বিএনপির কর্মসূচিতে জামায়াতের বক্তব্যটি ২০২১ সালের  

Published on: October 7, 2023

যা দাবি করা হচ্ছে:  বিএনপি জামায়াত অভিমান ভুলে এক কাতারে চলে এসেছে। বিএনপির প্রোগ্রামে জামায়াতকে আমন্ত্রণ করে নজীর সৃষ্টি করা হয়েছে। 

ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত:  দাবিটি বিভ্রান্তিকর। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতাকর্মীকে আমন্ত্রণ জানাতে দেখা যায়নি। যে ভিডিও প্রচার করে এমন দাবি করা হয়েছে, তা মূলত ২০ নভেম্বর ২০২১ তারিখের। সেদিন বিএনপির চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অনশন কর্মসূচি পালন করেছিল বিএনপি। কর্মসূচিটির প্রতি সংহতি প্রকাশ করে সেই মঞ্চে বক্তব্য রেখেছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম। যেহেতু পুরনো ভিডিও প্রচার করে দাবিগুলো করা হয়েছে, তাই এমন দাবিগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।  

ফেসবুকে ভাইরাল এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান: 

সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপি এক মঞ্চে সরকার বিরোধী কোনো কর্মসূচি পালন করেছে কিনা জানতে বিভিন্ন কী-ওয়ার্ড ধরে গুগলে সার্চ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তবে কোনো প্রতিবেদনে জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপি একত্রে এক মঞ্চে সরকার বিরোধী কর্মসূচি পালন করেছে এ জাতীয় তথ্য প্রকাশিত হয়নি। এ পর্যায়ে ভাইরাল ভিডিওটি নিয়ে অনুসন্ধান করে জানা যায় যে, ভিডিওটি পুরনো। মূলত ২০ নভেম্বর ২০২১ তারিখের একটি কর্মসূচি থেকে নেয়া হয়েছে। মূল ভিডিওটি দেখুন এখানে

এখানে লক্ষণীয় যে, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকা থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনামে বলা হয়েছে, জামায়াত ছাড়াই ২০ দলীয় জোটের বৈঠক: বিএনপির বৃহত্তর জোট কবে? বিস্তারিত প্রতিবেদনের এক অংশে বলা হয়েছে, “বৈঠকে ২০ দলীয় জোটের ১০-১২ টি দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন৷ ইসলামপন্থিরাও ছিলেন৷ তবে জামায়াতের কোনো নেতা ছিলেন না বলে নিশ্চিত করেছেন বৈঠকে উপস্থিত নেতারা। জামায়াতের সাথে আলাদা আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে৷”।

তবে ২০২২ সালে এক বিবৃতির মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান জানিয়েছিলেন, “আমরা এতোদিন একটা জোটের সঙ্গে ছিলাম। বিএনপি জোটের সঙ্গে এখন থেকে আর নেই। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এটি একটি জোট ছিলো। ২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবর জোট তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। বছরের পর বছর পর এই ধরনের অকার্যকর জোট চলতে পারে না। এই জোটের সঙ্গে বিভিন্ন দল যারা আছেন, বিশেষ করে প্রধান দলের (বিএনপি) এই জোটকে কার্যকর করার কোন চিন্তা নাই। বিষয়টা আমাদের কাছে স্পষ্ট দিবালোকের মতো এবং তারা আমাদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন বাস্তবতা হচ্ছে নিজস্ব অবস্থান থেকে আল্লাহর উপর ভর করে পথ চলা। তবে হ্যাঁ জাতীয় স্বার্থে একই দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবো ইনশাআল্লাহ। বিস্তারিত দেখুন এখানে।

এ থেকেও স্পষ্ট হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে জামায়াত ও বিএনপির দৃশ্যমান কোনো সম্পর্ক নেই। একত্রে এক ব্যানারে তাদের কোনো কর্মসূচিও নেই। পূর্বে যে জোটে তারা ছিলেন তাও কার্যত শেষ হয়েছে।

উল্লেখ্য, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে, জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমান যমুনা টিভির সাংবাদিক শাকিল হাসানের সঙ্গে আলাপে জানিয়েছিলেন, “বিএনপির সাথে জোট করে কোন লাভ হয়নি, তাই সরে এসেছে জামায়াতে ইসলামী। আগামী নির্বাচনে এককভাবে অংশ নিতে চায় তারা। তিনশ’ আসনে প্রার্থী ঠিক করে রেখেছে সংগঠনটি। পাশাপাশি অন্য ইসলামী দলগুলোর সাথে নির্বাচনী জোট করার বিষয়েও আলোচনা চলছে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে জামায়াত”। এ বিষয়ে তাদের বক্তব্যটি দেখুন এখানে

অর্থাৎ, জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমিরের বক্তব্য থেকেও এ বিষয়টি পরিষ্কার হচ্ছে, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এখন একত্রে জোটে নেই। এক ব্যানারে এক মঞ্চে তাদের কোনো কর্মসূচিও নেই। সাম্প্রতিক সময়ে তারা এক মঞ্চে অবস্থানও করেনি।

প্রসঙ্গগত যে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছিলেন, “শিগগিরই আমরা এক দফা আন্দোলন শুরু করব। অর্থাৎ বিএনপি দশ দফা ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের দফাগুলো মিলিয়ে এক দফা করা হয়েছে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে নতুন কমিশনের অধীনে নির্বাচন। এখন এসব দাবি নিয়ে একটা জায়গায় আমরা এসেছি। সেটা মূলতই এই অবৈধ সরকারের পদত্যাগের দাবি”। বিস্তারিত দেখুন এখানে

বলাবাহুল্য, এই দাবিগুলোর প্রতি আরও অনেকগুলো দলের মতো জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন রয়েছে। সরকারের বিরূদ্ধে তারা পৃথক কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে। এ ধরণের আন্দোলনকে যুগপৎ আন্দোলন হিসেবে ধরা হয়।

সুতরাং, উক্ত দাবিতে ফেসবুকে যেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে তা যে সাম্প্রতিক সময়ের না এবং অনেক পুরনো সেটির প্রমাণ পাওয়া গেছে। জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির সম্পর্কের সাবিক পরিস্থিতি জানা গেছে।

যেহেতু পুরনো ভিডিওর সাথে মিথ্যা শিরোনাম ব্যবহার করে ফেসবুকে ভাইরাল করা হয়েছে, তাই ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোষ্টগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh