Published on: March 14, 2024
যা দাবি করা হয়েছে: আরবি শব্দ আলহামদুলিল্লাহ, সুবহানাল্লা, জাযাকাল্লাহ নিয়ে বিরূপ মন্তব্যকারী নাস্তিক নোমানকে কঠিন জবাব দিয়েছেন ড. সলিমুল্লাহ খান। এমন দাবির সাথে কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমানের একটি বক্তব্য এবং ড. সলিমুল্লাহ খানের তিনটি বক্তব্যের ভিডিও একসাথে পোস্ট করা হয়েছে।
যা পাওয়া যাচ্ছে: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে ATN News থেকে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান বাংলা ভাষা নিয়ে বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যের এক পর্যায়ে বাংলা ভাষার মধ্যে আরবি শব্দের ব্যবহারের উদাহরণ বোঝাতে আলহামদুলিল্লাহ, সুবহানাল্লা, জাযাকাল্লাহ শব্দগুলো উচ্চারণ করেন। বক্তব্যটির কিছু অংশ বর্তমানে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। অপরদিকে সলিমুল্লাহ খানের যেই তিনটি বক্তব্যের কিছু কিছু অংশ ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে তা সাত ও ছয় বছরের পুরনো। অর্থাৎ স্বকৃত নোমানকে কোনোপ্রকার জবাব নয়, বরং ভিন্ন ভিন্ন প্রসঙ্গে সলিমুল্লাহ খান পূর্বে বক্তব্যগুলো দিয়েছিলেন। |
এমন কয়েকটি পোস্টের নমুনা এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:
শিক্ষক ড. সলিমুল্লাহ খান এবং কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমানকে নিয়ে ফেসবুকে যে খবরটি ছড়িয়েছে সেটি যাচাই করতে প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে ফেসবুকে এবং ইউটিউবে অনুসন্ধান করা হয়। সেখান থেকে পাওয়া যায়, “আ মরি বাংলা ভাষা” শিরোনামে ATN News থেকে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন প্রভাষ আমিন, আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে ছিলেন শিক্ষক ড. মুনতাসীর মামুন এবং স্বকৃত নোমান। মূল ভিডিওটির দৈর্ঘ্য ৪০ মিনিট ৫৫ সেকেন্ড।
উল্লেখ্য, ২৭ মিনিট ২২ সেকেন্ড অংশে সঞ্চালক প্রভাষ আমিন স্বকৃত নোমানের কাছে ভাষা নিয়ে প্রশ্ন করেন। প্রশ্নটির সারমর্ম এই যে, বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবে পেতে আমাদের অনেক সংগ্রাম করতে এবং জীবন দিতে হয়েছে। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার্থে এই সংগ্রাম করতে হয়েছিল। যদিও দেখা যাচ্ছে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। তাহলে ৭২ বছর পরে এসে আমাদের এতো বড় আন্দোলনের অর্জনটা কি।
২৮ মিনিট ২৮ সেকেন্ড অংশে স্বকৃত নোমান তার বক্তব্যে বলেন, “আমি যখন ৯০ দশকে বাড়ি থেকে দূরে পড়তে গিয়েছিলাম, তখন আমি আমার বাবাকে চিঠি লিখতাম। বাবাও আমাকে চিঠি লিখতেন। বিশুদ্ধ বাংলা ভাষায় সাধু ভাষায় বাবা লিখতেন। আমার আব্বার সাথে যখন আমি কথা বলতাম তিনি বাংলা ভাষায়ই কথা বলতেন। এখন আপনি খেয়াল করে দেখবেন, অধিকাংশ তরুণ প্রজন্মের সাথে যখন কথা বলবেন, সবার কথা বলছি না। কেমন আছো? মাশাআল্লাহ, ভাত খাবে? ইনশাআল্লাহ, তুমি সুস্থ আছোতো? জাযাকাল্লাহ, আলহামদুল্লিলাহ”। লক্ষণীয় যে স্বকৃত নোমানের মূল বক্তব্য আরও দীর্ঘ। তবে ফেসবুকে এই অংশটুকু ভাইরাল হয়েছে। আ মরি বাংলা ভাষা শিরোনামে ATN News থেকে প্রকাশিত সেদিনের অনুষ্ঠানটি দেখতে পাবেন এখানে।
প্রসঙ্গগত যে, স্বকৃত নোমানের বক্তব্যের উৎস জানা গেছে। তবে নোমান এবং সলিমুল্লাহ খানের বক্তব্য একসাথে পোস্ট করে যে দাবিটি করা হয়েছে, অর্থাৎ স্বকৃত নোমানকে কঠিন জবাব দিয়েছেন ড. সলিমুল্লাহ খান। প্রমাণস্বরূপ সলিমুল্লাহ খানের বক্তব্যের যেই ভিডিও প্রচারিত হয়েছে, তার উৎস জানতেও প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে ফেসবুকে এবং ইউটিউবে অনুসন্ধান করা হয়। মূলত ভিডিওগুলোতে সলিমুল্লাহ খানকে যে কথাগুলো বলতে দেখা যাচ্ছে তার থেকেই কিছু কি-ওয়ার্ড নেওয়া হয় এবং তা দিয়ে সার্চ করা হয়। সার্চের মাধ্যমে সলিমুল্লাহ খানের তিনটি বক্তব্যের অস্তিত্ব মিলেছে। তিনটি ভিডিও এককরে পোস্ট করা হয়েছে। স্বকৃত নোমানের বক্তব্য আগে এবং তারপরেই সলিমুল্লাহ খানের বক্তব্য যা মূলত এডিটের সাহায্যে একসাথে করা হয়েছে।
বলাবাহুল্য, সলিমুল্লাহ খানের তিনটি বক্তব্য মূলত ভিন্ন ভিন্ন সময়ে এবং ভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রকাশিত হয়েছিল। ১২ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে দীপ্ত টিভিতে TalkShow – সাম্প্রতিক রাজনীতি | সলিমুল্লাহ খান, ড.আখতারুজ্জামান, ড.তারেক শামসুর রেহমান, অজয় দাশগুপ্ত শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিও থেকে সলিমুল্লাহ খানের বক্তব্যের কিছু অংশ ভাইরাল ভিডিওতে ব্যবহার হয়েছে। ভিডিওটি দেখতে পাবেন এখানে।
১ জুলাই ২০১৮ তারিখে বাঙালি মুসলমানের মন শিরোনামে একাত্তর টিভিতে একটি টকশো অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে অতিথি হিসেবে ছিলেন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান। সলিমুল্লাহ খানের সেদিনের বক্তব্যের কিছু অংশ বর্তমানে ভাইরাল ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে। ভিডিওটি দেখতে পাবেন এখানে।
তাছাড়া ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে ইনস্টিটিউট অব কালচার এডুকেশন এন্ড রিসার্চ সেন্টারের সাওল মিলনায়তনে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থা শিরোনামের উপরে সলিমুল্লাহ খান একটি বক্তব্য দিয়েছিলেন। সেই বক্তব্যের কিছু অংশও ভাইরাল ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে। ভিডিওটি দেখতে পাবেন এখানে।
সুতরাং সবকিছু বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, স্বকৃত নোমান ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে বক্তব্য দিয়েছেন । অথচ সলিমুল্লাহ খান তার বক্তব্যগুলো দিয়েছেন যথাক্রমে ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া দাবিগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ |