বিএনপি’র দুই শীর্ষ নেতা কোনো মডেলের সঙ্গে নিরুদ্দেশ হননি

Published on: December 9, 2022

ভাইরাল মডেল ইশরাত পায়েলের সাথে ভেগে গেলেন মির্জা আলমগীর মির্জা আব্বাস – এমন একটি খবর অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে।  ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস কে গত ৯ই ডিসেম্বর গভীর রাতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, এবং পরে তাদেরকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে । এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তারা কারাগারে আছেন । সঙ্গত কারণেই তাদের পক্ষে মডেল ইশরাত পায়েল বা অন্য কারো সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

গুজবের উৎস

এমন ক্যাপশনযুক্ত কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে

বাংলা পলিটিক্স এর এই পোস্টে বলা হয়,  মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস রাতের আঁধারে মডেল ইশরাত পায়েলের সাথে পালিয়ে গেলেন

 বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস শুক্রবার, ডিসেম্বর ৯, ২০২২, রাত তিনটার দিকে, ঢাকার তাঁদের নিজ নিজ বাসা থেকে বেরিয়ে মডেলও উঠতি নায়িকা ইশরাত পায়েলের সাথে পালিয়ে গেছে।

 বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল-এর সহধর্মিণী রাহাত আরা বেগম বিএনপি মিডিয়া সেল-এর আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনকে ফোনে এই সংবাদ জানিয়েছেন।

 শনিবার, ডিসেম্বর ১০, ২০২২, অনুষ্ঠিতব্য, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের এক দিন আগেই চর্চায় থাকা রঙিন পর্দার মডেলের সাথে পালিয়ে গেছেন এই দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতা ।

ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান

বিবিসি বাংলার এই খবর থেকে জানা যাচ্ছে, ৯ই ডিসেম্বর রাতে বিএনপির এই দুই নেতাকে সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছিল, এবং পরে তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে আটক দেখানো হয়। বিবিসি থেকে প্রতিবেদনের এই অংশটা উদ্ধৃত করা হল:

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনায় পল্টন থানার মামলায় গ্রেফতার দেখানোর কথা জানিয়েছে ডিবি পুলিশ।

বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ওই দুই নেতাকে তাদের নিজ নিজ বাসভবন থেকে তুলে নেয়ার পর পুলিশ জানায় যে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হারুন অর রশিদ বলেছেন , দুদিন আগে নয়াপল্টনে যে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল সে বিষয়ে তাদের কাছে কিছু বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে।

মির্জা আলমগীরের স্ত্রী রাহাত আরা বেগম বিবিসি বাংলাকে জানান, রাত তিনটার দিকে ডিবির জন সদস্য তাদের ফ্ল্যাটে এসে তার স্বামীকে আটক করে নিয়ে যান। নীচে আরও অনেকে ছিলেন।

মিসেস রাহাত বলেন, আমি তাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে উনাকে কিসের ভিত্তিতে আটক করা হচ্ছে। তখন ডিবি সদস্যরা বলেছে নতুন মামলা দায়ের হয়েছে। সেটার জন্য। কিন্তু কী মামলা, কারা দায়ের করেছে কিছুই বলেনি। শুধু বলেছে উপরের নির্দেশ আছে।”

রাত থেকেই তার বাসার নীচে পুলিশ অবস্থান নিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।

অন্যদিকে মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস সাংবাদিকদের বলেন, তাকে পুলিশ জানিয়েছে যে কিছু সময় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তার স্বামীকে ছেড়ে দেয়া হবে।

তিনি বলেন, “আমাকে রাতে সে ডেকে বলল যে আমাকে ডিবি নিয়ে যেতে এসেছে। আমি তো বিশ্বাস করিনি। পরে ডিবির সদস্যরা আমাকে বললেন উনাকে নিয়ে গেলাম, উনার সাথে কথাবার্তা বলে আমরা আবার দিয়ে যাবো। আমি বললাম তাহলে এখানেই কথা বলেন। তখন বলল, না উনাকে আমাদের অফিসে নিয়ে যেতে হবে।”


অন্যদিকে বাংলাদেশের জাতীয় বার্তা সংস্থা, বাসস এর এই খবরে বলা হয়েছে, রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় করা নয়াপল্টন থানার মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

শুক্রবার তাদের আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম। অপর দিকে তাদের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

শুক্রবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে  ডিবির কার্যালয় থেকে তাদের আদালতে নেয়া হয়। এরআগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতার দেখিয়েছে ডিবি।

অন্যান্য সংবাদমাধ্যম থেকেও একই খবর জানা যাচ্ছে। মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর স্ত্রী রাহাত আরা বেগম সাংবাদিকদের সামনে তার স্বামীর আটকের বর্ণনা দিয়েছেন। এই ভিডিওও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের ওয়েবসাইটে এবং ইউটিউব চ্যানেলে দেখা যাচ্ছে।

অর্থাৎ, এসব প্রতিবেদন থেকে নিশ্চিত যে, বিএনপি’র এই দুই নেতা স্বেচ্ছায় কোথাও কারো সাথে পালিয়ে যান নি, বরং তাদেরকে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী নিজ বাসা থেকে ধরে এনেছেন। বর্তমানে তারা কারাগারে আছেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইশরাত পায়েল একজন জনপ্রিয় মডেল। সম্প্রতি মিসেস ইউনিভার্স বাংলাদেশ নামক রিয়েলিটি শো এর ফাইনাল পর্ব উপস্থানা এবং তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে তিনি আলোচিত হয়েছিলেন।

ফেসবুকের কয়েকটি পোস্ট ছাড়া ইশরাত পায়েল এবং বিএনপি নেতাদের নিয়ে এই ধরনের মুখরোচক সংবাদ মূলধারার কোনো সংবাদমাধ্যমে দেখা যায়নি।

সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ এই পোস্ট গুলোকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh