রমজান মাসে নারীর প্রকাশ্যে ধুমপান করার ভিডিওটি সাজানো নাটক

103
রমজান মাসে নারীর প্রকাশ্যে ধুমপান করার ভিডিওটি সাজানো নাটক
রমজান মাসে নারীর প্রকাশ্যে ধুমপান করার ভিডিওটি সাজানো নাটক

Published on: [post_published]

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে, রমজানে মাসে রাস্তার ধারের দোকানে পর্দার আড়ালে বসে একজন নারী ধূমপান করছেন, আর সেটাতে কিছু পুরুষ আপত্তি জানাচ্ছেন। ‘Today C News’ নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশিত উক্ত ভিডিওতে ধূমপান নিয়ে তর্ক-বিতর্ক লক্ষ্য করা গেছে। অনেক সাধারণ মানুষ আলোচিত ভিডিওটির ঘটনাকে বাস্তব ভেবে ঐ নারীকে তিরস্কার করে এটি শেয়ারও করেছেন। তবে ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছে যে, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটি একটি সাজানো নাটক ছিল। ‘Today C News’ নামক ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশিত আরেকটি ভিডিওতে আলোচিত ভিডিওটির অভিনেত্রী নিশ্চিত করেছেন যে, দোকানে বসে ধূমপান করার ঘটনাটি অভিনয় ছিল। তাঁর ভাষ্যমতে, “অভিনয়কে রিয়েলিটির ভাব না দিলে সেটি ভাইরাল হবে না। অভিনয়কে রিয়েলিটির ভাব দেয়ার জন্য আমরা এই কাজটি করেছি।” যেহেতু, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটি যে একটি সাজানো নাটক ছিল এবং এটি উক্ত ভিডিওর কোথাও উল্লেখ করা হয়নি, সেহেতু ফ্যাক্টওয়াচ ঐ ভিডিওটিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।

এমন কয়েকটি পোস্টের নমুনা দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটিতে দৃশ্যমান ঘটনাটি বাস্তব কিনা তা যাচাই করতে গিয়ে আমরা ‘Today C News’ নামক ফেসবুক পেজটিতে একটি ভিডিও খুঁজে পেয়েছি। ২২ মার্চ ২০২৪ এ প্রকাশিত “যেই কারণে রমজানে প্রকাশ্যে সিগারেট খান এই নারী” – শিরোনাম সংবলিত উক্ত ভিডিওটিতে আমাদের আলোচিত ভিডিওর ঐ নারীকে বলতে শোনা গেছে, “এই যে দেখেন কিছুদিন আগে আমার একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যে আমি সিগারেট হাতে চায়ের কাপ হাতে বসে আছি। সিগারেট ধরিয়ে নিয়ে বসে আছি আর কি। তো ঐটা দেখে সবাই বিভ্রান্ত হচ্ছেন যে আমি সিগারেট খাচ্ছি। আসলে ঐ টা একটা নাটকের পার্ট ছিল। একটা অভিনয় ছিল। তো এটা নিয়ে সবাই অনেক বিভ্রান্ত হচ্ছেন, বিভ্রান্ত করছেন। এটা জাস্ট একটা অভিনয়ই ছিল। আপনারা অভিনয় হিসেবেই নিবেন এটাকে। এটাকে রিয়েলিটি ভাববেন না।” এরপর তিনি হাতে থাকা সিগারেটটি ভেঙে দুই টুকরো করে ফেলে দেন। 

সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটিতে অভিনয়ের প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “সবাই আমার দিকে আঙুল দিয়ে বলছে যে সে কেন এমন করছে। কেন এমন উচ্ছৃঙ্খল হয়ে গেছে। আসলে আমি তো উচ্ছৃঙ্খল হইনি। আমি যেমন ছিলাম আমি তেমনই আছি। শুধু জাস্ট একটা ভিডিও যেখানে দেখা যাচ্ছে সিগারেট আর চা হাতে নিয়ে বসে আছি। এটা খাওয়াটাও দেখাইনি। পুরো ভিডিওটা দেখলে পরে বোঝা যাবে যে এটা একটা অভিনয় ছিল। একটা মেয়ে চায়ের দোকানে বসে চা-সিগারেট খাচ্ছে। তো এটাকে মূলত সবাই রিয়েলিটি ভাবছেন। বাস্তব ভেবে নিয়েছেন। এটা আসলে বাস্তব না। এটা একটা ভ্লগ (Vlog) ছিল। আসলে এধরণের ঘটনা আমাদের সমাজে এভেইলএভল ঘটছে। তো ঐটা নিয়েই আমরা একটা ভ্লগ বানাইছি। এখানে দেখা যাচ্ছে যে এটাকে সবাই রিয়েলিটি ভেবে আমার ফ্যামিলিকে কিংবা আমাকে বিভ্রান্ত করছেন। এটা রিয়েল ছিল না। সম্পূর্ণটাই অভিনয় ছিল।…অভিনয়কে রিয়েলিটির ভাব না দিলে এটা ভাইরাল হবে না। আর এটা চলবেও না। তো ঐ অভিনয়টাকে আমরা রিয়েলিটির ভাব দেয়ার জন্যই এই কাজটা মূলত করছি।”

অতএব, উপরের আলোচনা থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত একজন নারী টঙে সিগারেট হাতে নিয়ে বসে আছেন – এই ভিডিওটি একটি সাজানো নাটক ছিল। উক্ত ভিডিওতে দৃশ্যমান ঐ নারী অন্য আরেকটি ভিডিওতে এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

কিছুদিন আগে ‘খেলাযোগ’ নামক একটি স্পোর্টস বুলেটিন ক্রিকেটার তামিম ইকবাল এবং মেহেদি হাসান মিরাজের ফোনকলে কথোপকথনের অডিও রেকর্ড প্রকাশ করে এবং অনেক মানুষ এটিকে ফাঁস হওয়া ফোনকল রেকর্ড ভেবে শেয়ার করেন। পরে জানা যায় যে, ততক্ষণে ভাইরাল হয়ে যাওয়া ফোনকলটি আসলে ‘নগদ’ এর একটি মার্কেটিং ক্যাম্পেইনের অংশ ছিল। ফ্যাক্টওয়াচ এই বিষয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল ঐ সময়। 

আরেকটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে বেশ আলোড়ন তুলেছিল যে, রমজানে মাসে পর্দা না করায় বেপর্দা নারীকে বাসে উঠতে দিবেন না হেলপার! উক্ত ভিডিওতে বাসে উঠা নিয়ে হেলপার এবং ঐ নারীর মাঝে তুমুল তর্ক-বিতর্ক লক্ষ্য করা যায়। অনেকেই বাসের হেলপারকে তার সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ভিডিওটি শেয়ারও করেন। অবশ্য পরে জানা যায় যে, এটিও একটি সাজানো নাটক ছিল। কারণ ভিডিওতে দৃশ্যমান ঐ বাস হেলপার এবং নারীটি অন্যান্য ভিডিওতেও পূর্বে একসাথে কাজ করেছিলেন। এই বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টওয়াচের বিস্তারিত প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে। 

যেহেতু, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত আলোচিত ভিডিওটিতে কোন ডিসক্লেইমার নেই যে এটি একটি নাটক ছিল এবং অনেক মানুষ এটিকে বাস্তব ভেবে বিভ্রান্ত হয়েছেন, সেহেতু ফ্যাক্টওয়াচ উক্ত ভিডিওটিকে বিভ্রান্তিকর সাব্যস্ত করছে। 

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.