Published on: June 20, 2021
ভাষান্তর: আপন দাস
বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে মাস্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ। এতদিন ধূলোবালি থেকে রক্ষা ও চিকিৎসা কার্যে মাস্ক ব্যবহৃত হয়ে আসলেও গতবছর করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর থেকে এটি সারাবিশ্ব একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে পরিণত হয়েছে। এই করোনাকালে হাঁচি, কাশি, কথা বলা, গান গাওয়া বা চিৎকার করলে মানুষের মুখ ও নাক থেকে যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জলকণা (ড্রপলেট) বের হয় তা আরেকজনের নাক বা মুখে প্রবেশ রোধ করাই যেন মাস্কের প্রধান কাজ।
বয়স এবং পেশা ভেদে কে কোন ধরণের মাস্ক পরবে তা নির্ধারণ করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
যাদের মেডিকেল মাস্ক ব্যবহার করতে হবে:
- চিকিৎসা সেবার সাথে জড়িত সকল স্বাস্থ্যকর্মী
- পেশী ব্যথা, হালকা কাশি, গলা ব্যথা বা কোভিড-১৯ এর লক্ষণযুক্ত অসুস্থ ব্যক্তি
- যাদের কোভিড-১৯ টেস্টের ফলাফল পজিটিভ এসেছে এবং যারা টেস্টের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছেন
- স্বাস্থ্য সুবিধার বাইরে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত বা সন্দেহজনক ব্যক্তিদের সংস্পর্শে যারা রয়েছেন
- ৬০ বা তার বেশি বয়সের সবাই
- দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদরোগ, ক্যান্সার, স্থূলত্ব, ডায়াবেটিক আছে এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন সকল রোগী
এছাড়া সুস্থ সবল এবং ৬০ বছর কম বয়সীদের নন-মেডিকেল, কাপড়ের মাস্ক পরিধানের নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
কিভাবে বুঝবো কোন ধরণের মাস্ক নিরাপদ?
সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এর প্রস্তাবিত নিরাপদ ও অনিরাপদ মাস্কের একটি তালিকা দেয়া হল:
নিরাপদ মাস্ক | অনিরাপদ মাস্ক |
N-95 এবং সার্জিকাল মাস্ক | ঢিলেঢালা এক স্তরযুক্ত মাস্ক |
যে মাস্ক সঠিকভাবে মুখে ফিট হয় (নাক এবং থুতনি ঠিকমতন ঢাকা থাকে) | যে মাস্ক সঠিকভাবে মুখে ফিট হয় না (বড় ফাঁক থেকে যায়, খুব আলগা বা খুব আঁটসাঁট) |
পরিমিত শ্বাস-প্রশ্বাসে সহায়ক উপাদান দ্বারা তৈরি মাস্ক (যেমন: সুতির কাপড়ের মাস্ক) | এমন কোনো উপাদান দিয়ে তৈরি মাস্ক যেটি পরলে নিঃশ্বাস নেওয়া কষ্টকর (যেমন প্লাস্টিক বা চামড়া দিয়ে তৈরি মাস্ক) |
এমন কাপড় দিয়ে তৈরি মাস্ক যেটির মধ্য দিয়ে আলো প্রবাহিত হতে পারে না | কাপড় দিয়ে বোনা এমন মাস্ক যেটির মধ্য দিয়ে আলো সহজেই প্রবাহিত হতে পারে |
দুই অথবা তিন স্তরযুক্ত মাস্ক | এক স্তরযুক্ত মাস্ক |
অভ্যন্তরীণ ফিল্টার পকেটযুক্ত মাস্ক | যে মাস্কে সরাসরি বায়ু চলাচলের ছিদ্র বা পথ রয়েছে |
করোনা মহামারীর শুরুর দিকে, অন্যতম একটি সংকট ছিল মাস্কের অপর্যাপ্ততা। বিভিন্ন দেশে জনসাধারণকে মেডিকেল গ্রেডের মাস্ক এড়াতে বলা হয়েছিল যাতে মজুদকৃত মাস্ক স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় ব্যবহার করা যেতে পারে। আর এই মুহুর্তে, আমেরিকার সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এর মতো সংস্থাগুলো জনসাধারণকে কাপড়ের মাস্ক পরার পরামর্শ দিচ্ছে এবং কিভাবে টি-শার্টের কাপড়ের মতন ঘরোয়া উপাদান দিয়ে তা বানানো যায় সে সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করছে।
অনেক মানুষ এখন কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করেন। বেশীরভাগ দোকানেই এখন কাপড়ের মাস্ক পাওয়া যায়। তবে সময়ের সাথে সাথে প্রাথমিক চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বব্যাপী মেডিকেল গ্রেড ফেস মাস্কের সরবরাহ বেড়েছে। আর এর সাথে কাপড়ের মাস্কের ব্যবহার উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নতুন যুক্তি তৈরি হয়েছে যে কাপড়ের মাস্ক বাদ দিয়ে আরও বেশি সুরক্ষামূলক মাস্ক যেমন- সার্জিক্যাল মাস্ক পরা উচিৎ। এই বিতর্কটি আরও জোরদার হয়েছে যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা সহ আরও বেশ কিছু দেশে সার্স-কোভ-২ এর নতুন শক্তিশালী ভ্যারিয়েন্টটির প্রাদুর্ভাবের পর।
বৈশ্বিক চিত্র
ফ্রান্স সরকারের বৈজ্ঞানিক কমিটির সভাপতি জন ফ্রান্সিস ডেলফ্রেইসি বলেছেন, করোনাভাইরাসের নতুন শক্তিশালী ভ্যারিয়েন্টটি পুরো পরিস্থিতি পালটে দিয়েছে। তার এই বক্তব্য প্রকাশের পর পরই ফ্রান্সে, বাড়িতে তৈরি মাস্ক এবং কিছু দোকানে বিক্রি হওয়া কাপড়ের মাস্কগুলোকে সম্প্রতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ফরাসী স্বাস্থ্যমন্ত্রী অলিভিয়ার ভারান গত ২২ জানুয়ারী ঘোষণা করেছিলেন যে, ফ্রান্সের জনগণ আর ঘরে তৈরি মাস্ক বা নির্দিষ্ট বাণিজ্যিক ফেব্রিক মাস্ক ব্যবহার করবে না, যেটিকে দ্বিতীয় শ্রেণীর মাস্ক হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ফ্রেঞ্চ সরকার আরও উল্লেখ করেছে যে, প্রথম শ্রেণীর মাস্ক ৩ মাইক্রোমিটার আকৃতির ৯৫% জলকণা (ড্রপ্লেট) রোধ করতে পারে যেখানে দ্বিতীয় শ্রেণীর মাস্কের সক্ষমতা ৭০%। সবাইকে তাই কেবল তিন ধরণের মাস্ক পরিধানের পরামর্শ দেয়া হয়েছে: ১) সার্জিকাল মাস্ক (যা ৩ মাইক্রোমিটার আকৃতির ৯৫% জলকণা রোধ করে), এফএফপি-২ (যা ০.৬ মাইক্রোমিটার আকৃতির ৯৪% জলকণা রোধ করে) এবং উন্নত মানের ফেব্রিক মাস্ক।
অস্ট্রিয়া এই সতর্কতা অবলম্বনে আরও এক ধাপ এগিয়ে আছে। এফএফপি-২ মডেলের মাস্কগুলো জনসাধারণের জন্য বাধ্যতামূলক করেছে এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সী সমস্ত নাগরিক এবং নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোতে এই মাস্ক বিনামূল্যে প্রদান করেছে।
জার্মানি সুপারমার্কেট এবং গণপরিবহণগুলোতে মেডিকেল মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করেছে। যুক্তরাজ্যের রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থায় অনুরূপ নিয়ম প্রবর্তন করতে চান বলে জানিয়েছেন লন্ডনের মেয়র সাদিক খান। লন্ডনভিত্তিক সংবাদপত্র ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড জানিয়েছে যে, মেয়রের কার্যালয় কোভিড-১৯ এর নতুন ভ্যারিয়েন্টের কথা বিবেচনা করে যাত্রীদের উচ্চ-মানের মাস্ক পরিধানের বিষয়টি পর্যালোচনা করছে। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন স্বাস্থ্য সচিব জেরেমি হান্টও এফএফপি-২ মাস্ককে গণপরিবহন ও দোকানগুলোতে পরিধান বাধ্যতামূলক করার আহ্বান জানিয়েছেন।
কি কি উপাদান থাকা উচিৎ একটি কাপড়ের মাস্কে?
গত পহেলা ডিসেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড-১৯ এ গুরুতর ঝুঁকিযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য এবং ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য মেডিকেল মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে। তবে নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ সংক্রান্ত তথ্য নিশ্চিতের আগে এটি করা হয়েছিল। এদিকে জনগণকে মাস্ক সম্পর্কে পরামর্শ দিতে গিয়ে ডব্লিউএইচওর মুখপাত্র বিএমজেকে বলেছেন, “সকলকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য তিন স্তরের ফেব্রিক মাস্ক পরিধানের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ঠিকমতন শ্বাস-প্রশ্বাস, বায়ু পরিশোধন এবং ভাইরাস প্রতিরোধে মাস্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনার মাস্কটি বাড়িতে তৈরি করা হয়ে থাকে তবে ডাব্লুএইচও’র পরামর্শ থাকবে, মাস্কটি যেন তিন স্তরের ভিন্ন ভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়। এই উপাদানগুলো হল: সুতির মতন একটি অভ্যন্তরীণ শোষণকারী উপাদান, মাস্কের বাইরের অংশে পলিয়েস্টার হিসাবে একটি অ-শোষণকারী ফেব্রিক এবং মাস্কের মাঝখানের স্তর হিসেবে নন-ওভেন স্পুনবন্ড পলিপ্রোপলিনের মতন একটি ফিল্টার।
তথ্যসূত্র
Covid-19: Are cloth masks still effective? And other questions answered
Coronavirus disease (COVID-19): Masks
Science Brief: Community Use of Cloth Masks to Control the Spread of SARS-CoV-2
Coronavirus Face Masks & Protection FAQs
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
|