চাঁদের নিচে শুক্র গ্রহের অবস্থানকে কি কোরআনের ২১ নম্বর সুরায় “কেয়ামতের আলামত” বলা হয়েছে?

Published on: April 3, 2023

গত ২৬শে মার্চ সন্ধ্যায় শুক্র গ্রহ গ্রহণের পর এই ঘটনাকে সম্ভাব্য ‘কেয়ামতের আলামত’ দাবি করে এর প্রমাণ হিসেবে পবিত্র কোরআনের একটা আয়াত উদ্ধৃত করে অনেকেই ফেসবুকে পোস্ট দেন । ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেয়া যায়, যে আয়াতটিকে “কেয়ামতের আলামত” এর প্রামাণ্য দাবি করা হচ্ছে, সে আয়াতে এমন ধরনের কোনো বক্তব্যই ছিল না। ভাইরাল পোস্টগুলোতে “কেয়ামতের আলামত” দাবি করে বাংলা বাক্যটিকে কোরআনের ২১ নম্বর সূরার ১ম আয়াতের অনুবাদ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু তার সাথে মূল কোরআনের একাধিক অনুবাদ মিলিয়েও কোনো ধরনের সাদৃশ্য পাওয়া যায়নি। সঙ্গত কারণে এই পোস্টগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।

গুজবের উৎস

ভাইরাল কয়েকটি পোস্ট দেখুতে পাবেন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে


ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান

এখানে ২১:১ অর্থাৎ আল কোরআনের ২১ নম্বর সূরার ১ নম্বর আয়াত হিসেবে আরবিতে লেখা হয়েছে-

اِقۡتَرَبَلِلنّاسِ حِسَابُہُمۡ وَہُمۡ

ٱقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ وَهُمْ فِى غَفْلَةٍۢ مُّعْرِضُونَ

এর বাংলা অনুবাদ হিসেবে দাবি করা হয়েছে,

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,

তোমরা যদি চাঁদের সঙ্গে অন্য কোন গ্রহের খুব কাছাকাছি অবস্থান দেখতে পাও। তবে তোমরা ভেবে নিও কেয়ামত অতি নিকটে।

এটি যেহেতু কোরআনের আয়াত, তাই এটিকে সরাসরি আল্লাহর বাণী বলেই মুসলমানরা বিশ্বাস করেন।  কেবলমাত্র হাদিসের বর্ণনার ক্ষেত্রেই “রাসুলল্লাহ বলেছেন” এমন বাক্যাংশ ব্যবহার করা যায়, কোরআনের আয়াতে নয়।

২১ নম্বর সূরার নাম সূরা আল -আম্বিয়া। কোরআনের হার্ডকপি ,এবং অনলাইনে সহজলভ্য একাধিক সংস্করণ ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে , সম্পূর্ণ আয়াতটি ফেসবুকের এসব স্ট্যাটাসে উদ্ধৃত করা হয়নি। সম্পূর্ণ আয়াতটি হল, ٱقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ وَهُمْ فِى غَفْلَةٍۢ مُّعْرِضُونَ

এবার আসা যাক অনুবাদের ব্যাপারে। অনলাইনে সহজলভ্য একাধিক অনুবাদ ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, এই আয়াতের অনুবাদে চাঁদ বা অন্য গ্রহের কোনো উল্লেখ নেই।

যেমন- কুরান ডট কম এর এই অনুবাদে রয়েছে-

মানুষের হিসাব গ্রহণের কাল ক্রমশঃ ঘনিয়ে আসছে কিন্তু তারা গাফিলতিতে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে।

আস্ক ইসলাম পিডিয়া ডট কম এর এই অনুবাদ এমন-

মানুষের হিসাব-কিতাবের সময় নিকটবর্তী; অথচ তারা বেখবর হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

সূরা কুরান ডট কম এর অনুবাদে বলা হয়েছে –

মানুষের হিসাব-কিতাবের সময় নিকটবর্তী; অথচ তারা বেখবর হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

কুরান ডট কম এর ইংরেজি অনুবাদ টা এমন-

˹The time of˺ people’s judgment has drawn near, yet they are heedlessly turning away.

মাই ইসলাম ডট অর্গের অনুবাদে বলা হয়েছে,

[The time of] their account has approached for the people, while they are in heedlessness turning away.

এছাড়া, গুগল ট্রান্সলেটর এর সাহায্যে আয়াতের শবগুলোকে একত্রে , এবং পৃথকভাবে অনুবাদ করার চেষ্টা করেও এখানে চাঁদ বা তারা সম্পর্কিত কোনো শব্দ পাওয়া যায়নি।

এই ভুল অনুবাদটা  ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পরে অনেক বিজ্ঞ আলেমের দৃষ্টিগোচর হয়। অনেকে ফেসবুকে বা ওয়েবসাইটে এই ভুল আয়াত সম্পর্ক অনলাইন ব্যবহারকারীদের সতর্ক করেছেন।

যেমন- তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার এর মুখপত্র, আহলে হক মিডিয়া ডট কম এর এই নিবন্ধে  বলা হয়েছে,

 প্রশ্নোক্ত লেখায়  প্রথমে হাদীস নামে যা উদ্ধৃত করা হয়েছে। সেটি আদৌ হাদীস নয়। বরং এটি কুরআনের একটি আয়াত। সূরা আম্বিয়ার প্রথম আয়াত। যা  হলো:

اقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ مُّعْرِضُونَ [٢١:١]

উক্ত আয়াতের তরজমা হলো: “মানুষের হিসাব-কিতাবের সময় নিকটবর্তী; অথচ তারা বেখবর হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। [সূরা আম্বিয়া-১]”

 অথচ পোষ্টকারী হাস্যকরভাবে উক্ত আয়াতের তরজমায় লিখেছে:

 অর্থ:- রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমরা যদি চাঁদের সঙ্গে অন্য কোন গ্রহের খুব কাছাকাছি অবস্থান দেখতে পাও। তবে তোমরা ভেবে নিও কেয়ামত অতি নিকটে

এর মানে পোষ্টকারী কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে নিতান্তই অজ্ঞ ও জাহিল। এমন ব্যক্তিদের কিছুতেই কোন বিজ্ঞ আলেমের পরামর্শ ছাড়া এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে পোষ্ট করা সমীচিন নয়।

সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ এই ভুল অনুবাদ সম্বলিত ফেসবুক পোস্টগুলোকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে ।


আরো পড়তে পারেন- চাঁদ ও শুক্রের বিরল গ্রহণ নিয়ে বিভ্রান্তিকর দাবি

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh