ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত নারীকে নিয়ে সাম্প্রদায়িক অপপ্রচার

56
ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত নারীকে নিয়ে সাম্প্রদায়িক অপপ্রচার
ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত নারীকে নিয়ে সাম্প্রদায়িক অপপ্রচার

সম্প্রতি থ্রেডসে এক নারীর মরদেহ ও তার সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের কিছু ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, এই নারী হিন্দু এবং তাকে স্বরস্বতী পূজা থেকে ফেরার সময় তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে ঢাকা এয়ারপোর্ট সংলগ্ন এলাকায় ফেলে রেখে যায়। তার সঙ্গে থাকা জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্য অনুযায়ী, তার বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার উছমানপুর ইউনিয়নে। তার নাম অংকিতা মজুমদার তৃষা। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, অংকিতা মজুমদার তৃষাকে নিয়ে থ্রেডসে ছড়িয়ে পড়া দাবিটি সঠিক নয়। এই নারী গত ১৯ জানুয়ারি ট্রেনের ধাক্কায় রাজধানীর কাওলা গেট এলাকায় নিহত হন।

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চে ‘যাএা বাতিল কিশোরগঞ্জ ট্রেনের টিকেট ক্রয় বিক্রয়(Kishorganj To Dhaka)‘ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে ছবিগুলো পাওয়া যায়। গত ১৯ জানুয়ারি পোস্ট করা মুহাম্মদ রাফসান নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে এসব ছবি পোস্ট করা হয়।

পোস্টের ক্যাপশন অনুযায়ী, ১৯ জানুয়ারি ঢাকার এয়ারপোর্ট সংলগ্ন কাওলা রেলগেট এলাকায় রেললাইন পারাপারের সময় ট্রেনের ধাক্কায় এই নারীর মৃত্যু হয়।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের স্বরস্বতী পূজা উদযাপিত হয়েছে গত ৩ ফেব্রুয়ারি। এর আগে থেকেই ওই নারীর মরদেহ ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবিগুলো ফেসবুকে ছিল। 

এই পোস্টের সূত্রে পরবর্তী অনুসন্ধানে দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ২০ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, অংকিতা মজুমদার ১৯ জানুয়ারি কাওলা রেলগেট এলাকায় ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের ধাক্কায় নিহত হন। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। তার স্বামীর নাম  নয়ন। রাজধানীর উত্তরায় পরিবারের সঙ্গে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি।

প্রতিবেদনটিতে উল্লিখিত অংকিতার পরিচয়ের সঙ্গে ভাইরাল হওয়া ছবিগুলোতে থাকা জাতীয় পরিচয়পত্রে উল্লেখিত পরিচয়ের মিল রয়েছে। প্রতিবেদনে অংকিতার বাড়ি উল্লেখ করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার উসমানপুর গ্রামে। ভাইরাল জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবিগুলোতেও এটি উল্লেখ করা।

পুনরায় অনুসন্ধানে নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনে গত ১৯ জানুয়ারি অংকিতা সম্পর্কে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

এ প্রতিবেদনে ঢাকা রেলওয়ে থানার বিমানবন্দর ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. বজলুর রশিদকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, অংকিতা ৬ বছর আগে হিন্দু থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নয়ন ইসলামকে বিয়ে করেন। চাকরির সুবাদে তার স্বামী বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেন। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। 

অংকিতা কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার উসমানপুর গ্রামের মো. উজ্জ্বল মজুমদারের মেয়ে। উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টর ১৮ নম্বর রোডে ভাড়া বাসায় থাকতেন। অংকিতা মজুমদারের মরদেহের ছবির সঙ্গে ভাইরাল জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবিগুলোতেও তার বাবার নাম উজ্বল মজুমদার উল্লেখ করা হয়েছে।

এসব তথ্যের ভিত্তিতে এটি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে, অংকিতা মজুমদার নামে এক তরুণীকে স্বরসতী পূজা থেকে ফেরার সময় তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে ঢাকা এয়ারপোর্ট সংলগ্ন এলাকায় ফেলে রেখে যাওয়ার দাবিতে ভাইরাল ছবিগুলো রেল দুর্ঘটনায় নিহত এক নারীর। তাই ফ্যাক্টওয়াচ দাবিটিকে মিথ্যা হিসেবে সাব্যস্ত করছে।

থ্রেডসে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে

Claim:
সম্প্রতি থ্রেডসে এক নারীর মরদেহ ও তার সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের কিছু ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, এই নারী হিন্দু এবং তাকে স্বরস্বতী পূজা থেকে ফেরার সময় তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে ঢাকা এয়ারপোর্ট সংলগ্ন এলাকায় ফেলে রেখে যায়। তার সঙ্গে থাকা জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্য অনুযায়ী, তার বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার উছমানপুর ইউনিয়নে। তার নাম অংকিতা মজুমদার তৃষা।

Claimed By:
Thread Users

Rating:
False

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে

এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে
ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh