কাফন-মোড়ানো লাশের ভিডিওটি ইরানের একটি প্রতীকী প্রদর্শনী থেকে নেয়া

Published on: November 29, 2023

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত একটি ভিডিওতে “যে নামাজের আজান জন্মের সময় হয়েছিল” এবং “আল্লাহ ফিলিস্তিনি শহীদদের কবুল করেন” শিরোনাম জুড়ে দেয়া হয়েছে। প্রথম শিরোনামের অর্থ করলে দাঁড়ায় – কোন মুসলিম ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তাঁর জানাজা নামাজ পড়া হয়, কিন্তু আজান দেয়া হয়না, আবার একজন মুসলিম শিশু জন্মগ্রহণের পর আজান দেয়া হয় কিন্তু নামাজ পড়া হয় না। এই দুই ঘটনা একে অপরের পরিপূরক হিসেবে গণ্য হয়। অপরদিকে, দ্বিতীয় টেক্সটের অর্থ দাঁড়ায় – সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিস্তিনিতে ইসরায়েলি সৈন্যদের হামলায় নিহত হাজার হাজার শিশুর আত্মাকে আল্লাহ কবুল করে নিক। উক্ত ভিডিওটিতে এই দুটো টেক্সটের উপস্থিতি এবং সারি সারি কাফনে-মোড়ানো ছবি দেখে মনে হতে পারে এগুলো ফিলিস্তিনি শিশুদের মৃতদেহ! তবে ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওতে যা দেথা যাচ্ছে, এগুলো মৃতদেহ নয়। বরং সেগুলো ফিলিস্তিনে নিহত শিশুদের স্মরণে ইরানের তেহরানে অবস্থিত ফিলিস্তিন স্কয়ারের (Palestine Square) সামনে আয়োজিত একটি প্রদর্শনী, যেখানে প্রতীকীভাবে কাফনে মোড়ানো মৃতদেহ দেথানো হয়। ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাই সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটির দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে। 

এমন কয়েকটি ভিডিও এর নমুনা দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:

সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটিতে উত্থাপিত দাবিটি যথাযথ কিনা তা যাচাই করতে আমরা উক্ত ভিডিও থেকে কিছু স্ক্রিনশট নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধান করেছি। আমাদের অনুসন্ধানে ভিডিওটির উৎস সম্পর্কিত বেশকিছু তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। ইরান-ভিত্তিক তাসনিম নিউজ এজেন্সি কর্তৃক গত ১৪ নভেম্বর ২০২৩ এ প্রকাশিত “Art Performance in Tehran in Solidarity with Gaza Children” শীর্ষক শিরোনামের অধীন একটি ফটো অ্যালবাম ঘেঁটে দেখা গেছে উক্ত অ্যালবামের ছবিগুলোর সাথে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটির বেশ মিল রয়েছে। তাসনিম নিউজ এজেন্সির ঐ ফটো অ্যালবামটির বিস্তারিত বর্ণনা অংশে লেখা রয়েছে – ইসরায়েলের হামলায় গাজায় নিহত শিশুদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে ১৩ নভেম্বর তেহরানের ফিলিস্তিন স্কয়ারে “সিম্ফনি অব দ্য ডেড” নামক একটি পারফরম্যান্স আর্টের প্রদর্শনী করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে গুগল ম্যাপের সাহায্যে ইরানের তেহরানে অবস্থিত ফিলিস্তিন স্কয়ার এর অবস্থান খুঁজে বের করে দেখা গেছে উক্ত স্থাপনার সাথে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিও এবং তাসনিম নিউজ এজেন্সির ফটো অ্যালবামে দৃশ্যমান ফিলিস্তিন স্কয়ারের চত্ত্বর এবং স্থাপনাটির সম্মুখভাগের বেশ মিল রয়েছে। 

 

গেটি ইমেজেস নামক ইন্টারনেট ফটো লাইব্রেরি থেকে একটি ছবি খুঁজে পাওয়া গেছে যার বিস্তারিত বর্ণনা অংশে লেখা রয়েছে – গাজায় হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ১৩ নভেম্বর ২০২৩ এ ইরানের রাজধানী তেহরানে অবস্থিত ফিলিস্তিন স্কয়ারে কাফনে মোড়ানো শিশুদের প্রতীকী মৃতদেহের প্রদর্শনী করা হয়েছিলো। 

 

Iran Nuances নামক একটি এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেল থেকে গত ১৩ নভেম্বর ২০২৩ এ শেয়ারকৃত একটি ছবি পাওয়া গেছে যার ক্যাপশনে লেখা রয়েছে – গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণে যে সকল শিশু প্রাণ হারিয়েছে তাঁদের স্মরণে আজ (১৩ নভেম্বর) সোমবার ইরানের রাজধানী তেহরানের ফিলিস্তিন স্কয়ারে শত শত প্রতীকী কাফনের প্রদর্শনী করা হয়েছে।

 

তাঘরিব নিউজ কর্তৃক প্রকাশিত Symphony of the Dead (photo) শিরোনাম সংবলিত ফটো অ্যালবামের একটি ছবিতে লাল রঙের চারটি আলাদা ব্যানারে সাদা বর্ণে লেখা “NO ISRAEL = NO WAR”  দৃষ্টিগোচর হয়েছে। উল্লেখ্য, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটির একটি অংশে চারটি আলাদা লাল রঙের ব্যানারে সাদা বর্ণের অভিন্ন লেখাটি লক্ষ্য করা গেছে। অর্থাৎ, ছবি এবং ভিডিও – দুটো একই স্থান এবং ঘটনার সাক্ষী।

 

Mix Pix & Fun নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৪ নভেম্বর ২০২৩ এ প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া গেছে যার সাথে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটির বেশকিছু মিল রয়েছে। তাছাড়া, উক্ত ইউটিউব ভিডিওটির নিচে বামপাশে ভিডিওটি যেখানে ধারণ করা হয়েছিলো সেই স্থানের পরিচয় হিসেবে “TEHRAN – FELESTIN SQUARE” লেখা ছিলো।

ভারতীয় ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা “ফ্যাক্টলি” অনুরূপ একটি বিষয় নিয়ে সম্প্রতি কাজ করেছে। তাদের রিপোর্টটি পড়ুন এখানে। 

অতএব, প্রাপ্ত তথ্যপ্রমাণের উপর ভিত্তি করে আমাদের আলোচনা থেকে বুঝা যাচ্ছে, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওতে যে বস্তুগুলোকে কাফনে মোড়ানো মৃতদেহ বলে মনে হচ্ছিলো তা আসলে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে নিহত ফিলিস্তিনি শিশুদের স্মরণে কাফনে মোড়ানো শিশুদের প্রতীকী মৃতদেহের ভিডিও। 

এটা সত্য যে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে ফিলিস্তিনিতে এই পর্যন্ত কয়েক হাজার শিশু প্রাণ হারিয়েছে। তবে, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটি যেহেতু সেইসব শিশুদের স্মরণে আয়োজিত একটি প্রতীকী প্রদর্শনীর ভিডিও এবং তার পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণও আছে, সেহেতু ফ্যাক্টওয়াচ এইধরণের ভিডিওগুলোকে বিভ্রান্তিকর বলে সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh