গত ২৬শে মার্চ সন্ধ্যায় শুক্র গ্রহ গ্রহণের পর এই ঘটনাকে সম্ভাব্য ‘কেয়ামতের আলামত’ দাবি করে এর প্রমাণ হিসেবে পবিত্র কোরআনের একটা আয়াত উদ্ধৃত করে অনেকেই ফেসবুকে পোস্ট দেন । ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেয়া যায়, যে আয়াতটিকে “কেয়ামতের আলামত” এর প্রামাণ্য দাবি করা হচ্ছে, সে আয়াতে এমন ধরনের কোনো বক্তব্যই ছিল না। ভাইরাল পোস্টগুলোতে “কেয়ামতের আলামত” দাবি করে বাংলা বাক্যটিকে কোরআনের ২১ নম্বর সূরার ১ম আয়াতের অনুবাদ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু তার সাথে মূল কোরআনের একাধিক অনুবাদ মিলিয়েও কোনো ধরনের সাদৃশ্য পাওয়া যায়নি। সঙ্গত কারণে এই পোস্টগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।
তোমরা যদি চাঁদের সঙ্গে অন্য কোন গ্রহের খুব কাছাকাছি অবস্থান দেখতে পাও। তবে তোমরা ভেবে নিও কেয়ামত অতি নিকটে।
এটি যেহেতু কোরআনের আয়াত, তাই এটিকে সরাসরি আল্লাহর বাণী বলেই মুসলমানরা বিশ্বাস করেন। কেবলমাত্র হাদিসের বর্ণনার ক্ষেত্রেই “রাসুলল্লাহ বলেছেন” এমন বাক্যাংশ ব্যবহার করা যায়, কোরআনের আয়াতে নয়।
২১ নম্বর সূরার নাম সূরা আল -আম্বিয়া। কোরআনের হার্ডকপি ,এবং অনলাইনে সহজলভ্য একাধিক সংস্করণ ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে , সম্পূর্ণ আয়াতটি ফেসবুকের এসব স্ট্যাটাসে উদ্ধৃত করা হয়নি। সম্পূর্ণ আয়াতটি হল, ٱقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ وَهُمْ فِى غَفْلَةٍۢ مُّعْرِضُونَ
এবার আসা যাক অনুবাদের ব্যাপারে। অনলাইনে সহজলভ্য একাধিক অনুবাদ ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, এই আয়াতের অনুবাদে চাঁদ বা অন্য গ্রহের কোনো উল্লেখ নেই।
[The time of] their account has approached for the people, while they are in heedlessness turning away.
এছাড়া, গুগল ট্রান্সলেটর এর সাহায্যে আয়াতের শবগুলোকে একত্রে , এবং পৃথকভাবে অনুবাদ করার চেষ্টা করেও এখানে চাঁদ বা তারা সম্পর্কিত কোনো শব্দ পাওয়া যায়নি।
এই ভুল অনুবাদটা ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পরে অনেক বিজ্ঞ আলেমের দৃষ্টিগোচর হয়। অনেকে ফেসবুকে বা ওয়েবসাইটে এই ভুল আয়াত সম্পর্ক অনলাইন ব্যবহারকারীদের সতর্ক করেছেন।
যেমন- তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার এর মুখপত্র, আহলে হক মিডিয়া ডট কম এর এই নিবন্ধে বলা হয়েছে,
প্রশ্নোক্ত লেখায় প্রথমে হাদীস নামে যা উদ্ধৃত করা হয়েছে। সেটি আদৌ হাদীস নয়। বরং এটি কুরআনের একটি আয়াত। সূরা আম্বিয়ার প্রথম আয়াত। যা হলো:
“অর্থ:- রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমরা যদি চাঁদের সঙ্গে অন্য কোন গ্রহের খুব কাছাকাছি অবস্থান দেখতে পাও। তবে তোমরা ভেবে নিও কেয়ামত অতি নিকটে”।
এর মানে পোষ্টকারী কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে নিতান্তই অজ্ঞ ও জাহিল। এমন ব্যক্তিদের কিছুতেই কোন বিজ্ঞ আলেমের পরামর্শ ছাড়া এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে পোষ্ট করা সমীচিন নয়।