটা পরিষ্কার যে আলোচ্য বস্তুটি তরমুজ নয়, বরং লাউ বা কদুর  একটি প্রজাতি।  লাউ এবং তরমুজের বর্গ এক হলেও তাদের গণ এবং প্রজাতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।  ব্যবহারিক ক্ষেত্রেও  তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন । একটা হল ফল, আরেকটা হল সবজি । তাই রাজহাস আকৃতির লাউকে তরমুজ বলে অভিহিত করাটা ভুল। ফ্যাক্টওয়াচ একে  “মিথ্যা” সাব্যস্ত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

Leave a Reply