আজারবাইজানে আটকের ভিডিও হামাসের নামে প্রচার

Published on: October 10, 2023

ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর  শীর্ষস্থানীয় জেনারেল এবং নানান ডিফেন্স গ্রুপের প্রধানদের গ্রেফতার করা হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, এই ভিডিওতে যাদেরকে দেখানো হয়েছে, তারা সবাই মধ্য এশিয়ার বিরোধপূর্ণ নাগর্নো-কারাবাখ এর রাজনীতিবিদ, এবং আজারবাইজান এর রাষ্ট্রীয় বাহিনি সম্প্রতি তাদেরকে বিচ্ছিন্নতাবাদের অপরাধে আটক করেছে। যেহেতু এরা কেউই ইসরাইলের কোনো কর্মকর্তা নন, তাই ফ্যাক্টওয়াচ এই পোস্টগুলোকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।

গুজবের উৎস

ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে

 

২৮ সেকেন্ডের এই ভিডিও আপলোড করে জনৈক হাফেজ আসাদুজ্জামান ক্যাপশনে লিখেছেন,

কাফেরদের মাথা সবসময়ই নিচুতেই থাকবে….

হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে গাড়ির ভিতর থেকে যাদেরকে নামানো হচ্ছে তারা কিন্তু সাধারণ লোকদের কেউ না। তারা ইসরায়েলের মতো রাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর কমান্ডার, জেনারেল এবং নানান ডিফেন্স গ্রুপের প্রধান। পোশাক দেখে কি মনে হয়, তারা যুদ্ধের মাঠে ছিল? উঁহু। এদেরকে তাদের কার্যালয় থেকে ধরে আনা হয়েছে। এবার বুঝুন কোথায় ঢুকেছে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী যোদ্ধারা?

মরার হিসাব তো অসংখ্য। পদাতিক বাহিনীর প্রধানকেও কিন্তু হত্যা করা হয়েছে। অবস্থা বেগতিক!

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

ভাইরাল হওয়া ২৮ সেকেন্ডের ভিডিওর অডিওতে মূল অডিও মুছে দিয়ে কেবলমাত্র কালিমা (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) যুক্ত করা হয়েছে। ফলে এই অডিও থেকে কোনো তথ্য বের করা সম্ভব হয়নি।

ভিডিও থেকে দেখা যাচ্ছে, ৩ টা স্থানে ৩ টি গাড়ি থেকে ৩ জন বন্দীকে নামানো হচ্ছে। যারা এই নামানোর কাজটি করছে, তাদের পরনে সামরিক বাহিনীর মত সাজসরঞ্জাম রয়েছে, এবং তাদের বুকের ভেস্টে DTX লেখা রয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেল, এই DTX হল আজারবাইজান এর State Security Service , যাকে আজারবাইজানি ভাষায় বলা হয়, Dövlət Təhlükəsizlik Xidməti বা সংক্ষেপে DTX

রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে এই ভিডিওর মূল উৎস সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, DTX Official Channel নামক ইউটিউব চ্যানেল থেকে গত ৫ই অক্টোবর আপলোড করা একটি ভিডিওর অংশবিশেষ ব্যবহার করে ইসরাইলী জেনারেলদের আটকের দাবিতে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

এই ইউটিউব ভিডিওর শিরোনামে দাবি করা হয়েছে, কারাবাখ এর সশস্ত্র কার্যক্রম এর আয়োজকদের গ্রেফতার করা হয়েছে ।  (আজারবাইজান এর ভাষা থেকে অনুবাদকৃত)

আজারবাইজান এর সরকারী বার্তা সংস্থা , Azerbaijani Press Agency বা APA এর এই খবর থেকে জানা যাচ্ছে, স্টেট সিকিউরিটি সার্ভিসের নেতৃত্বে Bako Saakyan, Arkady Ghukasyan এবং David Ishkhanyan নামক ৩ ব্যক্তিকে গত ৩রা অক্টোবর,২০২৩ তারিখে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রের কারাবাখ অঞ্চলে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সাথে জড়িত ছিলেন। তারা উক্ত অঞ্চলে সশস্ত্র গ্রুপ গড়ে তুলেছিলেন এবং নিজেদেরকে তথাকথিত ‘নাগার্নো-কারাবাখ প্রজাতন্ত্রের রাষ্টপতি’ কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি হিসেবে দাবি করতেন।

আজারবাইজান এর আরেকটি সংবাদমাধ্যম, আজারনিউজ থেকেও একই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

অন্যদিকে, আর্মেনিয়ার সংবাদ মাধ্যম , আর্মেনিয়া নিউজ এর এই খবরে  Bako Sahakyan ও Arkady Ghukasyan কে নাগর্নো-কারাবাখ প্রজাতন্ত্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি, এবং Davit Ishkhanyan কে সংসদের সাবেক স্পিকার হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। আজারবাইজান এর স্টেট সিকিউরিটি সার্ভিসের হাতে তাদের গ্রেফতারের খবরও এখানে নিশ্চিত করা হয়েছে।

আজেরি প্রেস এজেন্সির সূত্র ব্যবহার করে Bako Sahakyan এর উইকিপিডিয়া পেজও জানাচ্ছে,  গত ৩রা অক্টোবর আরো কয়েকজন সহ Bako Sahakyan কে আজারবাইজান এর স্টেট সিকিউরিটি সার্ভিস গ্রেফতার করেছে। Arkadi Ghukasyan এবং Davit Ishkhanyan এর উইকিপিডিয়া পেজ ও একই তথ্য জানাচ্ছে।

অর্থাৎ, একাধিক সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে এই ৩ জন শীর্ষ রাজনীতিবিদ বিরোধপূর্ণ নাগর্নো-কারাবাখ এর শীর্ষ নেতৃত্বে ছিলেন, এবং তারা ৩রা অক্টোবর আজারবাইজান এর রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন।

অপরদিকে, ৭ই অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা ইসরাইলের মূল ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ে বেশ কিছু ইজরাইলী নাগরিককে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায়। আল জাজিরার এই খবর থেকে জানা যাচ্ছে , হামাসের মতে এই জিম্মিদের সংখ্যা ১০০ এর বেশি, এবং ইসরাইলী সেনাবাহিনীর মতে ‘কয়েক ডজন’। তবে আটককৃতদের নাম,পরিচয় কেউ নিশ্চিত করেনি। ইসরাইলী সেনাবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তাকে হামাস আটক করেছে মর্মে গণমাধ্যমে কোনো খবর ও প্রকাশিত হয়নি।

সিদ্ধান্ত

হামাস যোদ্ধারা ইসরাইলের কিছু নাগরিককে জিম্মি হিসেবে আটক করেছে, এটা সত্য। তবে ভাইরাল ভিডিওতে যাদেরকে দেখানো হয়েছে, তারা কেউই ইসরাইলের নাগরিক নন, বরং তারা বিরোধপূর্ণ নাগর্নো-কারাবাখ এর শীর্ষ রাজনীতিবিদ । হামাস তাদেরকে আটক করেনি, বরং আজারবাইজান এর সরকারী বাহিনী তাদেরকে কিছুদিন পূর্বেই আটক করেছি। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এ সংক্রান্ত দাবিগুলোকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh