রমজান মাসে হিন্দু দোকানদারদের উপর নির্যাতন করা হয়েছে?

Published on: April 5, 2023

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার হয়েছে, যার শিরোনামে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে শরীয়া আইন শুরু হয়েছে। যে কারণে রমজান মাসে হিন্দু দোকানদারদের উপর হুমকি ও নির্যাতন করা হচ্ছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, হিন্দু দোকানদারদের উপর নির্যাতন করার দাবিটি সঠিক নয়। মূলত একাধিক ব্যক্তি বিভিন্ন খাবারের দোকানে গিয়ে রমজান মাসে মুসলিম ক্রেতার কাছে খাবার বিক্রি বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে। খাবারের দোকানের মালিক যারা আছেন তাঁদের মধ্যে হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়েরই মানুষ রয়েছেন, এমন আভাস ভিডিওটিতেই আছে। সুতরাং শুধু মাত্র হিন্দু দোকানদারদের উপর হুমকি দেওয়া হয়েছে এই দাবিটি বিভ্রান্তিকর।

এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে, এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

৯ মিনিটের ভিডিওটির শুরুতে দেখা যায়, উত্তেজিত কিছু টুপি-পড়া মানুষ একটি দোকানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। দোকানটিতে অবস্থানরত মানুষগুলোকে রোজা না রেখে খাবার খাওয়ার জন্য পরবর্তীতে বিভিন্ন শাস্তি প্রদান করা হবে সে বিষয়ে অবগত করছেন। সেখানে অবস্থানরত একজন ব্যক্তিকে তারা তাৎক্ষণিকভাবে শারীরিক শাস্তিও দিয়েছেন। ভিডিওটির ১ মিনিট ৪ সেকেন্ড অংশে দেখা যায় কোনো একজন হিন্দু দোকানির দোকানে যেয়ে ওই সকল ব্যক্তিরা বলছেন, “আজ আপনাকে প্রাথমিকভাবে বলছি রমজান মাসে কোনো মুসলমান যদি আপনার দোকানে খাবার খায় এটা যদি আমাদের চোখে পড়ে তাহলে পরেরদিন থেকে আপনার দোকান রমজান মাস পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়া হবে”। উক্ত ব্যক্তিকে হিন্দু হিসেবে পরিচয় প্রদান করার কারণ তার গায়ে শারদীয় শুভেচ্ছা লেখা একটি টি-শার্ট ছিল। তাছাড়া অভিযান পরিচালনাকারীদের  কথা শুনেও বিষয়টি বোঝা গেছে দোকানটির মালিক একজন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক।

ভিডিওটির ১ মিনিট ২৮ সেকেন্ড অংশে দেখা যায়, অন্য একটি খাবারের দোকানে যেয়ে তারা একই প্রকার কথা বলছেন। অর্থাৎ ওই দোকানের মালিক কেন রমজান মাসে মানুষের কাছে খাবার বিক্রি করবে। বিশেষ করে হোটেলের মধ্যে টেবিলে বসে মুসলিম সম্প্রদায়ের কেউ খাবার খেতে পারবে না। অসুস্থ বা অন্যদের খাবার প্রয়োজন হলে প্যাকেটে খাবার কিনে নিয়ে যেতে পারবে। ঐ দোকানের দেয়ালে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কলেমা “লা-ইলাহা ইল্লালাহ” লেখা থাকায় এটা অনুমিত হয় যে, দোকানের মালিক একজন মুসলমান।

অভিযান পরিচালনাকারী ব্যক্তিরা এইভাবে পর্যায়ক্রমে আরও একাধিক দোকানে যান। রমজান মাসে রোজা না রেখে কোনো মুসলিম দোকানে বসে খাবার খেতে পারবে না এবং খাবারের দোকানদাররা রোজা রাখেনি এমন মুসলিমের কাছে খাবার বিক্রি করবে না এটা তারা নিশ্চিত করতে চান।

যেহেতু ভাইরাল ভিডিওটির শিরোনামের দাবি আর ঘটনার মধ্যে একটা অমিল খেয়াল করা যাচ্ছে। এখানে ধর্মীয়ভাবে নিদিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সাথে এমন আচরণ করা হচ্ছে না। বরং ওই বাজারে হিন্দু-মুসলিম বা অন্যান্য ব্যবসায়ী যারা আছেন তাদের সবাইকে একইভাবে নির্দেশনা দিতে দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া, বাংলাদেশে শরীয়া আইন চালু হবার কোনো তথ্য সরকারি মহল কিংবা মূলধারার গণমাধ্যমে পাওয়া যায় নি।

প্রসঙ্গত, এ ধরণের অভিযান কতটা আইনসম্মত সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন। তবে এই ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক নির্যাতন হিসেবে উল্লেখ করে ফেসবুকে ভাইরাল করা হয়েছে, সেটি অসত্য। এখানে সম্প্রদায়-নির্বিশেষে হোটেল-মালিক যারা রমজানে খাবার দোকান খোলা রেখে মানুষজনকে খাওয়াচ্ছেন তাদের সবার সাথে একই ধরনের আচরণ করা হচ্ছে।

সুতরাং সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করে এ ধরণের শিরোনামগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ “বিভ্রান্তিকর”  সাব্যস্ত করেছে।

সংশোধনী: এই প্রতিবেদনে বিদ্যমান তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এর পূর্বের রেটিং “মিথ্যা” পরিবর্তন করে “বিভ্রান্তিকর” করা হয়েছে। 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

;