সিলেটের ভূমিকম্পকে ঘিরে শেভরন কোম্পানির মাইন বিস্ফোরণের গুজব

Published on: June 3, 2021

গত ২৯ এবং ৩০ মে সিলেট শহরে পরপর বেশ কয়েকটি ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে। রিখটার স্কেলে এসব ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল কম (সবচে বেশিটা ৪.২)। কিন্তু এরকম পরপর ভূমিকম্প ঘটবার অভিনব ঘটনায় এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যে, এসব কোনো ভূমিকম্পের ঘটনা নয়, বরং শেভরন কোম্পানি মাইন বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে মাটির নিচে। এর আগে বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের উদ্ধৃতি দিয়ে এই মাইন বিস্ফোরণের তথ্যটিকে গুজব বলে সনাক্ত করেছেন কেউ কেউ। ফ্যাক্টওয়াচ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার বরাত দিয়ে এই তথ্যটিকে গুজব প্রতিপন্ন করতে প্রয়াসী হয়েছে।

ডাউকি ফল্টের কারণে সিলেট ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। কিন্তু গত ২৯ এবং ৩০ মে পর পর চারটি ভূমিকম্পের ঘটনা এলাকায় যথেষ্ঠ আতঙ্কের সঞ্চার করে। এসব ভূমিকম্প তীব্রতার দিক থেকে কম হলেও পরপর ঘটে যাওয়ার ঘটনাটি সিলেটবাসীর জন্য নতুন ছিল। সঙ্গত কারণেই এই ঘটনাকে ঘিরে গুজবের ডালপালা মেলতে শুরু করে। এরই মধ্যে ফেসবুকে বেশ কিছু পোস্টে বলা হয়, এগুলো ভূমিকম্প নয়, বরং শেভরন কোম্পানি মাটির নিচে মাইন বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে।

এমন কিছু ফেইসবুক পোস্ট দেখুনএখানে, এখানেএবং এখানে



আরো গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে সিলেটের মেয়র শেভরন কোম্পানিকে তলব করেছেন। পরবর্তীতে টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে মেয়র মহোদয় বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, মাইন বিস্ফোরণের তথ্যটি স্রেফ গুজব ছাড়া আর কিছু নয়।



(এমবেডেড ভিডিও ১)

কিন্তু তারপরেও গুজব ছড়াতে থাকে। সেই প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টওয়াচ ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণকারী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আর্কাইভ থেকে এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে উদ্যোগী হয়। পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় ভূমিকম্প পর্যবেক্ষক সংস্থা USGS এর আর্কাইভে গিয়ে ৩০ মে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের ডাউকি ফল্ট বরাপর ৪.২ মাত্রার একটি ভূমিকম্পের রেকর্ড পাওয়া যায়।

 

আরেকটি খ্যাতনামা ভূমিকম্প পর্যবেক্ষক সংস্থা IRIS এর সাইটে একই ভূমিকম্পের রেকর্ড পাওয়া যায়। সময়কাল, অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ এবং ভূগর্ভের কত গভীরে ঘটেছে – এসব বিবেচনা থেকে নিশ্চিতভাবে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে দুটি সংস্থার পর্যবেক্ষণে একই ভূমিকম্পের কথা বলা হয়েছে।

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণেও এই কম্পনটির রেকর্ড পাওয়া যাচ্ছে। স্থানকাল বিবেচনায় এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে।


ভূমিকম্পটি মাটির ৫৮ কিলোমিটার গভীরে ঘটেছে, এই মর্মে দুই আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থাই রায় দিয়েছে। ভূগর্ভের ৫৮ কিলোমিটার গভীরে মাইন বিস্ফোরণ একটা অসম্ভব ঘটনা। ফলে এটা নিশ্চিতভাবেই মিথ্যা।

সব মিলিয়ে বৈজ্ঞানিক উপাত্ত থেকেই এটা নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করা যায় যে, সিলেটের ভূমিকম্প কোনো মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা নয়। এটি একটি প্রাকৃতিকভাবে সংঘটিত ভূমিকম্পের ঘটনা।

সিলেটের ভূমিকম্পের গুজব থেকে আরেকটা জিনিস আমরা খেয়াল করেছি। সামাজিক মাধ্যমে যখন গুজবটি ছড়াতে শুরু করে, তখন অনেকেই এটাকে সন্দেহ করে মন্তব্য করেছেন। যাচাই করার কথা বলেছেন। একটা গুজব ছড়ানোর মুহূর্তে জনগণের তথ্য যাচাইয়ের এই সদিচ্ছাকে সামাজিকমাধ্যম স্বাক্ষরতার একটা চমৎকার নমুনা হিসেবে পাঠ করা যায়।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ fb.com/search.ulab

 

Leave a Reply