শামীম ওসমানের স্লোগান বিকৃত করে প্রচার

Published on: August 7, 2023

 

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের ১৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে যেখানে  শামীম ওসমানকে স্লোগান দিচ্ছেন সাম্প্রদায়িক এবং আওয়ামী লীগ বিরোধী স্লোগান দিতে শোনা যাচ্ছে।

কিন্তু ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে ভিডিওটি গত ২৮ জুলাই আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে শামীম ওসমানের দেয়া স্লোগানের ভিডিওর খন্ডাংশ। ভিডিওটির অডিও ডিজিটাল  এডিটিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিকৃত করা হয়েছে।  

গুজবের উৎস :

ফেসবুকে ভাইরাল কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানঃ

গত ২৮ জুলাই, ২০২৩ তারিখে দি ডেইলি স্টার বাংলার একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে  রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ছাত্রলীগ এই সংগঠনশান্তি সমাবেশকরেছিলো। 

যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ছাত্রলীগ আয়োজিত সমাবেশ শুরুর সময় উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল ইসলাম নিখিল, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। নেতাকর্মীদের নিয়ে পরে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন নারায়ণগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান।

ঢাকা পোস্টের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে দুপুর আড়াইটায় বিশাল মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন আওয়ামী লীগের নেতা শামীম ওসমান। বিকেল ৩টার দিকে বৃষ্টি শুরু হলে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে তিনিও বৃষ্টিতে নেমে পড়েন এবং স্লোগান দিতে থাকেন। শামিম ওসমান একটি রিকশার ওপর চড়ে মিছিলে নেতৃত্ব দিয়ে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করেন। এ সময় তিনি হ্যান্ড মাইক নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।

ঢাকা পোস্ট ছাড়াও  কালের কণ্ঠ, যুগান্তর সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে একই খবর পাওয়া যাচ্ছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ইউটিউব ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে শামীম ওসমান শান্তি সমাবেশে “খেলা হবে, খেলা হবে”, “জিতবে কারা”, “জোরে বলো, আরও জোরে”, “লড়াই হবে”, “শেখ হাসিনা, শেখ হাসিনা, আল্লাহ আল্লাহ” এসব বলে স্লোগান দিচ্ছেন।

কিন্তু ফেসবুকে ভাইরাল পোস্টে দেখা যাচ্ছে শামীম ওসমান স্লোগান দিচ্ছেন “হরে কৃষ্ণ হরে রাম শেখ হাসিনার বাপের নাম, বাপ ছিলো কম্বল চোর মেয়ে হলো ভোট চোর, আওয়ামী লীগ আউলিয়া দেশ করেছে দেউলিয়া।” কিন্তু ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে শামীম ওসমান এমন কোন স্লোগান দেননি।

তবে ভাইরাল ভিডিওর স্ক্রিনশটগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে সেগুলো বর্তমান সময়ে শামী্ম ওসমানের শান্তি সমাবেশে দেয়া স্লোগানের সাথে মিলে যাচ্ছে।

এছাড়া, ১৪ সেকেন্ডের ভিডিওটা ভাল্ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে কয়েক জায়গায় স্লোগান এর সাথে শামীম ওসমানের ঠোঁট নড়ার অমিল দেখা যায়।

               বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম থেকে প্রাপ্ত আসল স্লোগানের ভিডিও

 

                 ভাইরাল ফেসবুকের নকল স্লোগানের ভিডিও

 

২৬ এপ্রিল ২০২৩ সালে “পাঁচ মিনিটও লাগবে না, বিএনপিকে শামীম ওসমানের হুঁশিয়ারি” শিরোনামে বাংলা নিউজ টুয়েন্টিফোর একটি সংবাদ প্রচার করে। সেখান থেকে জানা যাচ্ছে শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জের একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন “নারায়ণগঞ্জে অনেক নেতা আছেন নৌকা নিয়া পাশ করেন। কে কার উকিল বাপ, কে কার উকিল মা আমরা জানি। এটা কী স্লোগান আমি জানতে চাই। তারা বলেছে, “হরে কৃষ্ণ হরে রাম, শেখ হাসিনার বাবার নাম”। পাঁচ মিনিটও লাগবে না আমাদের মাটির নিচ থেকে খুঁজে বের করে আনতে। ধৈর্য ধরেছি। জনগণ ভীমরুলের চাক নিয়ে আপনাদের সামনে এসে হাজির হবে। আমি সবকিছু বুঝি। বাংলাদেশে খুনের রাজনীতি কায়েম করার চেষ্টা হচ্ছে। ওরা ওদের দলের নেতাদের মেরে নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টা করছে।”

বাংলা নিউজ টুয়েন্টিফোরের এই সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে, শেখ হাসিনার লন্ডন সফরের সময় বিএনপি কর্মীদের দেয়া এই স্লোগানের বিরোধিতা করেছেন।

এই সংবাদটি মানবজমিন এবং ঢাকা মেইল প্রচার করেছে। সেগুলো দেখুন এখানে, এখানে

২৪ এপ্রিল, ২০১৮ তারিখে “বিএনপি কর্মীদের মুখে কৃষ্ণ নাম!” শিরোনামে ডয়চে ভেলে বাংলা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখান থেকে জানা যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডন সফরে যান এবং লন্ডন সফরের সময়প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানকার একটি স্থানে বক্তব্য দিতে গিয়েছিলেন৷ সেই স্থানের বাইরে বিএনপি নেতা-কর্মীরা ঢোল, করতাল বাজিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন, ‘‘হরে কৃষ্ণ, হরে রাম– শেখ হাসিনার বাপের নাম’৷ এই ঘটনায় ধর্মীয় বিদ্বেষের অভিযোগ তুলে অনেকে বিএনপির সমালোচনা করেন।


সারমর্মঃ

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে “হরে কৃষ্ণ হরে রাম শেখ হাসিনার বাপের নাম” এমন কোন স্লোগান সাম্প্রতিক সময়ে শামীম ওসমান দেননি। বরং পূর্বে এই স্লোগান যারা দিয়েছে তাদের বিরূদ্ধে শামীম ওসমান কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। কিন্তু ভাইরাল ভিডিওর অডিওটি এডিট করে স্লোগানটিই শামীম ওসমানের মুখে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। এ কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল পোস্টগুলোকে “বিকৃত” হিসেবে চিহ্নিত করছে।

 

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh