ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনায় ইসলাম ধর্ম পালনে কি কোনো নিষেধাজ্ঞা  আছে?

Published on: November 16, 2022

ব্রাজিলে আযান দেয়া নিষিদ্ধ এবং আর্জেন্টিনায় কেউ প্রকাশ‍্যে আল্লাহর নাম নিতে পারে না– এমন একটি তথ্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত দাবিটির নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ নেই। এই দুই দেশের সংবিধানে ইসলাম ধর্ম পালনে এত কঠিন কোনো নিষেধাজ্ঞার উল্লেখ নেই। সেখানকার মুসলিমরা স্বাধীন ভাবে ধর্ম চর্চার সুযোগ পেয়ে থাকে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক মূলধারার কোনো সংবাদমাধ্যমে ব্রাজিলে আযান নিষিদ্ধ এবং আর্জেন্টিনায় আল্লাহর নাম নেয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টটিকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

ফেসবুকে ভাইরাল এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলে মুসলমানরা সংখ্যালঘু বলে বিবেচিত হলেও তাদের নিজ ধর্ম চর্চার সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন কী ওয়ার্ড ধরে সার্চ করে পিউ রিসার্চ সেন্টারের ২০১১ সালে হালনাগাদ করা একটি রিপোর্ট খুঁজে পাওয়া যায়। এর তথ্য অনুযায়ি আর্জেন্টিনায় মোট জনসংখ্যার ২.৫% লোক মুসলিম এবং ব্রাজিলে ০.১% মুসলিম।

হার্ভার্ড ডিভিনিটি স্কুলের তথ্য মতে ব্রাজিলে ২০০,০০০ এরও বেশি মুসলমান রয়েছে যা দক্ষিণ আমেরিকার দেশ গুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। শিয়া এবং সুন্নি উভয় ধরণের মুসলিম দেশটিতে বসবাস করে। অতীতে ব্রাজিলে কিছু মুসলিম ক্রীতদাসদের জন্য ইসলাম চর্চা, আরবি শেখা বা শেখানো সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু বর্তমানে  ধর্ম পালন করতে এখন আর কোনো লুকোচুরি করতে হয় না। ধর্ম চর্চার জন্য বিভিন্ন শহরে একাধিক মসজিদ রয়েছে। সেখানে নিয়মিত নামাজ পড়া, কুরআন তেলাওয়াত সহ অন্যান্য ধর্মীয় চর্চা হয়। এছাড়া ব্রাজিলের মুসলমানরা রমজান এবং ঈদ উদযাপন করে থাকে। ঈদের নামাজ আদায় করতে মুসল্লিরা মসজিদে জমায়েত হয়, এবং রমজান উপলক্ষে ইফতারের সময় সেখানকার রেস্তোরাঁ গুলোতে বিভিন্ন ধরণের খাবার সাজানো থাকে।

ব্রাজিলের সংবিধান অনুযায়ী দেশের সকল নাগরিকের নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা রয়েছে। সেখানে আজান দেয়া নিষিদ্ধ কি না এ ব্যাপারে কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি। সংবিধান অনুযায়ী, সংখ্যালঘু কোনো ধর্মের মানুষকে অসন্মান বা অপমান করা অপরাধ। এর একটি উদাহরণ হচ্ছে, রিও ডি জেনিরো সিভিল পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান রাউল অলিভেইরা ডায়াস আলভেস ২০১০ সালের মে মাসে একজন মুসলিম মহিলার ধর্মীয় পোশাককে উপহাস করার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন।


তাছাড়া, ব্রাজিলের বিভিন্ন মসজিদে আযান দেয়ার বেশ কিছু ভিডিও পাওয়া যায় ইউটিউবে। এমন কয়েকটি ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে।

অন্যদিকে, দক্ষিণ আমারিকার মধ্যে সবথেকে বড় মসজিদ হচ্ছে কিং ফাহাদ ইসলামিক কালচারাল সেন্টার, যেটা আর্জেন্টিনার বুয়েনোস আইরেসে অবস্থিত। এছাড়াও আর্জেন্টিনায় অনেক বড় বড় মসজিদ রয়েছে যেমনঃ আল আহমেদ মসজিদ, ইসলামিক সেন্টার অফ দি রিপাবলিক অফ আর্জেন্টিনা ইত্যাদি। এ সকল মসজিদে আজান দেয়া হয়, নামাজ পড়া হয়, ইমাম খুতবা দেয়, কুরআন তেলাওয়াত করা হয়। এই সময় আল্লাহর নাম অনেকবার উচ্চারিত হয় এবং তা প্রকাশ্যেই হয়।

আর্জেন্টিনার সংবিধান অনুযায়ী মুসলমানদের ইসলামি নববর্ষের প্রথম দিন উদযাপনের জন্য ছুটি নেয়ার অনুমতি রয়েছে। এর জন্য তাদের কোনো বেতন কাটা যায়না।

তাছাড়া তুরষ্কের ধর্ম বিষয়ক অধিদপ্তর (দিয়ানেট) আর্জেন্টিনার মুসলমানদের জন্য স্প্যানিশ ভাষায় অনুদিত পবিত্র কোরআন সহ ৭০০০ ধর্মীয় বই উপহার দিয়েছে। আর্জেন্টিনায় প্রকাশ্যে আল্লাহর নাম নেয়া যদি নিষেধ থাকত তাহলে দেশটির সরকার অন্য একটি মুসলিম দেশ থেকে আসা  ইসলামিক বই এবং কুরআন গ্রহণ করার অনুমতি প্রদান করত না।

ব্রাজিলে আজান দেওয়া নিষিদ্ধ এবং আর্জেন্টিনায় আল্লাহর নাম নেওয়া যায় না — এ দাবি দুটির সপক্ষে কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। সঙ্গত কারণে, ভিত্তিহীন এই দাবি দুটিকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” হিসেবে সাব্যস্ত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh