কুমিল্লার এই অস্ত্রবাজির ভিডিও ভোটের দিনের নয়

Published on: January 8, 2024

নির্বাচনের দিনে কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার একতি স্কুলের মাঠে রাজনোইতিক দলের নেতা কর্মীদের আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দেখা গিয়েছে- এমন দাবিযুক্ত একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ১ মিনিট ৫ সেকেন্ড দীর্ঘ এই ভিডিওতে কমপক্ষে ২ যুবককে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে এগিয়ে আসতে দেখা যায়, এবং আশেপাশের লোকজনকে তাদের নিবৃত্ত করতে দেখা যায়। অনুসন্ধানে জানা যাচ্ছে, এই ভিডিওটি ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে ধারণ করা হয়েছিল। নির্বাচনের সাথে এই ভিডিওর কোনো সম্পৃক্ততা নাই। সঙ্গত কারনে ফ্যাক্টওয়াচ এমন ভুল দাবিযুক্ত পোস্টগুলোকে ‘বিভ্রান্তিকর’ সাব্যস্ত করছে।

গুজবের উৎস

ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান

৫ই সেপ্টেম্বর,২০২৩ তারিখে ‘গাজী ব্লগ’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে ১ মিনিট ৫ সেকেন্ড এর এই ভিডিওটি দেখা যাচ্ছে। এই ভিডিওর শিরোনাম ছিল অস্ত্রহাতে কুমিল্লার বরুড়া উপজেলা খোশবাস স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে সোনার ছেলেরা প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে।

লক্ষনীয়, এই ক্যাপশনে নির্বাচন সম্পর্কিত কোনো শব্দ ছিল না।

৬ই সেপ্টেম্বর,২০২৩ তারিখে দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত কুমিল্লায় অস্ত্রের মহড়ার ভিডিও ভাইরাল, ছয় দিনেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ  শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে এই ঘটনা সম্পর্কে আরো তথ্য জানা যাচ্ছে।

প্রথম আলোর এই প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ১ সেপ্টেম্বর ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার খোশবাস উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে গত ১২ আগস্ট ওই অস্ত্রের মহড়া হয়। সেখানে টাঙানো শোক দিবসের ব্যানার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করা হয়। মহড়ার সময় অস্ত্রধারীদের মাস্ক ও জিনস প্যান্ট পরা অবস্থায় দেখা গেছে। এলাকার লোকজন ও পুলিশ দুজন অস্ত্রধারীকে শনাক্ত করেছেন। সাদা জামা পরা অস্ত্রধারী হলেন মো. ফরহাদ হোসেন (২৬)। তিনি খোশবাস উত্তর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে। তিনি পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক। কমলা রঙের টিশার্ট পরা ব্যক্তি মো. রিয়াজ হোসেন (২৫)। তিনি একই ইউনিয়নের খোশবাস গ্রামের শাহ আলমের ছেলে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ওই দুই অস্ত্রধারী এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তাঁরা একসময় বিএনপির নেতাদের আশ্রয়ে ছিলেন। এখন এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন। এর আগেও তাঁরা বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালীদের পক্ষ নিয়ে কখনো অস্ত্র হাতে, কখনো দা, চাকু হাতে তাঁরা প্রকাশ্যে মহড়া দিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খোশবাস উত্তর ইউনিয়নের খোশবাস, আরিফপুর, আদমপুর, জালালপুর, নারায়ণপুর ও বাঁশতলি এলাকায় উঠতি বয়সী বখাটে তরুণদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র আছে। তাঁরা বিভিন্ন স্থানে ঝামেলা হলে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন পক্ষে অবস্থান নেন। গত ১২ আগস্ট দুপুরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে খোশবাস উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ ফটকের পাশে একটি ব্যানার টাঙানো হয়। ওই ব্যানারে নিজেদের ছবি দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান রিয়াজ হোসেন ও ফরহাদ হোসেন। বঙ্গবন্ধুর ছবির সঙ্গে একই ব্যানারে ‘সন্ত্রাসীদের ছবি দেখে আরিফপুর গ্রামের স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী খোরশেদ আলমের লোকজন ক্ষুব্ধ হন। তাঁরা ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। এই নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে প্রথমে হাতাহাতি হয়।

ওই দিন বিকেলে খোশবাস উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ মিলনায়তনে বরুড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এ এন এম মইনুল ইসলামের অনুসারী আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা মতবিনিময় সভা করেন। ওই সভা শেষে খোশবাস কলেজ মাঠে ব্যানার ছেঁড়া নিয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেনের লোকজন খোরশেদ আলমের লোকজনের ওপর হামলা চালান। এ সময় খোরশেদ আলমের পক্ষও পাল্টা প্রতিরোধ ও হামলা করে। এ সময় রিয়াজ ও ফরহাদ আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিয়ে মহড়া দেন।

যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলেও গত ৭ই সেপ্টেম্বর তারিখে কুমিল্লায় প্রকাশ্যে দুই যুবকের অস্ত্রবাজি; ভিডিও ভাইরাল  শিরোনামে একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে আলোচিত যুবকদের ফুটেজ দেখা যাচ্ছে।

অর্থাৎ এটা নিশ্চিত, নির্বাচনের দিনের ভিডিও হিসেবে দাবি করা এই ভিডিওগুলো কমপক্ষে ৪ মাসের পুরনো, এবং নির্বাচনের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নাই। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এই পোস্টগুলোকে ‘বিভ্রান্তিকর’ সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh