Published on: April 27, 2022
মুখ দিয়ে আগুন উদগিরণের ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রাগন নামক উড়ন্ত সরীসৃপের বর্ণনা বিভিন্ন দেশের রূপকথাতেই পাওয়া যায়। অনেকেই বিভিন্ন সময়ে দাবি করেছেন, রুপকথার এই প্রাণিটার বাস্তবেও অস্তিত্ত্ব রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন সময়েই কথিত ড্রাগন বা ড্রাগনের বাচ্চার ছবি ভাইরাল হয়েছিল। অতি সম্প্রতি ফিলিপাইনের একটি সরীসৃপ কে ‘ড্রাগন’ দাবি করে কয়েকটা পোস্ট ভাইরাল হয়েছে । ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে এই দাবিটি বিভ্রান্তিকর। |
গুজবের উৎস
‘’ড্রাগনের অস্তিত্ব এখনো আছে। এটি ফিলিপাইনের একটি ড্রাগন’’—এমন ক্যাপশনসহ কথিত ড্রাগনের একটি ছবি এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এমন কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে ।
অনুসন্ধান
এই ছবি প্রকাশের পর অধিকাংশ ফেসবুক ব্যবহারকারীই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। অনেকে জানাচ্ছেন, ড্রাগন নামক কোনো প্রাণী কখনো ছিল না। ছবিতে দেখতে পাওয়া প্রাণীটি ড্রাগন নয়, বরং এক ধরনের সরীসৃপ , যাকে Gliding lizard বলে।
এমন কয়েকটি কমেন্টের স্ক্রিনশট দেখুন এখানে ।
৮ই এপ্রিল জনপ্রিয় বিজ্ঞানের গ্রুপ ‘Science Bee তে ‘ লেখেন,
ছবির এই প্রাণীটিকে অনেক ফেসবুক গ্রুপে ড্রাগন বলা হলেও আদতে এটি কোনো ড্রাগন নয়। ড্রাগন হল এমন এক ধরনের কাল্পনিক জীব যা মুখ দিয়ে আগুন বের করতে পারে। ড্রাগনের অস্তিত্ব কেবল চীন, জাপান, কোরিয়া, ইন্দোচীন, মালয়েশিয়া , ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি দেশের উপকথাগুলোতেই পাওয়া যায় বাস্তবে এই ধরনের কোনো প্রাণী এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
ছবির এই প্রাণীটি মূলত Draco গণের একটি টিকটিকি।এদেরকে বাংলায় উরুক্কু টিকটিকি বলে। এই টিকাটিকি দেখতে পৌরাণিক ড্রাগনদের মতো হওয়ায় অনেকেই একে ড্রাগন ভেবে ভূল করা থাকে আর এর প্রতিফলনতো ইতিমধ্যে আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখতেই পাচ্ছি। তবে মজার বিষয় হচ্ছে পৌরাণিক ড্রাগনগুলির সাথে সাদৃশ্য থাকার কারনেই কিন্ত এই গণের নাম ড্রাকো (Draco) রাখা হয়েছে। Draco হল সর্প বা ড্রাগনের ল্যাটিন শব্দ।
এখন পর্যন্ত Draco গণের ৪০ টি প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে। তবে ছবির টিকটিকিটা Draco quinquefasciatus প্রজাতির। নিম্নে এই প্রাণীটির পুরো শ্রেণিবিন্যাস তুলে ধরা হলোঃ-
Kingdom: Animalia
Phylum: Chordata
Class: Reptilia
Order: Squamata
Family: Agamidae
Genus: Draco
species: quinquefasciatus
এই টিকটিকিরা মূলত বন-জঙ্গল, আর্কা বাগান, সেগুন বাগান এবং বিভিন্ন ঝোপঝাড়ে বসবাস করে। গ্রীষ্মমন্ডলীয় ট্রপিকেল রেইন ফরেস্টগুলোতে এদের বেশি পাওয়া যায়। লেজসহ প্রায় ২০-২১ সেন্টিমিটার উচ্চতার এই টিকটিকিদের ঝিল্লিসদৃশ একপ্রকার ডানা থাকে যাকে প্যাটাজিয়াম (বহুবচনে প্যাটাজিয়া) বলে । উড়ার সময় এই ডানা পরিলক্ষিত হয়। যদিও এরা পুরোপুরি উড়তে সক্ষম না, তবে এরা প্রায়শই তাদের এই ডানা ব্যবহার করে উঁচু স্থান বা গাছ থেকে ঝাঁপ দিয়ে ভেসে থাকতে পারে। এখন পর্যন্ত এদের ৬০ মিটার (২০০ ফুট) গ্লাইডিং বা ভেসে থাকার রেকর্ড করা হয়েছে।
অন্যদিকে , ১১ই এপ্রিল ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইট ‘রিউমার স্ক্যানার’ এ প্রকাশিত এই নিবন্ধে প্রাণিটাকে Draco volans হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
রিভার্স ইমেজ সার্চে দেখা যাচ্ছে, ২০১৮ সাল থেকে অনেকে এই একই ছবিকে Draco volans হিসেবে চিহ্নিত করে আপলোড করছেন।
অন্যদিকে , ফেসবুকের কমেন্টে অনেকে এই প্রাণীটিকে Draco sumatranaus হিসেবে অভিহিত করছে ।
অর্থাৎ, একটিমাত্র ছবি দেখে কোনো প্রাণীর প্রজাতি নির্ণয় করা দুরূহ হলেও এটা নিশ্চিত যে এই প্রাণীটি Draco গণ এর অন্তর্ভুক্ত। এবং এই ক্ষুদ্র প্রাণীর সাথে পৌরাণিক ড্রাগন এর কোনোই সম্পর্ক নেই।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সময়েই ফেসবুকে বিভিন্ন আজব প্রাণীর ছবি দিয়ে একে ‘ড্রাগন’ হিসেবে দাবি করা হয়েছে।
এমন কয়েকটা পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে ।
বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ড্রাগনের বাচ্চার এসকল ছবি ভাইরাল হয়েছিল। হোক্স অর ফ্যাক্ট কিংবা স্নপস ডট কম এর মত ওয়েবসাইটে এসকল গুজবের ফ্যাক্টচেক রিপোর্ট ও প্রকাশিত হয়েছিল।
স্নোপস এর এই নিবন্ধে বলা হয়েছে, ২০০৮ এ অনুষ্ঠিত একটি ফটোশপ কনটেস্টে মুখ দিয়ে ধোয়া নির্গমনকারী এই ড্রাগনের বাচ্চার ছবি তৈরি হয়েছিল। পরবর্তীতে সেটাকে আসল ড্রাগন দাবি করে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে।
হোক্স অর ফ্যাক্ট ডট কমের এই নিবন্ধে জানানো হয়েছে, ড্রাগনের বাচ্চার এই ছবিগুলো ফটোশপ ছাড়া আর কিছু নয়।
বিভিন্ন কার্টুন এবং এ্যানিমেশনের ড্রাগনের চরিত্রকেও ফেসবুকে পোস্ট করতে দেখা যায় । অনেক ক্ষেত্রে স্যাটায়ার হিসেবে এগুলো পোস্ট করা হলেও অনেক ক্ষেত্রে সাধারন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এসব পোস্টে বিভ্রান্ত হচ্ছেন।
সার্বিক বিবেচনায়, স্যাটায়ার বাদে অন্যান্য পোস্টগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ বিভ্রান্তিকর সাব্যস্ত করছে ।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান। |