ভারতের একটি খোলা ম্যানহোলের ছবিকে বাংলাদেশের বলে প্রচার

Published on: September 24, 2023

“ঢাকা শহরের পানি ম্যানহোলেই আটকা, বের হবে কিভাবে?…একটি ম্যানহোলের ঢাকনা খোলার পর এই চিত্র। ভেবে দেখুন, তাহলে পুরো ঢাকা সিটির কি অবস্থা।…” – এমনটি উল্লেখ করে খোলা ম্যানহোল এবং তার আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা প্লাস্টিকের বোতলের একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছে। গত ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ এ প্রবল বৃষ্টিপাতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তখন অনেকেই ঢাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা (Drainage system) নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। পরবর্তীতে ঐ খোলা ম্যানহোলের ছবিটি ব্যবহার করে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা জনগণকে দোষারোপ করছেন জলাবদ্ধতার জন্য। তবে, ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, খোলা ম্যানহোলের ছবিটি ঢাকা শহরের নয়। বরং, ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে ভারতের বিহার রাজ্যের পাটনা শহরে ঐ ছবিটি তোলা হয়েছিলো। ‘দ্য ওয়ার’ নামক একটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এবং একজন অভিনেতার টুইটার হ্যান্ডেল থেকে ছবিটির উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে। 

এমন কিছু পোস্টের নমুনা দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে

Image: Example of the viral Facebook post

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত খোলা ম্যানহোলের ছবিটি ঢাকায় জলাবদ্ধতার পর তোলা হয়েছিলো কিনা তা যাচাই করতে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে উক্ত ছবিটির উৎস অনুসন্ধান করা হয়। আমাদের অনুসন্ধানে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়ার’ এ ৯ অক্টোবর ২০১৯ এ প্রকাশিত “How 330 mm of Rain Flushed Down 15 Years of Urban Development in Bihar” – শীর্ষক শিরোনাম সংবলিত একটি নিবন্ধ খুঁজে পাওয়া গেছে। উক্ত নিবন্ধটিতে প্রাপ্ত “Plastic bottles and bags cleared from sewer lines in the city.” – ক্যাপশন সংবলিত ছবিটির সাথে ঢাকার খোলা ম্যানহোল দাবি করে শেয়ারকৃত ছবিগুলোর বেশ মিল রয়েছে। তাছাড়া, পদ্মশ্রী পুরষ্কারপ্রাপ্ত তামিল অভিনেতা ভিভেক (Vivek) তাঁর টুইটার হ্যান্ডেল থেকে ৫ ডিসেম্বর ২০২০ এ একটি ছবি শেয়ার করেন, যার সাথে ঢাকা শহরের খোলা ম্যানহোল দাবি করে পোস্টকৃত ছবিগুলোর মিল পাওয়া গেছে। এছাড়াও, ডিইউ বিট নামক ছাত্রদের একটি সংবাদপত্রে ২১ অক্টোবর ২০১৯ এ প্রকাশিত “Sorrow of Bihar Glooms the Capital City Patna” – শীর্ষক শিরোনামের একটি নিবন্ধে বিহারের পাটনা শহরে তোলা খোলা ম্যানহোলের ছবিটি ব্যবহার করতে দেখা গেছে।

Image: Excerpted from the Wire’s news article published in 2019

 

এদিকে, ঢাকার খোলা ম্যানহোল দাবি করে শেয়ারকৃত ছবিগুলোর উৎস অনুসন্ধান করতে গিয়ে জাগোনিউজ টোয়েন্টিফোর এ ২০২১ সালে প্রকাশিত “১৭০ মিটার ড্রেন থেকে ১০৭ টন বর্জ্য অপসারণ” – শীর্ষক শিরোনাম সংবলিত একটি প্রতিবেদনের খোঁজ পাওয়া গেছে, যেখানে বিহারের পাটনা শহরে তোলা খোলা ম্যানহোল এবং তার আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা প্লাস্টিকের বোতল এবং ব্যাগ এর ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে। জাগো নিউজ এক স্থানের খবর প্রচার করতে গিয়ে অন্য স্থানের ছবি ভুলভাবে ব্যবহার করেছে।  

Image: Photo taken in Bihar falsely used in Jagonews24’s news article

 

উল্লেখ্য, গত ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ এ ঢাকায় ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় এবং শহরের ব্যস্ততম সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে যানবাহন চলাচলের ব্যাঘাত ঘটায়। তাছাড়া, রাজধানীর মিরপুরে বৃষ্টির পানিতে ডুবে যাওয়া বৈদ্যুতিক তারের সংস্পর্শে এসে মৃত্যু হয়েছে একই পরিবারের তিন সদস্যের। এহেন অবস্থার পর অনেকেই ঢাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং দুই সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তখন অনেক সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদেরকে দেখা গেছে বিহারের পাটনা শহরে তোলা প্রায় চার বছরের পুরানো ছবিকে ঢাকার খোলা ম্যানহোল বলে দাবি করে জনগণকে দোষারোপ করছেন এবং সচেতন হওয়ার জন্য বলছেন। ঢাকার জলাবদ্ধতা এবং বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত কয়েকটি সংবাদ পড়ুন এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে

মূলত, “ঢাকা শহরের পানি ম্যানহোলেই আটকা, বের হবে কিভাবে?…একটি ম্যানহোলের ঢাকনা খোলার পর এই চিত্র। ভেবে দেখুন, তাহলে পুরো ঢাকা সিটির কি অবস্থা।…” – এই লাইনগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক সহকারী প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন তাঁর অফিসিয়াল ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছিলেন এবং ভারতের বিহারে তোলা ছবিটি ঐ লেখার সাথে সংযুক্ত করেছিলেন। পরবর্তীতে তাঁর লেখাটিকে কপি করে এবং একই ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে পোস্টটি ব্যাপকহারে শেয়ার করা হয়। 

অতএব, এই বিষয়টি এখন স্পষ্ট যে, খোলা ম্যানহোল এবং তার আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা প্লাস্টিকের বর্জ্যের ছবিটি ঢাকা শহরে তোলা হয়নি।

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টগুলোর দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh