Published on: August 21, 2022
সম্প্রতি “ইসরাইলের নাগরিকদের ফিলিস্তিনি পাসপোর্টে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে হবে” শীর্ষক একটি তথ্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু অনুসন্ধানে এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরং দেখা যাচ্ছে যে, এই প্রথম ইসরাইলিদের কাতারে যেতে কোনো বিদেশী পাসপোর্টের প্রয়োজন হবে না। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এবং ইসরাইলের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাতে জানা যায়, বাকি বিদেশীদের মত ইসরাইলিরাও প্রস্তাবিত নিয়ম মেনে কাতার বিশ্বকাপ দেখতে যেতে পারবেন। |
এমন কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
এসব পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, “ইসরাইলিদেরকে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে হলে ফিলিস্তিনি পরিচয় দিয়ে আসতে হবে। অর্থাৎ পাসপোর্টে দেশ হিসেবে ফিলিস্তিনকে উল্লেখ করতে হবে। ইজরায়েলী হিসেবে কাতার বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করা যাবেনা”। সূত্র হিসেবে কাতারের কথা উল্লেখ করা হয়।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
উপরোক্ত দাবিতে সূত্র হিসেবে কাতারের নাম উল্লেখ থাকলেও কাতারের অফিসিয়াল কোনো মাধ্যম থেকে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ডের সাহায্যে অনুসন্ধান করা হলে কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেগুলোতে পরিষ্কার বলা হচ্ছে, ইসরাইলের নাগরিকরা কাতার বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এর মধ্যে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের “Israelis to be allowed into Qatar for World Cup, officials say” শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে ইসরাইলের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এক বিবৃতিতে বলা হচ্ছে, ইসরাইলের নাগরিকদের কাতার বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ নিয়ে ফিফার সাথে একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। যার ফলে দেশটির নাগরিকেরা বিশ্বকাপ দেখতে কাতার যেতে পারবেন।
ভারতীয় গণমাধ্যম WION এর এক প্রতিবেদনেও একই তথ্য দেওয়া হয়। ইসরাইলের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী “Yair Lapid” এর একটি টুইটের বরাতে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। ০৯ জুন, ২০২২ এ প্রকাশিত এই টুইটে তিনি বলেন, কাতার বিশ্বকাপে ইসরাইলিরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন। “middleeasteye.net” এর একটি প্রতিবেদন থেকে টুইটটি খুঁজে পাওয়া যায়।
הישג מדיני שממלא את לב האוהדים! לאחר עבודה מאומצת ומשותפת עם @gantzbe ו@hilitrooper הבשיל סיכום משמח – ישראלים יוכלו לטוס לצפות במונדיאל בקטאר. האהבה לכדורגל וספורט מחברת בין אנשים ומדינות והמונדיאל בנובמבר פותח לנו שער ליחסים חמים חדשים, מברך את כל השותפים ומחכה לשריקת הפתיחה⚽️ pic.twitter.com/NAORdU0iOQ
— יאיר לפיד – Yair Lapid (@yairlapid) June 9, 2022
সেক্ষেত্রে দেশটির নাগরিকদের কি ভিন্ন পাসপোর্ট ব্যবহার করতে হবে? জানতে গেলে দেখা যায়, তাদের অংশগ্রহণের জন্য কোনো বিদেশি পাসপোর্টের প্রয়োজন হবে না। সেক্ষেত্রে টিকেট কেনার পর তাদের একটি ফ্যান আইডি দেওয়া হবে সেই আইডি’টি ভিসা হিসেবে কাজ করবে। জেরুজালেম টাইমসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, এইবারই প্রথম ইসরাইলিদের বিনা বিদেশী পাসপোর্টে কাতারে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ, ইসরাইলিদের কাতারে ঢুকতে ফিলিস্তিনি পাসপোর্ট লাগবে এই দাবিটি সত্য নয়।
সম্প্রতি ফিফার হসপিটালিটি প্রোগ্রাম নিয়ে একটি বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এই প্রোগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে টিকেটসহ অন্যান্য সেবা কেনার ক্ষেত্রে ইসরাইলে কোনো প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হয়নি। তবে শুরুর দিকে ইসরাইলের নামের পরিবর্তে “Palestinian Territory, Occupied” নামটি তালিকায় থাকলেও অনেক আলোচনা সমালোচনার পরে সে নামটিও তুলে নেওয়া হয়। যেহেতু ইসরাইলের কোনো প্রতিনিধি ফিফার হসপিটালিটি প্রোগ্রামে নেই, সেক্ষেত্রে দেশটির নাগরিকদের সেই সেবাগুলো কিনতে হলে ফিলিস্তিন কিংবা ভিন্ন প্রতিনিধির নাম বাছাই করতে হতে পারে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে তাদের ভিন্ন পাসপোর্ট প্রয়োজন হবে।
মূলত এই বিষয়টিকেই বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া ফিফা কিংবা কাতার এই ধরণের কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছে কি না এমন অনুসন্ধান করা হলে অফিসিয়াল কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরং কাতারের বিশ্বকাপ সম্পর্কিত অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের তালিকায় ইসরাইলের নাম ঠিকই পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের জন্য যে নিয়মগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে সেখানে ইসরাইলের নাগরিকদের জন্য আলাদা কোনো বাধা নেই। এর জন্য প্রয়োজন হবে টিকেট, থাকার ব্যবস্থা এবং “HAYYA CARD”। এই কার্ডটি দিবে কাতার সরকার এবং এটি নেয়ার ক্ষেত্রে কাতার যে দেশগুলোকে তালিকাভুক্ত করেছে, তার মধ্যে ইসরায়েলের নামও রয়েছে।
অর্থাৎ, টিকেটসহ বিভিন্ন সেবা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান তাদের কোনো প্রতিনিধি ইসরাইলে নিয়োগ না দেওয়ায় এক ধরনের বিতর্ক তৈরি হয়েছে ঠিকই কিন্তু এর মানে এই নয় যে এখন ইসরাইলিদেরকে ফিলিস্তিনের পাসপোর্ট নিয়ে কাতারে ঢুকতে হবে। কাতার কিংবা ফিফার অফিসিয়াল মাধ্যম থেকে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরং দেখা যাচ্ছে, ইসরাইলের নাগরিকেরা এই প্রথম কোনো বিদেশী পাসপোর্ট ছাড়াই বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে পারবে। তাই ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় দাবিটি মিথ্যা।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান। |