স্বর্ণালংকার-পরা মহিলার স্বামীকে পিএসসি কর্মকর্তা দাবি

13
স্বর্ণালংকার-পরা মহিলার স্বামীকে পিএসসি কর্মকর্তা দাবি স্বর্ণালংকার-পরা মহিলার স্বামীকে পিএসসি কর্মকর্তা দাবি

Published on: [post_published]

অতিরিক্ত স্বর্ণালংকার পরিহিতা এক তরুণীকে জনৈক পিএসসি কর্মকর্তার স্ত্রী হিসেবে দাবি করে ফেসবুকে অনেকে কটূক্তি করছেন। তবে এ সকল পোস্টে উক্ত তরুণী বা তাঁর স্বামীর নাম উল্লেখ করা হয়নি। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, এই তরুণীর নাম ডাঃ নাহিদা আক্তার পিংকি এবং ডাক্তার হিসেবে তিনি জামালপুরের একটি হাসপাতালে প্রাইভেট প্রাকটিস করেন । তাঁর স্বামীর নাম বুলবুল আশরাফুল এবং তিনি একজন ব্যবসায়ী। এরা কেউই পিএসসির কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী নন। সঙ্গত কারনে ফ্যাক্টওয়াচ এ সকল পোস্টকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।

গুজবের উৎস

ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে, এখানে


জনৈক রিয়াসসাত জামান এই ছবি শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছেন, উনি নাকি পিএসসি-র এক কর্মকর্তার বউ!!

আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী এই ছবির ক্যাপশনে লিখেছেন, পিএসসি-র কর্মকর্তার বউ আড়াই কেজি স্বর্ণ শরীরে লাগিয়ে ছবি তুলেছে কেমন লাগছে জানাবেন প্লিজ !

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

ছড়িয়ে পড়া ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে দেখা গেল, জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে এই দম্পতির একাধিক ছবি ভাইরাল হয়েছিল। মূলত, তরুণীর অত্যধিক স্বর্ণালংকার যুক্ত সাজপোষাকের জন্যই অনেকে বিস্ময়ের সাথে তাদের ছবি শেয়ার করছিল।

এসকল ছবি শেয়ারের সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, ছবিতে দেখতে পাওয়া তরুণের নাম বুলবুল আশরাফুল। তিনি ফেসবুকে বেশ সক্রিয়। প্রায়ই কর্মস্থলের বা পারিবারিক ছবি শেয়ার করে থাকেন। তাঁর ফেসবুকের ‘ইনফো’ সেকশন থেকে জানা যাচ্ছে, তিনি জামালপুরের বুলবুল জেনারেল হাসপাতালের মালিক এবং পরিচালক। এর বাইরেও তিনি বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত রয়েছেন।


‘পিএসসির কর্মচারী’ হিসেবে তাঁর নামে গুজব ছড়িয়ে পড়ার পরে জনাব আশরাফুল আত্মপক্ষ সমর্থন করে এখনো ফেসবুক স্ট্যাটাসে কোনো বক্তব্য দেননি। তবে তাঁর একাধিক ‘ফেসবুক ফ্রেন্ড’ তাঁর সম্পর্কে জানিয়ে এবং গুজবের নিন্দা করে পোস্ট দিয়েছেন ।

অতি সম্প্রতি তাঁর ফেসবুক একাউন্টকে ট্যাগ করে একটি স্ট্যাটাসে র‍্যাংগস প্রপার্টিজ লিমিটেড এর এ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার রাইসুল ইসলাম পল্লব জনাব আশরাফুল সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য জানাচ্ছেন। তিনি লিখেছেন, Alumni Association of Management Studies, Jagannath University এর দাতা সদস্য এবং ম্যানেজম্যান্ট স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রাক্তন মেধাবী শিক্ষার্থী বুলবুল একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ি। তিনি বুলবুল জেনারেল হাসপাতাল, শাহ জামাল হাসপাতাল, আলফা অটোব্রীক্সসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও তার স্ত্রী ডা: নাহিদা পিংকি জামালপুর শহরের আনন্দ বেকারির মালিকের মেয়ে যিনি পৈতৃকসূত্রই কোটি কোটি টাকার মালিক। তাদের নিয়ে অনেক গুজব ছড়ানো হচ্ছে। প্লীজ কোন তথ্যের  সত্যতা যাচাই-বাছাই না করে প্রচার করবেন না।

Mak Azad নামের আরেকজন ফেসবুক ব্যবহারকারী জনাব আশরাফুলকে ট্যাগ করে আরেকটি স্ট্যাটাসে কয়েকটি গুজবের স্ক্রিনশট পোস্ট করে লিখেছেন, তীব্র প্রতিবাদ;

ফেইসবুক একটা গুজবের জায়গাও বটে। মানুষের একটা অংশ কিছু  তথ্য যাচাই-বাছাই না করেই ভাইরাল করে সম্মানিত লোকের সম্মান হানি ঘটান।

আমার ইউনিভার্সিটির বন্ধু বুলবুল একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ি।তিনি বুলবুল জেনারেল হাসপাতাল, শাহ জামাল হাসপাতাল,আলফা অটোব্রীক্সসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও তার স্ত্রী ডা: নাহিদা পিংকি জামালপুর শহরের আনন্দ বেকারির মালিকের মেয়ে যিনি পৈতৃকসূত্রই কোটি কোটি টাকার মালিক। তাদের নিয়ে অনেক গুজব ছড়ানো হচ্ছে।

প্লীজ কোন তথ্য সঠিকতা অধিকতর যাচাই-বাছাই না করে প্রচার করবেন না।


একই পোস্টে সংযুক্ত একটি পোস্টারের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, জনাব বুলবুল আশরাফুল এর স্ত্রী, , ডাঃ নাহিদা আক্তার পিংকি একজন ডেন্টাল ও ওরাল সার্জন। তিনি ঢাকা ডেন্টাল কলেজ থেকে বিডিএস ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি জামালপুরে অবস্থিত হযরত শাহজামাল (র) জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন বিকেলে রোগী দেখেন। শাহজামাল হাসপাতালের অফিসিয়াল পেজ থেকেও এই পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে।

অন্যদিকে, বিপিএসসি (BPSC অর্থাৎ Bangladesh Public Service Commission বা বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন)এর ওয়েবসাইটে বিভিন্ন পর্যায়ের ১০১ জন কর্মকর্তার একটি তালিকা রয়েছে। এই তালিকা ঘেটে দেখা যাচ্ছে, বুলবুল আশরাফুল নামে কোনো কর্মকর্তা এই দপ্তরে নেই।

অর্থাৎ এটা নিশ্চিত যে, এই দম্পতির কেউই পিএসসি বা সরকারী কর্ম কমিশন এর কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী নন, বরং দুজনেরই আলাদা কর্মজীবন রয়েছে। এবং তাদের পেশাগত জীবনে তারা সফল ।

যেসব ফেসবুক পোস্টে এই লোককে ‘পিএসসি কর্মকর্তা’ বলে দাবি করা হচ্ছে, সেখানেও কমেন্ট বক্সে কেউ কেউ প্রতিবাদ জানিয়ে তাদের সঠিক পরিচয় তুলে ধরছেন।

সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ এসকল পোস্টকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.