প্রথম আলোর নামে বানানো ফটোকার্ডে বাধ্যতামূলক বিয়ে নিয়ে ভুয়া আইন

Published on: September 12, 2023

সম্প্রতি দৈনিক প্রথম আলোর নামে বানানো ফটোকার্ডে একটি তথ্য ফেসবুকে ভাইরাল হতে দেখা যাচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশে এইচএসসি পাশ করার সাথে সাথেই বিয়ে করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।কিন্তু, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে ভাইরাল হওয়া তথ্যটি প্রথম আলো বা অন্য কোনো মূলধারার সংবাদমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, ভাইরাল হওয়া ফটোকার্ডে তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ৩০ আগস্ট ২০২৩। কিন্তু সেই তারিখে  বা তার কাছাকাছি সময়ে বাধ্যতামূলক বিয়ে সংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রথম আলোর ই পেপার, ওয়েবসাইট এবং অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রথম আলোর অফিসিয়াল ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, এই ফটোকার্ডটি নকল যা তাদের তৈরি করা নয়। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এই পোস্টগুলোকে মিথ্যা হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।

ফেসবুকে ভাইরাল এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

‘এইচএসসি পাশ করার সাথে সাথেই বিয়ে করতে হবে’ বাংলাদেশে এমন কোনো আইন প্রণয়ন করা হয়েছে কি না এ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে প্রথম আলো সহ বেশ কিছু মূলধারার সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশে বিয়ের ব্যাপারে আইন সম্পর্কিত কিছু প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। তবে, সেখানে বাংলাদেশের এমন কোনো আইন খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদনগুলো দেখুন এখানে এবং এখানে

পরবর্তিতে প্রথম আলোর অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে আপলোড করা আসল কিছু ফটোকার্ড অনুসন্ধান করে দেখা যায় ভাইরাল হওয়া ফটোকার্ডটির আদলে প্রথম আলো কোনো ফটোকার্ড  তৈরি করেনা। আবার,  ভাইরাল ফটোকার্ডে তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ৩০ আগস্ট ২০২৩ এবং প্রতিবেদকের নাম হিসেবে মাজহারুল আসিফ লেখ হয়েছে। দাবি করা হচ্ছে, তিনি প্রথম আলোর একজন চিফ রিপোর্টার। কিন্তু, বিভিন্ন ভাবে ভিন্ন ভিন্ন কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করেও মাজহারুল আসিফ নামের প্রথম আলোর বর্তমান কোনো চিফ রিপোর্টারের সন্ধান পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, গত ৩০ আগস্ট প্রথম আলো থেকে যতগুলো ফটোকার্ড  প্রকাশ করা হয়েছিল তার মধ্যে ভাইরাল ফটোকার্ডটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া পোস্টে আরও দাবি করা হয়েছে যে, এইচএসসি পাশ করার সাথে সাথে বাধ্যতামূলক বিয়ে করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে! পাত্র বা পাত্রী খোঁজার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে এক স্পেশাল ম্যারেজ ব্যুরো টিম কে! শিক্ষামন্ত্রী ড.দীপু মনি নিজে এই কাজ বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ নিবেন! কিন্তু, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এমন কোনো ঘোষণা এসেছে কি না এ সম্পর্কিত নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের সংবিধানেও এমন কোনো আইনের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীন ভাবে এগুলো প্রচার করা হচ্ছে।

প্রথম আলো তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে গত ৪ সেপ্টেম্বর আপলোড করা একটি পোষ্টে নিশ্চিত করে যে, ভাইরাল হওয়া ফটোকার্ডটি প্রথম আলো থেকে প্রকাশিত হয়নি। প্রথম আলো এমন কোনো ফটোকার্ড  তৈরিও করেনি। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এই ফটোকার্ডকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh