জাতিসংঘ হাসিনাকে “সেরা স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী” ঘোষণা করেনি

Published on: September 27, 2022

‘‘শেখ হাসিনা জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত বিশ্বের প্রথম সেরা স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী’’-এই মর্মে একটি খবর ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, জাতিসংঘ সম্প্রতি কিংবা দূর অতীতে এমন ঘোষণা কখনো দেয়নি। Top tens নামক একটি অখ্যাত ওয়েবসাইটে ব্যবহারকারীদের ভোটের মাধ্যমে শীর্ষ স্বৈরশাসক নির্বাচনের একটি পোল খোলা হয়েছিল। চলমান এই ভোটাভুটিতে বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চতুর্থ স্থানে আছেন ।

গুজবের উৎস

ভাইরাল কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে



ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান

কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দেখা গেল, ২০১৮ সালে এই গুজব ভাইরাল হয়েছিল। সে সময়ের কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে , এখানে

২০১৮ সালের এসব পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, এবার বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে নিকৃষ্ট একনায়ক তথা স্বৈরাশাসকের তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জার্মানির নিকৃষ্ঠ স্বৈরশাসক এডলফ হিটলারকে পেছনে ফেলে শীর্ষস্থান অর্জন করেন তিনি।

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ও জনপ্রিয় জরিপভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘দি টপটেনস এ একটি দীর্ঘমেয়াদী জরিপের মাধ্যমে সেরা স্বৈরাশাসক নির্বাচিত হন বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। ওয়েবসাইটটি বিশ্বের ৫০ জন স্বৈরশাসককে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি একটি জরিপ পরিচালনা করে।

সেখানে দেখা গেছে, শতকরা সর্বোচ্চ ১৯ শতাংশ ভোট পেয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিকৃষ্ট স্বৈরশাসকের তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন। দ্বিতীয় স্থানে আছেন জার্মানির নিকৃষ্ট স্বৈরশাসক এডলফ হিটলার। তিনি পেয়েছেন ১৩ শতাংশ ভোট। ৯ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন তৎকালিন সোভিয়েত ইউনিয়নের স্বৈরশাসক জোসেফ স্টালিন।

 

এই দাবির সত্যতা যাচাইয়ে Top Tens ওয়েবসাইটে Top 10 Dictators In History লিস্টে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে প্রথম স্থানে আছে জার্মানির এডলফ হিটলার (১৯% ভোট) , দ্বিতীয় স্থানে রাশিয়ার জোসেফ স্ট্যালিন (১৪%) , তৃতীয় স্থানে চীনের মাও সে তুং (১১%) এবং চতুর্থ স্থানে আছে বাংলাদেশের শেখ হাসিনা (১১%)। (২৪শে সেপ্টেম্বর,২০২২ এর হিসাব অনুযায়ী)

এটি একটি চলমান ভোট প্রক্রিয়া। বর্তমানেও যে কেউ এখানে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে তার ভোট সংখ্যা এগিয়ে নিতে পারেন ।

এই তালিকার বিভিন্ন স্ক্রিনশট দেখে ধারণা করা যাচ্ছে, ২০১৮ সালে, অথবা তার পূর্বে  কোনো এক সময় ভোটাভুটিতে শেখ হাসিনা শীর্ষস্থানে ছিলেন এবং তখনই ‘নিকৃষ্ট স্বৈরশাসকের তালিকায় প্রথম হলেন শেখ হাসিনা’ -এই খবরটি ভাইরাল হয়েছিল। তবে এটি কোনো পদ্ধতিগত নির্বাচন নয়, এবং নানাভাবে ম্যানিপুলেটিভ হতে পারে।

ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা ‘যাচাই’ সে সময় এই দাবির সত্যতা যাচাই করেছিল। ২০১৮ সালের ৬শে মার্চ প্রকাশিত শেখ হাসিনাকে সেরা স্বৈরশাসকের তালিকায় নির্বাচিত করা হয়েছে? শীর্ষক  এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দি টপটেনস.কম (thetoptens.com) এমন কোন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ওয়েবসাইট নয়, যারা বিভিন্ন সময় গবেষণা উদ্দেশে এরকম জরিপ করে থাকে। এটি মূলত একটি সামাজিক যোগাযোগ সাইট যেখানে যে কেউ তার পছন্দ মত বিষয় নিয়ে জরিপ শুরু করতে পারে এবং অনুরূপ জরিপে ভোট দিতে পারে। এমনকি এই জরিপে অংশগ্রহণের জন্য কোন ব্যক্তিকে এই ওয়েবসাইটে একাউন্টও খুলতে হয় না। যেকেউ নির্দিষ্ট সময় পরপর এই ওয়েবসাইটে গিয়ে ভোট দিয়ে আসতে পারে।

নির্দিষ্ট এই জরিপটি প্রায় ৮ বছর আগে শুরু করে OzzyVanHalen নামধারী জনৈক ইউজার। ক্রমে এখানে সময় সময় অনেক নতুন নাম যুক্ত করে এবং ভোট দেয়।

২০১৩ এর জুনে এই জরিপে শেখ হাসিনার অবস্থান ছিলো ১৯তম । —- অথচ ডিসেম্বরের ৩১ তারিখে শেখ হাসিনার অবস্থান ১ নম্বরে দাঁড়ায়। এথেকে এটি স্পষ্ট যে, এই স্বল্প সময়ের ব্যবধানে কোন একটি গোষ্ঠী, এই ওয়েবসাইটে ভুয়া ভোট দেওয়ার পদ্ধতি বের করে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শেখ হাসিনাকে অজস্র ভুয়া ভোট প্রদান করে এক নম্বর স্থানে নিয়ে আসে।

তাই এই জরিপ আন্তর্জাতিক গণমত তো দূরের কথা, জাতীয় গণমতকেও প্রতিনিধিত্ব করে না। এই জরিপ ও জরিপ পদ্ধতির দুর্বলতা ব্যবহার করে, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে, সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে মাত্র।

বর্তমানে, ২০২২ সালেও দেখা যাচ্ছে, কিছু একই গুজব এবং ক্ষেত্র বিশেষে একই পোস্টার ফেসবুকে পুনরায় শেয়ার করা হচ্ছে। এবার নতুন করে জাতিসংঘের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে, যদিও জাতিসংঘ কখনো এ ধরনের কোনো ‘সেরা স্বৈরশাসক’ এর ঘোষণা দেয়নি। সম্প্রতিও জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে এ ধরনের কোনো ঘোষণা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তাই ফ্যাক্টওয়াচ এ সংক্রান্ত সাম্প্রতিক পোস্টগুলোকে ‘মিথ্যা’/বিভ্রান্তিকর সাব্যস্ত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

Leave a Reply