পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানে ট্রেন চলাচলের ভূয়া তথ্য

Published on: March 18, 2024

যা দাবি করা হচ্ছেঃ ১৯৫০-১৯৬০ এর দশকে ‘মাশরিক-মাগরিব এক্সপ্রেস’ নামক ট্রেন পাকিস্তানের বেলুচিন্তান থেকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম পর্যন্ত চলাচল করতো। ট্রেনটির বেলুচিস্তানের কোহ-এ-তাফতান হতে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে পৌছাতে সময় লাগতো প্রায় ৬ দিন। ট্রেনটির রুটগুলো ছিলোঃ- (লাহোর-ওয়াগা-অমৃতসার) বর্ডার, দিল্লি,বিহার,হাওড়া (গেদে-দর্শনা) বর্ডার, গোয়ালন্দঘাট, ফেরিতে নারায়ণগঞ্জ হয়ে চট্টগ্রাম।

যা পাওয়া যাচ্ছে: ভারতের ভিতর দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানে এমন কোন ট্রেন কখনো চলাচল করেনি। উইকিপিডিয়ার একটি ভুল সম্পাদনার জন্য এই ভূল তথ্যটি ছড়িয়ে পড়ে।  এ কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এটিকে “ভুল তথ্য” হিসেবে চিহ্নিত করছে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি নমুনা পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

পোস্টে যা দাবি করা হচ্ছেঃ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলো থেকে জানা যাচ্ছে ১৯৫০-১৯৬০ এর দশকে ‘মাশরিক-মাগরিব এক্সপ্রেস’ নামক ট্রেন পাকিস্তানের বেলুচিন্তান থেকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম পর্যন্ত চলাচল করতো। ট্রেনটির বেলুচিস্তানের কোহ-এ-তাফতান হতে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে পৌছাতে সময় লাগতো প্রায় ৬ দিন। ট্রেনটির রুটগুলো ছিলোঃ- (লাহোর-ওয়াগা-অমৃতসার) বর্ডার, দিল্লি,বিহার,হাওড়া (গেদে-দর্শনা) বর্ডার, গোয়ালন্দঘাট, ফেরিতে নারায়ণগঞ্জ হয়ে চট্টগ্রাম।

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানঃ

১৮ই জুন, ২০২১ সালে “Information about a fictitious train on ‘reliable’ Wikipedia, picked up by websites and academic journals: Here is how it originated” শিরোনামে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম OpIndia একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে যায় মাশরিক-মাগরিব এক্সপ্রেস ট্রেন সম্পর্কিত তথ্যগুলো ছড়িয়েছে ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর PAKHIGHWAY নামে একজন উইকিপিডিয়া সম্পাদকের মাধ্যমে। উক্ত সম্পাদক Pakistan Eastern Railway নামক উইকিপিডিয়া পেজ সম্পাদনের সময় তথ্যগুলো জুড়ে দেয়। উইকিপিডিয়ার উক্ত সম্পাদনায় বলা হয়,  ‘মাশরিক-মাগরিব এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি ১৯৫০-১৯৫৫ সাল পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানের কোহ-এ-তাফতান হতে পূর্ব পাকিস্তানের চট্টগ্রাম পর্যন্ত প্রায় চলাচল করতো এবং ট্রেনটি ভারত-পশ্চিম পাকিস্তানের আটারি বর্ডার থেকে ভারত পূর্ব পাকিস্তানের বেনাপোল বর্ডার পর্যন্ত ১৯৮৬ কি.মি ভারতীয় রেলওয়ে ট্র্যাক ব্যবহার করতো।

তবে বর্তমানে উইকিপিডিয়া Pakistan Eastern Railway পেজ থেকে মাশরিক-মাগরিব এক্সপ্রেস’ ট্রেনের এসকল তথ্য সরিয়ে ফেলেছে।

OpIndia এর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে ভারতের ভিতর দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানে ট্রেন চলাচল করতো তার কোন প্রমাণ নেই। এমন কোন ট্রেন থাকলে তা সবার জানা ঐতিহাসিক কোন ঘটনা হতো। তাছাড়া উইকিপিডিয়ার লজিক খুব দূর্বল। এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন থেকে থাকলে তা কোহ-এ-তাফতানের মতো ছোট শহর থেকে যাত্রা শুরু করবে না, লাহোর বা করাচির মতো বড় কোন শহর থেকে যাত্রা শুরু করবে। একইভাবে এই ট্রেন বাংলাদেশের পূর্বতম শহর চট্টগ্রামে না গিয়ে বাংলাদেশের প্রধানতম শহর ঢাকা যাওয়ার কথা।

তবে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তানের দুই অংশকে জুড়তে ১২৮০ কি.মি ট্রানজিট করিডোর নির্মাণের প্রস্তাবনা দিয়েছিলো। তবে কংগ্রেস এবং ব্রিটিশ সরকার কেউ রাজি না হওয়ায় সে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যাচ্ছে পর্যাপ্ত প্রমাণ না থাকা এবং যৌক্তিক ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও মাশরিক-মাগরিব এক্সপ্রেস ট্রেনের তথ্যটি উইকিপিডিয়ায় তিন বছর ধরে ছিলো। ২০২০ সালের আগস্ট মাসে তথ্যটি উইকিপিডিয়া থেকে মুছে ফেলেছে। PAKHIGHWAY নামক ইউজার নেমের আইডিটি ব্যান করা হয়েছে।

উইকিপিডিয়ার  ভূল তথ্যটি যিনি এডিট করেছেন সেই Sreyashi Dastidar ১০ জুন, ২০২১ সালে ফেসবুকে একটি পোস্ট করে। পোস্টটি দেখুন এখানে

বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে ব্রডগেজ এবং পশ্চিমাঞ্চলে মিটারগেজ ট্রেন চলাচল করতে দেখা যায়। এই দুই অঞ্চলে দুই ধরনের ট্রেনের জন্য আলাদা ধরনের রেললাইনও রয়েছে। সেক্ষেত্রে, বাংলাদেশের ( বা তৎকালীন পূর্ববঙ্গের) পশ্চিমাঞ্চলের দর্শনা থেকে পূর্বের চট্টগ্রাম পর্যন্ত সকল লাইনে চলাচল একটি একক ট্রেন চলাচল করত- এমন তথ্যও ঠিক বিশ্বাসযোগ্য নয়।

সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলো পূর্বেও বিভিন্ন সময় ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। ২০২২ সালের ৬ই ডিসেম্বর তারিখে  রিউমর স্ক্যানার এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

অতএব সার্বিক দিক বিবেচনা করলে দেখা যাচ্ছে  ‘মাশরিক-মাগরিব এক্সপ্রেস’ নামক কোন ট্রেন ভারতের মধ্যে দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানে চলাচল করতো না। উইকিপিডিয়ার একজন সম্পাদকের ভূল তথ্য দেওয়ার জন্য এই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। তবে দীর্ঘ ৩ বছর পর উইকিপিডিয়া এই ভূল তথ্যটি সরিয়ে ফেলে। এসব কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এটিকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করছে।

 

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh