অযোধ্যায় জটায়ুর আগমন – শীর্ষক ভিডিওটি পুরানো

Published on: January 8, 2024

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত একটি ভিডিও এর সাথে সংশ্লিষ্ট ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে যে, অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধনের আগেই “প্রভু শ্রীরামের আমন্ত্রণে উপস্থিত হয়েছেন জটায়ু দেব।” জটায়ু হচ্ছেন হিন্দু পুরাণের একজন উপদেবতা বা ডেমিগড (Demigod), যিনি রামকে রাবণ কর্তৃক সীতাকে অপহরণের সংবাদটি জানিয়েছিলেন। তবে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, আলোচিত ভিডিওটি ২০২১ সাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে ইন্টারনেটে শেয়ার হয়েছে এবং এর সাথে রাম মন্দির উদ্বোধনের কোন সম্পর্ক নেই। ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা দি কুইন্ট এবং বুম ইন্ডিয়া বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছে। উল্লেখ্য, আগামী ২২ জানুয়ারি ২০২৪ এ ভারতের উত্তর-প্রদেশের অযোধ্যায় রাম মন্দিরটি উদ্বোধন করা হবে। তাই সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওর সাথে সংশ্লিষ্ট দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে। 

এমন কয়েকটি পোস্টের নমুনা দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান: 

সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করতে আমরা উক্ত ভিডিও থেকে কিছু স্ক্রিনশট নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধান করি। আমাদের অনুসন্ধানে ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা দি কুইন্ট এবং বুম ইন্ডিয়া’র দুটো ফ্যাক্টচেকিং প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া গেছে। দি কুইন্ট কর্তৃক গত ০৭ জানুয়ারি ২০২৪ এ প্রকাশিত “Old Video of Vultures Falsely Linked to Ayodhya’s Ram Temple Inauguration” – শীর্ষক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, আলোচিত ভিডিওটি ২০২১ সালের অক্টোবর মাস থেকেই ইন্টারনেটে শেয়ার হচ্ছে এবং এর সাথে আসন্ন রাম মন্দির উদ্বোধনের কোন সম্পৃক্ততা নেই। দি কুইন্ট তাদের প্রতিবেদনে বিভিন্ন সময়ে ইন্টারনেটে শেয়ার হওয়া আমাদের আলোচিত ভিডিওটির অনুরূপ কয়েকটি ভিডিও’র উৎসের সন্ধান দিয়েছে। ভিডিওগুলো যথাক্রমে,  ০৮ অক্টোবর ২০২১, ১৯ ডিসেম্বর ২০২১, এবং ০১ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে বিভিন্ন মাধ্যমে শেয়ার করা হয়েছিল। ভিডিওগুলো দেখুন এখানে, এখানে, এবং এখানে

দি কুইন্ট এর পাশাপাশি বুম ইন্ডিয়াও অযোধ্যায় জটায়ুর আগমন – শীর্ষক দাবিটি যাচাই করে দেখেছে। বুম ইন্ডিয়া কর্তৃক গত ০৭ জানুয়ারি ২০২৪ এ প্রকাশিত  “Old Video Of Vultures Falsely Shared As ‘Jatayu’ Spotted In Ayodhya” – শীর্ষক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, শকুনের ভিডিওটি ২০২১ সালের অক্টোবর মাস থেকে অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে এবং এটি সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের উত্তর-প্রদেশের অযোধ্যায় ধারণ করা ভিডিও নয়। বুম ইন্ডিয়া তাদের প্রতিবেদনে গত ২৪ মার্চ ২০২২ এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধ এবং ২৩ মার্চ ২০২২ এ এক্স (সাবেক টুইটার) থেকে শেয়ারকৃত একটি পোস্টকে প্রমাণস্বরূপ হাজির করেছে, যার সাথে আমাদের আলোচিত ভিডিওটির মিল রয়েছে। 

তবে, আসন্ন রাম মন্দির উদ্বোধনের সাথে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া “জটায়ুর আগমনের” ভিডিওটির কোন সম্পর্ক না থাকলেও এটা সত্য যে, অযোধ্যায় রাম জন্মভূমি কমপ্লেক্সে অবস্থিত ‘কুবের টিলায়’ জটায়ুর একটি ব্রোঞ্জের মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। বিস্তারিত পড়ুন টাইমস অব ইন্ডিয়া এবং পুনে নিউজ এর খবরে।

জটায়ু হচ্ছেন হিন্দু পুরাণে বর্ণিত একজন উপদেবতা বা ডেমিগড। সংস্কৃত ভাষার মহাকাব্য “রামায়ণ” এ গৃধ্ররাজ জটায়ুর কথা উল্লেখ আছে, যিনি রামকে রাবণ কর্তৃক সীতাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার খবরটি সম্পর্কে অবগত করেছিলেন। রামায়ণের অরণ্যকান্ডে এই ঘটনাটির বর্ণনা এভাবে দেওয়া আছে যে, রাবণ যখন সীতাকে অপহরণ করে পুষ্পক বিমানে করে লঙ্কায় নিয়ে যাচ্ছিল তখন সীতার চিৎকার শুনে জটায়ু রাবণকে বাধা দিতে যায় এবং রাবণের তরবারির আঘাতে জটায়ুর ডানা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এদিকে সীতাকে খুঁজতে খুঁজতে রাম যখন ভূমিশায়িত জটায়ুর কাছে এসে উপস্থিত হয় তখন মৃত্যুপথযাত্রী জটায়ু রামকে বলে, বিশ্রবার পুত্র এবং কুবেরের ভাই লঙ্কার রাজা রাবণ সীতাকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। এরপর জটায়ুর মৃত্যু হলে রাম তাঁকে সসম্মানে চিতায় পুড়িয়ে পিন্ডি দিয়ে সীতাকে উদ্ধার করতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি আরম্ভ করে। একারণে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে জটায়ু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জটায়ুর স্মরণে ভারতের কেরালায় ৭০ ফিট দীর্ঘ পৃথিবীর সর্ববৃহৎ পাখির ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে। দেখুন এখানে। 

উল্লেখ্য, আগামী ২২ জানুয়ারি ২০২৪ এ ভারতের উত্তর-প্রদেশের অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধনের তারিখ ধার্য করা হয়েছে। পড়ুন এখানে এবং এখানে। 

অতএব, উপরের আলোচনা থেকে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে যে, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত “জটায়ুর আগমনের” ভিডিওটি ২০২১ সাল থেকেই ইন্টারনেটে পাওয়া যাচ্ছে এবং এর সাথে রাম মন্দির উদ্বোধনের কোন সম্পর্ক নেই।

সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটির দাবিকে বিভ্রান্তিকর আখ্যা দিচ্ছে।  

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh