নির্বাচনের দুর্নীতির ছবি তোলায় পুলিশের হেনস্থা — দাবিটি মিথ্যা

Published on: December 26, 2021

সম্প্রতি পুলিশ কর্তৃক একজন বৃদ্ধের হেনস্থার কিছু ছবি ফেসবুকে শেয়ার হয়েছে যার ক্যাপশনে বলা হচ্ছে, নির্বাচনের দুর্নীতির ছবি তোলায় বয়স্ক মানুষকে কয়েকজন পুলিশ মেরেছে। মূলত এই ছবিগুলো পুরনো এবং ক্যাপশনের দাবিটি মিথ্যা। গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, মূল ছবিগুলো ২০০৬ সালের ১৫ এপ্রিল চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে খেলা চলাকালীন সময়ে পুলিশ কর্তৃক সাংবাদিক হেনস্থার ছবি।

সম্প্রতি ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ এবং পেজ থেকে শেয়ার হওয়া কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।

উক্ত ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনটি হুবহু নিচে দেয়া হল:

“বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থা এমনিতেই বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে নি!

এইদেশে সত্যি প্রকাশ করলেই মার খেতে হয়েছে সর্বস্তরের মানুষকে।

নির্বাচনের দুর্নীতির ছবি তোলায় একজন বাপের সমান বয়স্ক মানুষকে কয়েকজন পুলিশ কিভাবে মেরেছে তা অবশ্যই কেউ ভুলেনি।“

ফ্যাক্টচেক:

ফেসবুক পোস্টগুলোতে ব্যবহৃত তিনটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন প্রবীণ ফটোগ্রাফারকে পুলিশ শারীরিকভাবে হেনস্থা করছে। গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, মূল ছবিগুলো ২০০৬ সালের ১৬ এপ্রিল চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে তোলা হয়েছিল। ফটো এজেন্সি ‘গেটি ইমেজ’ এর ওয়েবসাইটে সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ফেসবুক পোস্টে ব্যবহৃত তিনটি ছবিসহ এই ঘটনার আরো কিছু ছবি পাওয়া গেছে। উক্ত ছবিগুলো তুলেছেন অস্ট্রেলিয়ান ফটোগ্রাফার হামিশ ব্লেয়ার।


ছবিগুলোর বর্ণনা থেকে জানা যায়, ২০০৬ সালের ১৫ এপ্রিল চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচের প্রথম দিন গাড়ি পার্কিং করাকে কেন্দ্র করে প্রথম আলোর শামসুল হক টেংকু নামের এক সাংবাদিকের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে পুলিশের দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট আলী আনোয়ার, যার এক পর্যায়ে ঐ সাংবাদিককে শারীরিকভাবে হেনস্থা করেন সেই সার্জেন্ট। এই লাঞ্ছনার অভিযোগে বেশ কিছু সাংবাদিক খেলা চলাকালীন মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে সার্জেন্ট আলী আনোয়ারকে বরখাস্তের দাবিতে মাঠে প্রতিবাদ করেন। এর প্রেক্ষিতে তৎকালীন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (পোর্ট) আলী আকবর ৬৫ বছর বয়সী ফটো সাংবাদিক জহিরুল হককে লাঞ্ছিত করেন। এসময় কয়েকজন ফটো সাংবাদিকের ক্যামেরা ভেঙ্গে ফেলা হয়। উক্ত হামলার ঘটনায় প্রায় ২০ জন সাংবাদিক আহত হয়েছিলেন।

বিষয়টি নিয়ে তখন বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর এবং দ্য ডেইলি স্টার সহ আরও বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করেছিল।



উল্লেখ্য যে, ভাইরাল ছবিগুলোতে দৃশ্যমান সাদা পোশাক পরিহিত আক্রান্ত ফটো সাংবাদিক জহিরুল হক ২০১৪ সালের ১৫ জুন ভারতের নয়াদিল্লির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।

উক্ত তথ্যপ্রমাণ থেকে বিষয়টি স্পষ্ট যে, ২০০৬ সালের পুলিশ কর্তৃক সাংবাদিক হেনস্থার  ছবিগুলো ভিন্ন প্রেক্ষাপটের। পুরনো ছবিগুলো সম্প্রতি নির্বাচনের দুর্নীতির ছবি তোলায় একজন বয়স্ক লোককে পুলিশ কর্তৃক মারধর বলে প্রচার করায়, ফ্যাক্টওয়াচ এটিকে “মিথ্যা” সাব্যস্ত করেছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

 

Leave a Reply