“দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে জাতীয় পার্টি” জি এম কাদের বলেছেন একথা?

Published on: November 6, 2023

যা দাবি করা হয়েছে: জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাই কমিশনার সারা কুককে জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচন বর্জন করলে জাপা ভেঙে যেতে পারে। তাই সংবিধান মেনে দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিশেষ দূত মশরুর মওলা গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একথা জানিয়েছেন।

ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত: দাবিটি বিভ্রান্তিকর। জিএম কাদের ও সারা কুকের মাঝে আসলেই কি কি আলোচনা হয়েছে তার কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হতে দেখা যায় নি, তাই এটি যাচাই করা সম্ভব নয় যে জিএম কাদের বা তার কোনো উপদেষ্টা এই ধরণের কথা বলেছেন কি না। অন্যদিকে, নির্বাচনে যাওয়া প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার কিংবা জিএম কাদেরের পক্ষ থেকে অফিসিয়াল কোনো বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় নি। বরং তার বিপরীতে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। সেখানে তিনি সংবাদটিকে স্পর্শকাতর, ভুয়া, মনগড়া ও  উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এ নিয়ে প্রথম আলো সহ আরও কিছু গণমাধ্যমে এই মর্মে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যে, “আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে, এমন খবর সঠিক নয়: জাতীয় পার্টি”।

ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্টের নমুনা দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বক্তব্য উল্লেখ করে গণমাধ্যমে যেই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তুমুল আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে জাতীয় পার্টি থেকে পরিষ্কার কোনো বক্তব্য আছে কিনা জানতে চেষ্টা করেছে ফ্যাক্টওয়াচ টিম। বিভিন্ন কী-ওয়ার্ড ধরে সার্চ করে বিষয়টি নিয়ে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাওয়া গিয়েছে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি নিচে তুলে ধরা হলো-

“(প্রেস বিজ্ঞপ্তি) ঢাকা, শুক্রবার, ৩ নভেম্বর ২০২৩।

কয়েকটি গণমাধ্যমের একটি সংবাদ দেখে আমরা বিস্মিত হয়েছি। গেলো ২ নভেম্বর ২০২৩ তারিখের ঐ সংবাদে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক এর সাথে বৈঠক শেষে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন “জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে”। প্রকৃত পক্ষে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমন কোন কথা বলেননি। সংবাদ পরিবেশনে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর উপদেষ্টা ও বিশেষ দূত মাসরুর মওলা’র উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান এর উপদেষ্টা মাসরুর মওলা গণমাধ্যম কর্মীদের সাথেও এমন কথা বলেনি। অন্যদিকে, জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে এমন কোন বিবৃতি বা প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়নি। এমন বাস্তবতায় আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না স্পর্শকাতর, ভুয়া ও মনগড়া সংবাদটি ছড়িয়ে পড়লো কিভাবে? আমরা এমন উদ্দেশ্য-প্রণোদিত সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সাথে অনলাইন ভার্সন থেকে মিথ্যা সংবাদটি অপসারণ করতে অনুরোধ জানাচ্ছি।

খন্দকার দেলোয়ার জালালী

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর প্রেস সেক্রেটারি – ০২”।

উক্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি জি এম কাদের তাঁর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজেও শেয়ার করেছেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তিটির বার্তা অনুযায়ী কিছু গণমাধ্যম তাঁদের পূর্বের প্রতিবেদন সরিয়ে নিয়েছে। তাছাড়া প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে “আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে, এমন খবর সঠিক নয়: জাতীয় পার্টি” শিরোনামের সাথে জাতীয় পার্টির প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি প্রচারিত হয়েছে। প্রথম আলো থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি নিয়ে ডিবিসি নিউজ থেকেও একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, দেখুন এখানে।

প্রসঙ্গগত যে, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে কি যাবে না বিষয়টি নিয়ে জি এম কাদেরের একটি বক্তব্য পাওয়া গিয়েছে। নিচে তা তুলে ধরা হলো-

“শনিবার রাজধানীর বনানীস্থ কার্যালয় মিলনায়তনে নিজের লেখা দু’টি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, নির্বাচন যদি সঠিকভাবে হয় তবেই আমরা নির্বাচনে অংশ নেবো।

তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথেই আছি। কী হবে তা এখনো কেউ জানে না, যদি নির্বাচন হয় তখন আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা ঘোষণা না দিয়ে চলে যাবো ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথেই আছি। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। নির্বাচন যদি সঠিকভাবে হয় তবেই আমরা নির্বাচনে অংশ নেবো। যদি আমরা মনে করি সঠিকভাবে নির্বাচন হচ্ছে না, তখন আমরা ঘোষণা দিয়েই নির্বাচন বর্জন করব। ঘোষণাটা আমাদের তরফ থেকেই আসতে হবে। দলীয় নেতাকর্মীদের সাথেই আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। নির্বাচন নিয়ে কোনো একক সিদ্ধান্ত হবে না, প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয়া হবে। গণমাধ্যমের সামনে ঘোষণা দেয়া হবে, এ কারণে আমরা নির্বাচন করছি বা করছি না”। এই বক্তব্যের মাঝে তিনি উল্লেখ করেন নির্বাচনে যাওয়া উপলক্ষে গণমাধ্যমের একটি সংবাদ খুবই বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। অর্থাৎ যুক্তরাজ্যের হাই কমিশনার সারা কুককে জিএম কাদের বলেছেন, তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন – এই দাবিটিকে এই বক্তব্যের মাধ্যমেও তিনি খারিজ করেছেন। bdnews24.com থেকে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন জিএম কাদেরের বক্তব্য দেখুন এখানে।

সুতরাং, জিএম কাদের ও সারা কুকের মাঝে আসলেই কি নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। কেননা তা জানা সম্ভব একমাত্র যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার কিংবা জিএম কাদেরের বক্তব্য থেকে। তবে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার থেকে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেয়া হয়নি। অন্যদিকে গণমাধ্যম জানিয়েছে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিশেষ দূত মশরুর মওলা গণমাধ্যমকে এমনটিই জানিয়েছেন। কিন্তু জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম কাদের উক্ত দাবিটিকে স্পর্শকাতর, ভুয়া, মনগড়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি এ বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন যে, তাঁর উপদেষ্টা মাসরুর মওলা গণমাধ্যম কর্মীদের সাথেও এমন কথা বলেনি। অর্থাৎ তার এই বক্তব্যে ভাইরাল দাবিটির বিপক্ষেই প্রমাণ মিলেছে।

তাই সার্বিক বিবেচনায় এই দাবিগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ “বিভ্রান্তিকর” সাব্যস্ত করেছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh