পৃথিবীর সবাই একসাথে লাফ দিলে কি পৃথিবীর তাপমাত্রা কমবে?

Published on: July 24, 2023

পৃথিবীর সবাই একসাথে লাফ দিলে পৃথিবীর তাপমাত্রা কমবে- শিরোনামে একটি তথ্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এর পিছনে ব্যাখ্যা হিসেবে বলা হচ্ছে, এভাবে লাফ দেয়ার কারণে পৃথিবী তার কক্ষপথ পরিবর্তন করবে তাই এর তাপমাত্রাও কমবে। সূত্র হিসেবে সেখানে “ন্যাশনাল টুডে” এর নাম উল্লেখ করা হয়। অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, দাবিটি সঠিক নয়। সব মানুষের সম্মিলিত ওজন এতটাই নগণ্য যে, এর মাধ্যমে পৃথিবীর কক্ষপথকে প্রভাবিত করার কোনো সম্ভাবনা নেই। এমনকি ন্যাশনাল টুডে প্রকাশিত সেই নিবন্ধেও বিষয়টিকে অবৈজ্ঞানিক বলেই উল্লেখ করা হয়েছে।

এমন কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন  এখানে এবং এখানে

 

“পৃথিবীর সবাই মিলে লাফ দিলে কমে যাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা”- শিরোনামে ভাইরাল এই পোস্টটি ২০ জুলাই বিশ্ব লাফ দিবসকে উদ্দেশ্য করে প্রকাশ করা হয়। সেখানে ন্যাশনাল টুডে কে তথ্যসূত্র উল্লেখ করে দাবি করা হচ্ছে, “দিন দিন পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। এই বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে নানা পন্থার অভাব নেই। আজ ২০ জুলাই বিশ্ব জাম্প দিবস। বিষয়টি মজার মনে হলেও এর লক্ষ্য পৃথিবীর সবাই মিলে লাফ দিয়ে পৃথিবীর কক্ষপথ পরিবর্তন করে মানসম্মত জলবায়ু নিশ্চিত করা। তবে এর জন্য পৃথিবীর সবাইকে একসাথে লাফ দিতে হবে”। 

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

ভাইরাল এই পোস্টে পাওয়া বিভিন্ন কি-ওয়ার্ডের সাহায্যে অনুসন্ধান করা হলে, উল্লেখিত ন্যাশনাল টুডের সেই নিবন্ধটি খুঁজে পাওয়া যায়। “World Jump Day – July 20, 2023”- শিরোনামে প্রকাশিত এই নিবন্ধে তথ্যটি খুঁজে পাওয়া যায়। ন্যাশনাল টুডে একটি ওয়েবসাইট যেখানে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দিবস সম্পর্কে নানারকম তথ্য দেয়া হয়। সেখানে বলা হচ্ছে, ওয়ার্ল্ড জাম্প ডে এর মূল লক্ষ্য ছিলো পৃথিবীর সব মানুষের একসাথে লাফ দেয়ার মাধ্যমে পৃথিবীর উষ্ণতা কমানো। এর পিছনে একটি বিশ্বাস জড়িত যে, তারা মনে করেন, সবাই একসাথে লাফ দেয়ার ফলে পৃথিবীর কক্ষপথ পরিবর্তন হবে এবং যেহেতু সূর্য থেকে কিছুটা দূরে যাবে তাই এর তাপমাত্রাও কমবে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এখানে দুইটি বিষয় আছে। প্রথমত, পৃথিবীর কক্ষপথ পরিবর্তন হলে এর তাপমাত্রা কমবে এবং দ্বিতীয়ত, পৃথিবীর সব মানুষ একসাথে লাফ দিয়ে পৃথিবীর কক্ষপথ পরিবর্তন কবে। 

অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, প্রথম বিষয়টির পক্ষে কিছু যুক্তি পাওয়া গেলেও দ্বিতীয় তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। একটা ধারণা রয়েছে যে, পৃথিবীকে যদি তার কক্ষপথ থেকে সরিয়ে সূর্যের থেকে দূরে নেয়া যায় তাহলে পৃথিবীর তাপমাত্রা কিছুটা কমবে। তাত্ত্বিকভাবে বিষয়টি ভুল কিছু নয়। গ্রহাণু বা ধুমকেতুর মাধ্যমে এটি করা যেতে পারে বলে মনে করছেন অনেক বিজ্ঞানী। কিন্তু জটিল এই হিসাব নিকাশের কোনো ত্রুটির ফলে বড় ধরণের বিপদও ঘটতে পারে, বিলীন হয়ে যেতে পারে পৃথিবীতে বসবাস করা অনেক প্রাণী। মূলত এই ধারণার প্রেক্ষিতেই সম্মিলিত লাফ দেয়ার মাধ্যমে পৃথিবীকে তার কক্ষপথ থেকে সরানোর ধারণাটি এসেছে বলে ন্যাশনাল টুডেতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে একটি নিবন্ধ পড়ুন এখানে

কিন্তু দ্বিতীয় বিষয়টি সম্পূর্ণই অবৈজ্ঞানিক, এবং ভাইরাল এসব পোস্টে মূলত এই বিষয়টির কথাই বলা হয়েছে। পৃথিবীর প্রায় সব মানুষ একসাথে লাফ দিলে পৃথিবীর কক্ষপথ পরিবর্তন হবে- এই ধারণার পক্ষে কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায় নি। ৬০০ কোটি মানুষের উপর ভিত্তি করে এ বিষয়ে একটি গাণিতিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। এর উপসংহারে এটি বলা হয় যে, মানুষের সম্মিলিত লাফের ফলাফল পৃথিবীর ভরের তুলনায় এতটাই নগণ্য হবে যে এর ফলে পৃথিবীর কক্ষপথের কোনো পরিবর্তন হবে না। মানুষের এই সম্মিলিত লাফ পৃথিবীকে 2.6 x 10^-13 m/s গতিবেগ দিবে। অর্থাৎ, এক সেকেন্ডে পৃথিবী একটি একক হাইড্রোজেন পরমাণুর ব্যাসার্ধের প্রায় একশতাংশ সরে যাবে, যা খুবই সামান্য।

অন্যদিকে, ভাইরাল এসব পোস্টে যে সূত্রের কথা বলা হয়েছে সেখানেও এই বিষয়টিকে অবৈজ্ঞানিক বলেই আখ্যা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, আজকের দিনটি বেশিরভাগই মজা করে উদযাপন করে, কারণ আমরা সবাই জানি যে, পৃথিবীর তুলনায় মোট জনসংখ্যার ওজন এতটাই নগণ্য যে সবাই একসাথে লাফ দেয়ার ফলে পৃথিবীর কক্ষপথের কোনো পরিবর্তন হবে না।

 

অর্থ্যাৎ, লাফ দেয়ার মাধ্যমে পৃথিবীকে তার কক্ষপথ থেকে সরানোর দাবিটি সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক।

এটি সত্যি যে, এই ধারণাটি বিশ্ব লাফ দিবসের সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু ধারণাটি অবৈজ্ঞানিক। ভাইরাল এসব পোস্টে এই কথাটি উল্লেখ না করায় সেটি নিয়ে বিভ্রান্ত হচ্ছেন। 

 

উল্লেখ্য, বিশ্ব লাফ দিবস শুরু করেছিলেন জার্মান শিল্পী টরস্টেন লাউশম্যান। এই দিনটি প্রথম পালিত হয় ২০ জুলাই, ২০০৬ এ। পশ্চিম গোলার্ধের লক্ষ লক্ষ মানুষ এ দিনে একযোগে লাফ দেয়। বিশ্ব উষ্ণায়ন বন্ধের লক্ষ্যে দিনটি উদযাপিত হয়।

অতএব, বোঝা যাচ্ছে, ভাইরাল এই দাবিটি বিজ্ঞানসম্মত নয়। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এসব ফেসবুক পোস্টগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে চিহ্নিত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh